Shubman Gill

শুভমনের আদর্শ দু’জন! রাত ৩টেয় খেলতে যেতেন, ফিট থাকতে চাষ করতেন, গাড়ি কিনেছিলেন গান শুনে

গান শুনতে খুব ভালবাসেন শুভমন গিল। এটাই তাঁর চাপমুক্ত থাকার ওষুধ। ফরাসি না বুঝলেও সে দেশের গানের ভক্ত তিনি। ভালবাসেন খেতেও। বিদেশে থাকলে ভারতীয় খাবার মুখে তোলেন না।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:২৩
Share:

শুভমন গিল। —ফাইল চিত্র।

বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হয়েছেন শুভমন গিল। অধিনায়ক হিসাবে প্রথম সিরিজ় খেলেছেন ইংল্যান্ডের মাটিতে। ২-২ ড্র করে দেশে ফিরেছে তাঁর দল। এশিয়া কাপে শুভমন সহ-অধিনায়ক। মাঝের বিরতিতে মুখোমুখি হয়েছিলেন অ্যাপল মিউজ়িকের পডকাস্টে। ক্রিকেট এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শুভমন।

Advertisement

দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার হিসাবে বিবেচনা করা হয় শুভমনকে। ইনিংস শুরু করা থেকে ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বর জায়গা, স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেন। শুভমনের ক্রিকেট শুরু সচিন তেন্ডুলকরকে আদর্শ করে। তবে তাঁর আদর্শ ক্রিকেটার দু’জন। সঞ্চালিকার প্রশ্নের উত্তরে শুভমন বলেছেন, ‘‘আমার দু’জন আদর্শ। প্রথম জন সচিন তেন্ডুলকর। বাবার প্রিয় ক্রিকেটার। সচিনস্যরকে দেখেই আমার ক্রিকেট শুরু। ২০১৩ সালে উনি অবসর নেন। সে সময় থেকেই ক্রিকেট বিষয়টা বুঝতে শিখি। ক্রিকেট তো শুধু দক্ষতার ব্যাপার নয়। খেলাটার মানসিক এবং কৌশলগত দিকও রয়েছে। সেগুলোও বুঝতে হয়। ২০১১ থেকে ২০১৩— এই সময়ের মধ্যে এ সব বুঝতে শুরু করি।’’ আদর্শ ক্রিকেটার নিয়ে শুভমন আরও বলেছেন, ‘‘সেই সময় থেকে বিরাট কোহলির খেলাও মন দিয়ে দেখতাম। কোহলির ব্যাটিং দেখতে খুব ভাল লাগত। ক্রিকেটের প্রতি কোহলির ভালবাসা এবং সাফল্যের খিদে আমাকে টানত। সব রকম ক্রিকেটীয় দক্ষতা এবং কৌশল শেখা যায়। কিন্তু খিদে ব্যাপারটা একদম আলাদা। এটা শেখা যায় না। ভিতর থেকে আসে। কোহলির মধ্যে যেটা প্রচুর ছিল। ওর এই বিষয়টা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে।’’

প্রথম কবে সামনাসামনি দেখেন তেন্ডুলকরকে? শুভমন বলেছেন, ‘‘তখন আমার বয়স নয়। আইপিএলের একটা ম্যাচে বল বয় ছিলাম। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স মোহালিতে খেলতে এসেছিল। সেই প্রথম সামনে থেকে দেখেছিলাম। টেলিভিশনে দেখা আর সামনে থেকে দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য। সচিনস্যর বাবারও আদর্শ ছিলেন। প্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন। সচিনস্যরের অনুশীলনও মন দিয়ে দেখেছিলাম। বোঝার চেষ্টা করেছিলাম, ম্যাচের আগে নিজেকে কী ভাবে প্রস্তুত করেন উনি। সেটা দারুণ অভিজ্ঞতা।’’

Advertisement

অধিনায়ক হিসাবে প্রথম সিরিজ় নিয়ে বলেছেন, ‘‘খুব লড়াই হয়েছে। দু’দলই ভাল খেলেছে। পাঁচটা টেস্টেই পাঁচ দিন খেলা হয়েছে। শেষ ঘণ্টা পর্যন্ত লড়াই হয়েছে। ব্যাপারটা বেশ কঠিন হলেও দারুণ একটা সিরিজ় হয়েছে। আমরা ভাল ভাবে শেষ করতে পেরেছি। এটাই ভাল লেগেছে।’’

