হরমনপ্রীত কৌর। —ফাইল চিত্র
পর পর দুই ম্যাচে হারতে হল ভারতকে। কাজে লাগল না স্মৃতি মন্ধানার তিন বিশ্বরেকর্ড। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩৩০ রানের বিশাল স্কোর খাড়া করেও ৩ উইকেটে হারতে হল হরমনপ্রীত কৌরের দলকে। মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে রান তাড়া করার বিশ্বরেকর্ড করে জিতল অস্ট্রেলিয়া। এক ওভার বাকি থাকতে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা।
এই ম্যাচ থেকে ভারতের ইতিবাচক দিক দুটি। এক, স্মৃতি মন্ধানার রানে ফেরা। দুই, বল নষ্ট না করা। তবে চিন্তা থাকল ভারতীয় দলের বোলিং এবং ফিল্ডিং নিয়ে। আগামী রবিবার আরও এক কঠিন প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচে হারলে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে ভারত।
স্মৃতির ৬৬ বলে ৮০ রানের ইনিংস ম্লান হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলির ১০৭ বলে ১৪২ রানের ইনিংসের কাছে। ২১টি চার, ৩টি ছক্কা রয়েছে হিলির ইনিংসে। ১২০টি এক দিনের ম্যাচ খেলা ৩৫ বছরের হিলি তাঁর যাবতীয় অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ম্যাচ বার করলেন।
একটা সময়ে মনেই হয়নি অস্ট্রেলিয়া জিততে পারে। কারণ, ওপেনিং জুটিতে বড় রান তুললেও পাওয়ার প্লে-র পর রান তোলার গতি বাড়াতে পারেনি। প্রথম ১০ ওভারে ৮২ রান উঠলেও পরের ২০ ওভারে ১০০-র সামান্য বেশি রান করে অস্ট্রেলিয়া। ওই সময় দুই স্পিনার বাঁহাতি শ্রী চরণী এবং ডানহাতি দীপ্তি শর্মাকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয় অসি ব্যাটারদের। শ্রী চরণী ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সেরা ছিলেন। তাঁর ১০ ওভারে ৪১ রান ওঠে। তিনি তিন উইকেট নেন। কিন্তু তার পরেও অস্ট্রেলিয়া বুঝিয়ে দিল কেন তারা সাত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
হিলিকে শুরুতে সঙ্গত দেন ফোব লিচফিল্ড (৪০)। তিনি আউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া ধাক্কা খায় চোটের জন্য এলিস পেরি উঠে যাওয়ায়। যদিও তিনি আবার পরে ব্যাট করতে নামেন। পেরি উঠে যাওয়ার পর দু’ওভারে ফিরে যান বেথ মুনি (৪) এবং অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড (০)। বিশেষ করে মুনির ফিরে যাওয়াটা অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিরাট ধাক্কা ছিল। কিন্তু একা হিলিই জিতে দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। সঙ্গে ছিলেন অ্যাশলে গার্ডনার। ২৭.১ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেট হারিয়ে যখন ১৭০ রান তুলে সমস্যায়, সেখান থেকে ম্যাচ ঘোরান হিলি এবং গার্ডনার।
দু’জনে চতুর্থ উইকেটে ৯৫ রান যোগ করেন। ৩৯তম ওভারে হিলি আউট হওয়ার পরেও ভারতের সামনে সুযোগ ছিল। তখনও অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৬৬ রান। কিন্তু গার্ডনারের সঙ্গে তাহিলা ম্যাকগ্রা (৮ বলে ১২), সোফি মোলিনু (১৯ বলে ১৮), কিম গার্থ (১৩ বলে অপরাজিত ১৪) মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে জেতান।
মহিলাদের এক দিনের ম্যাচে রবিবার অস্ট্রেলিয়ার ৩৩১ রান তাড়া করে জেতা বিশ্বরেকর্ড। আগে কখনও এত রান তাড়া করে জেতেনি কোনও দল। রেকর্ড ছিল শ্রীলঙ্কার। তারা গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৩০২ রান তাড়া করে জিতেছিল।
তবে প্রশংসা করতে হবে স্মৃতির ইনিংসের। সমালোচনার জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে বিশ্বকাপের কঠিনতম ম্যাচটিকেই বেছে নিয়েছিলেন স্মৃতি। মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসাবে এক ক্যালেন্ডার বছরে ১,০০০ রান করলেন স্মৃতি। মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম হিসেবে ৫,০০০ রান করার কৃতিত্বও অর্জন করলেন স্মৃতি। ১১২ ইনিংসে এই মাইলফলকে পৌঁছোলেন স্মৃতি। শুধু দ্রুততম হিসাবেই নয়, কনিষ্ঠতম হিসাবেও মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে ৫,০০০ রান করার রেকর্ড গড়লেন ২৯ বছরের স্মৃতি।
এই ম্যাচে ভারতকে ডুবিয়েছে ব্যাট করার সময় শেষ সাত ওভারের ব্যর্থতা। রিচা ঘোষ ২২ বলে ৩২ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পরে ভারত শেষ সাত ওভারে মাত্র ৩৬ রান তোলে। যেখানে ৩৫০ রান করা সম্ভব ছিল সেখানে ৩৩০ রান করেই থামতে হয় ভারতকে।
ম্যাচের পরে ঠিক এই কথাই বলেন হরমনপ্রীত। ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘‘আমরা যে ভাবে শুরু করেছিলাম, তাতে আরও ৩০-৪০ রান আমরা করতে পারতাম। শেষ ৬ ওভারে আমরা রান তুলতে পারিনি। তার খেসারত দিতে হল। আগের তিনটে ম্যাচে আমরা মাঝের ওভারগুলোয় ভাল ব্যট করতে পারিনি। আমাদের লোয়ার অর্ডার দায়িত্ব নিয়েছিল। আজ প্রথম ৪০ ওভার ভাল খেললাম। কিন্তু শেষের দিকে রান তুলতে পারলাম না।’’
পর পর দু’টি ম্যাচে হারতে হলেও চিন্তিত নন হরমনপ্রীত। বলেন, ‘‘এগুলো হতেই পারে। দুটো ম্যাচ খারাপ গেলে বিশাল কিছু তফাত হয় না। আসল হল আমরা কী করে ঘুরে দাঁড়াতে পারি।’’