অধিনায়ক হয়ে কী মনে হয়েছিল? শুভমন বলেছেন, ‘‘সিরিজ়ের আগে যখন আমার নাম অধিনায়ক হিসাবে ঘোষণা করা হল, তখন অনেক কথা হচ্ছিল। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম বলছিলেন। এত কঠিন সিরিজ়ের আগে দায়িত্ব দেওয়া নিয়েও কথা হচ্ছিল। তবে দলের একজন হিসাবে, একজন ব্যাটার হিসাবে, একজন ক্রিকেটার হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি বলেই মনে হয়। সব মিলিয়ে সিরিজ়টা আমাকে খুব তৃপ্তি দিয়েছে।’’

সিরিজ় শেষ হওয়ার পর শুভমনেরা গিয়েছিলেন নৈশভোজে। সিরিজ় শেষে কী ভাবে উৎসব করেছিলেন? শুভমন বলেছেন, ‘‘আমরা একটু-আধটু আনন্দ করেছি। সকলে রাতে খেতে গিয়েছিলাম। আমার বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে ভাল লাগে। যখন যেখানে যাই, তখন সেখানকার খাবার খেয়ে দেখি। ইংল্যান্ডেও নানা ধরনের খাবার খেয়েছি। অনেকগুলোই বেশ লেগেছে। তবে কোনও ভারতীয় খাবার খাইনি। কারণ দেশে থাকলেই শুধুমাত্র দেশীয় খাবার খাই।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ইংল্যান্ডের অনেক জায়গাতেই যাওয়ার বা ঘোরার সুযোগ হয়েছে। সব জায়গার খাবার খেয়েছি। আমার তো বেশ লাগে। ভারতের খাবার একটু মশলাদার হয়। আমি খুব একটা মশলাদার খাবার খাই না। হালকা খাওয়ার চেষ্টা করি। তবে খাবারের স্বাদ-গন্ধ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’’

ইংল্যান্ডে শুভমনের প্রিয় জায়গা কার্ডিফ। ভারতের টেস্ট অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘কার্ডিফ জায়গাটা বেশ সুন্দর। শান্ত, ঠান্ডা ঠান্ডা। একটা সবুজ শহর। দারুণ। ব্রাইটনও আমার ভাল লাগে।’’ শুভমনকে প্রশ্ন করা হয়, ইংল্যান্ডের মাঠগুলির মধ্যে কোনটি তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার সবচেয়ে প্রিয় বার্মিংহাম। টেস্টে আমার সর্বোচ্চ রান ওখানেই। এটা একটা কারণ। তা ছাড়া টেলিভিশন শোগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় পিকি ব্লাইন্ডার্স। তাই বার্মিংহাম আরও বেশি প্রিয়।’’

ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে সবচেয়ে বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন বার্মিংহামে। সেই ইনিংসের অনুভূতি কেমন? শুভমন বলেছেন, ‘‘দারুণ। সত্যি বলতে সে সময় এ সব ভাবার মতো অবস্থায় ছিলাম না। একটু চাপ ছিল। ম্যাচটা ভাল ভাবে শেষ করাই প্রথম লক্ষ্য ছিল। আমরা আগে কখনও বার্মিংহামে টেস্ট জিততে পারিনি। তবে সেটা নিয়ে ভেবে চাপ নিইনি। কারণ আমি আগে কখনও বার্মিংহামে টেস্ট খেলিনি। নিজের সেরাটা দিতে চেয়েছিলাম। জেতার কথা ভেবেই মাঠে নেমেছিলাম।’’

আপনি প্রচুর গান শোনেন। কী ধরনের গান শুনতে ভাল লাগে? শুভমন বলেছেন, ‘‘প্রচুর গান শুনি। আগে শুধু পঞ্জাবি গান শুনতাম। ভারতে পঞ্জাবি গান খুব জনপ্রিয়। খেলার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে শুরু করার পর অনেক ধরনের গান শুনেছি। কারণ সব জায়গায় তো পঞ্জাবি গান শোনা সম্ভব নয়। ওই সব গানের কথা হয়তো বুঝি না। তবে সুর, ছন্দ এগুলো উপভোগ করি। যেমন ফরাসি গান শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু আমি ফরাসি বুঝি না। ধ্রুপদী সঙ্গীত শুনতেও খুব ভাল লাগে আমার। একটা পছন্দের গানে প্রভাবিত হয়ে আমার প্রথম গাড়ি রেঞ্জ রোভার কিনেছি। আমার বাড়ি বা মামার বাড়িতে তেমন গানবাজনার চর্চা ছিল না কখনও। দুটোই কৃষক পরিবার। আমার বাবা, দাদুদের জীবন কেটেছে চাষবাস করে। বিয়ে বা কোনও অনুষ্ঠানে হয়তো গান বাজত বাড়িতে। বা কোথাও ঘুরতে গেলে, হয়তো কখনও কখনও গান শুনতাম। এর বেশি কিছু না। তবে গানবাজনা আমাদের পঞ্জাবের সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’’

ক্রিকেটজীবনের শুরুটা কেমন ছিল আপনার? শুভমন বলেছেন, ‘‘বাবা ক্রিকেটভক্ত। সময় পেলেই টিভিতে ক্রিকেট দেখতেন। তা থেকে আমারও আগ্রহ তৈরি হয়। ছোটবেলায় মনে হত, বাবা সব সময় কী দেখে? কী আছে এটার মধ্যে? সেই থেকে আমারও ক্রিকেট দেখা শুরু। তখন খুবই ছোট ছিলাম। তেমন কিছু বুঝতাম না। তবে ভাল লাগত। মনে হয়, তিন বছর বয়সে প্রথম হাতে ব্যাট নিয়েছিলাম। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে খেলতাম। বাবা বল করতেন। আর আমি ব্যাট। বাবাই আমার প্রথম কোচ। এ ভাবে বাড়িতেই আমার ক্রিকেট শুরু।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘সাত বছর বয়সে চণ্ডীগড়ে চলে আসি। ওখানেই থাকি এখনও। আমাদের গ্রামে খেলার তেমন সুযোগ ছিল না। পরিকাঠামোও ছিল না। চণ্ডীগড় পঞ্জাবের রাজধানী। বড় শহর। বাবা আমাকে একটা অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। তখন থেকে আমার আসল ক্রিকেট শেখা শুরু।’’ আপনার বাবা কি আপনার সব ম্যাচ দেখতেন? শুভমন বলেছেন, ‘‘প্রায় সব ম্যাচেই বাবা সঙ্গে থাকতেন। বিশেষ করে যখন ছোট ছিলাম। দেশের যেখানেই খেলতে যেতাম, বাবা সঙ্গে যেতেন। বাবা আমার খেলা দেখতে ভালবাসেন। শুরুর দিকে বাবা কয়েক বার বিদেশেও গিয়েছেন আমার সঙ্গে। বলতে পারেন বাবা আমার অন্যতম প্রেরণা। মা, বোনও আমাকে প্রচুর উৎসাহ দিয়েছে।’’

২০২০-২১ মরসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় শুভমনের। প্রথম সিরিজ়ে দু’টি অর্ধশতরান করেন। ব্রিসবেনে খেলেন ৯১ রানের ইনিংস। কেমন ছিল টেস্টজীবন শুরুর সেই অভিজ্ঞতা? শুভমন বলেছেন, ‘’১১ বছর বয়সে একটা শিবিরে যোগ দিয়েছিলাম। শিবিরটা ছিল ভারতের অনূর্ধ্ব-২৩ জোরে বোলারদের জন্য। শিবিরে ব্যাটার কম ছিল। তাই সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার বয়স ছিল প্রায় সকলের অর্ধেক। আমার খুব কাছের এক বন্ধু ওই শিবিরে ছিল। ওর নাম খুশবীর। ও জোরে বোলার। ও শিবিরে যোগ দিয়েছিল। শিবিরের হেড কোচকে ও-ই আমার কথা বলে। কারণ ওদের একটা ম্যাচ ছিল আর এক জন ব্যাটার দরকার ছিল। শুনে উনি বলেছিলেন, ‘ও তো খুব ছোট। পারবে খেলতে?’ খুশবীর তাঁকে আশ্বস্ত করেছিল। খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। সাত নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়েছিল আমাকে। প্রথম পাঁচ ব্যাটার ৫ ওভারের মধ্যে আউট হয়ে যায়। আমি ৯০ মতো করেছিলাম। অপরাজিত ছিলাম। সেটা একটা অনুশীলন ম্যাচ ছিল। কিন্ত ওই ইনিংসটা আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রথম সিরিজ়েও সেই আত্মবিশ্বাসটা কাজে এসেছিল। মনে হয়েছিল, আমি পারব।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ক্রিকেট খেলতাম ছোট বেলায়। কম করে ৬ ঘণ্টা তো বটেই। ট্রেনিং তেমন করতাম না। তবে সময়-সুযোগ পেলে চাষের কাজ করতাম। তাতে লাভ হত। অনেকে বলে প্রচুর পরিশ্রম করেছে ছোট বেলায়। আমার পরিশ্রম বলে মনে হত না। মনের আনন্দে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতাম। ক্লান্তি লাগত না।’’

ছোটবেলায় ক্রিকেট শেখার সময় কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে আপনার? শুভমন বলেছেন, ‘‘সরকারি অ্যাকাডেমি ছিল একটা। বাবা সেখানে কোচিং করাতেন। কিছু দিন পর বাবাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ওখানকার কোচ সকাল ৬ থেকে ১০টা এবং বিকাল ৪টে থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খেলা শেখাতেন। তাই আমাকে ভোররাতে ৩টের সময় বাবা নিয়ে যেতেন। বাকিরা আসার আগে সকাল ৬টা পর্যন্ত শেখাতেন। তার পর স্কুলে যেতাম। কোনও কোনও দিন অর্ধেক স্কুল করে চলে আসতাম। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত ফাঁকা সময়টায় বাবা আবার আমাকে শেখাতেন। এ ভাবে দু’বছর খেলা শিখেছি। এটুকুই। এ ছাড়া আমার তেমন খারাপ কোনও স্মৃতি নেই। তবে অত ছোট বয়সে রোজ ৩টের আগে ঘুম থেকে ওঠাটা একটু কষ্টকর ছিল। চ্যালেঞ্জিংও বলতে পারেন। তবে আমি বাবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমাকে ক্রিকেটার করার জন্য বাবা নিজেও প্রচুর কষ্ট করেছেন।’’

চাপমুক্ত থাকার জন্য ম্যাচের আগে গান শোনেন শুভমন। আবার নিজে বা অন্য কেউ ভাল খেললে বা দল জিতলে ম্যাচের পর সাজঘরে গান চালিয়ে দেন। তখন দলের ডিজে হয়ে যান ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের সাজঘরে একটা বড় স্পিকার থাকে। আমি তার সঙ্গে ফোনটা কানেক্ট করে দিই। একটার পর একটা জমাটি গান হয়। অনেকে আবার নিজেদের পছন্দমতো গানও চালিয়ে দেয়। আমি বেশি পছন্দ করি ধ্রুপদী যন্ত্রসঙ্গীত। গান নয়।’’ তাও কখনও কখনও চাপে পড়ে যান। একটু ভয় ভয় করে কোনও কোনও ম্যাচের আগে। তবে মাঠে নামার ৫-৭ মিনিটের পর ভয় কেটে যায় শুভমনের। বিশেষত বড় প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে কিছুটা চাপে থাকেন।

ক্রিকেট ছাড়া শুভমনের প্রিয় খেলা ফুটবল। ফিফা ভিডিয়ো গেম খেলতেও ভালবাসেন। তিনি বলেছেন, ‘‘একটা সময় খুব ফিফা খেলতাম। ফুটবল দেখতে আমার ভাল লাগে। ২০১৪ বিশ্বকাপ থেকে ফুটবলের ভক্ত হয়ে গিয়েছি। নেমারের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। নেমার যে ম্যাচই খেলত দেখার চেষ্টা করতাম। তবে ও সৌদি আরবে খেলতে যাওয়ার পর থেকে খুব একটা দেখা হয় না। এখন আমিও খুব একটা ভিডিয়ো গেম খেলি না। যখন খেলতাম, তখন লিভারপুল, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ভাল দল বেছে নিতাম। এই ক্লাবগুলোর ফুটবলারদের সম্পর্কে খোঁজ রাখার চেষ্টা করতাম। এ বারে যেমন ইংল্যান্ড সফরে সময় আমরা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে গিয়েছিলাম। দু’দলের একটা অনুষ্ঠান ছিল। আমি খুব উপভোগ করেছি। ফুটবলারেরা দারুণ মানুষ। অনেক কথা বলেছি আমরা।’’

শুভমনকে প্রথম দামী হেডফোন উপহার দিয়েছিলেন সুখবীর। তাঁর বোন থাকেন কানাডায়। তিনিই শুভমনের জন্য ভাল একটি হেডফোন এনে দিয়েছিলেন। দুই প্রিয় জিনিস খেলা এবং গান নিয়ে স্বচ্ছন্দে চলেন। এতে কোনও সুবিধা হয়? শুভমনের বক্তব্য, ‘‘অবশ্যই গান শোনাটা আমার রুটিনের মধ্যে এসে গিয়েছে। আমি রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করি। গান আমাকে তরতাজা রাখে। ফলে মাঠে নেমেও পারফর্ম করতে সুবিধা হয়। দুটো জিনিস স্বচ্ছন্দে পাশাপাশি রাখতে পারি আমি।’’ সব ধরনের খেলাই পছন্দ শুভমনের। বিভিন্ন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের প্রস্তুতির কথা শোনেন। তাঁদের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করেন। সাধারণ অ্যাথলিট থেকে বিখ্যাত ফুটবলার— সুযোগ পেলে সকলের সঙ্গে কথা বলতে চান।

ক্রিকেট কেন সবচেয়ে প্রিয়? শুভমন বলেছেন, ‘‘ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেটা বিনয়ী থাকতে বাধ্য করে। হয়তো আপনি সব ম্যাচ জিতেছেন। হয়তো আপনি দু’ম্যাচে ৫০০ রান করেছেন। কিন্তু একটা ম্যাচে ব্যর্থ হলেই শূন্য নেমে যাবেন। আগেরগুলোর গুরুত্ব থাকবে না। এ জন্যই ক্রিকেট আমার সবচেয়ে প্রিয়।’’

আপনি এখন টেস্ট দলে অধিনায়ক। ক্রিকেটার হিসাবে প্রচুর প্রত্যাশার চাপ সামলাতে হয় আপনাকে। তার উপর আপনার ডাক নাম ‘প্রিন্স’। কী ভাবে সামলান? শুভমন বলেছেন, ‘‘যেগুলো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেগুলো নিয়ে ভাবিই না। চাপ প্রচুর থাকে। আমি শুধু নিজের খেলা নিয়ে ভাবি। পরিস্থিতি বিচার করে খেলার চেষ্টা করি। কী করলে দল লাভবান হবে, সেটা বোঝার চেষ্টা করি। দলকে জেতানোর চেষ্টা করি। সকলের কথা ভেবে তো খেলা যায় না। দর্শকদের দিকে খুব বেশি তাকাই না। নিজেকে খেলার মধ্যে রাখলে তেমন চাপ মনে হয় না। কিন্তু গ্যালারির দিকে বেশি দেখলে, মানুষের প্রত্যাশার কথা ভাবলে চাপ তৈরি হয়। তাই খেলার মধ্যে থাকার চেষ্টা করি।’’

শতরান করার পর আপনি বাও করেন। এটা কি পরিকল্পনা করেই করেন? শুভমন বলেছেন, ‘‘একদমই নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার প্রথম সেঞ্চুরি জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে হারারেতে। ২০২২ সালে। সেঞ্চুরি করে এমনিই বাও করেছিলাম। নিজের অজান্তে এমনিই করেছিলাম। তার আগে এমন কখনও করিনি। আমার বন্ধুরাও অবাক হয়েছিল। আমি সাধারণত খুব বেশি উচ্ছ্বাস দেখাই না। বাওয়ের ব্যাপারটা এমনিই হয়ে গিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement