India vs South Africa 2021-22

India vs South Africa 2021-22: দুর্ভেদ্য দুর্গ জয় দিয়েই শেষ হল সোনালি বছর

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্ভেদ্য দুর্গ বলে পরিচিত সেঞ্চুরিয়নে বিরাট জয় তুলে নিল ভারতীয় দল। এ বারও প্রথম।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:২৫
Share:

সেঞ্চুরিয়নে জয়ের উৎসব। ছবি: পিটিআই

ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দুটো তারিখ নিশ্চয়ই সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ এবং ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১।

Advertisement

প্রথম তারিখটায় অস্ট্রেলিয়ার দুর্গ ব্রিসবেনে ভারতের জয়ের পতাকা উড়িয়েছিল অজিঙ্ক রাহানের দল। গ্যাবায় প্রথম টেস্ট জয় পেয়েছিল ভারত। দ্বিতীয় তারিখটা, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্ভেদ্য দুর্গ বলে পরিচিত সেঞ্চুরিয়নে বিরাট জয় তুলে নিল ভারতীয় দল। এ বারও প্রথম। বছরের শুরু এবং শেষটা হল একই ভাবে— দু’টো শক্তিশালী ক্রিকেট দেশের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত মাঠে নেমে জয় ছিনিয়ে নেওয়া।

ব্রিসবেনের গ্যাবা আর সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্ট পার্কের দুটো ম্যাচের মধ্যে অবশ্য তফাতও কিছু আছে। ব্রিসবেন টেস্টে নাটকীয়তা অনেক বেশি ছিল। ম্যাচ পেন্ডুলামের মতো দুলেছে। একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভারত ম্যাচের রাশ হাতে নিয়েছে। অন্য দিকে, সেঞ্চুরিয়নে প্রথম দিন থেকেই ভাল জায়গায় ছিল ভারত। এমনকি, দু’বার মাঝের সারির ব্যাটিংয়ে ধস নামলেও তার কোনও প্রভাব পড়েনি ম্যাচে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার আবহাওয়া সমস্যা না করলে ভারতের যে ম্যাচ জিততে সমস্যা হবে না, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডিন এলগার লড়াই করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এলগার এক বার আউট হওয়ার পরে ওদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। শেষ হয়ে যায় ১৯১ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটে করে উইকেট তুলল মহম্মদ শামি এবং যশপ্রীত বুমরা। মহম্মদ সিরাজের সংগ্রহ দু’টো। সিরিজ়ের প্রথম টেস্ট ১১৩ রানে জিতে ১-০ এগিয়ে গেল ভারত।

এই টেস্টে প্রথম দিন ভারতের দুই ওপেনার যে ভাবে ব্যাট করেছিল, তাতেই ম্যাচটা বিরাট কোহলিদের হাতে চলে যায়। যে পিচ থেকে পেসাররা সাহায্য পেয়েছে, সেখানে ১২৩ রানের ও রকম ইনিংস খেলার জন্য স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাচের সেরা হয়েছে রাহুল। তবে ওর পাশাপাশি আমি ভারতীয় পেসারদের কথাও বলব। বিশেষ করে শামির। কোনও সন্দেহ নেই, লাল বলের ক্রিকেটে বিশ্বের প্রথম তিন সেরা পেসারের মধ্যে এক জন শামি। ও বলের সেলাই আর কব্জিটা খুব ভাল কাজে লাগায়। শামি কিন্তু খুব কমই বড় সুইং করায়। ওর অস্ত্র হল, দেরিতে ভাঙা ছোট্ট সুইংগুলো। যা ব্যাটের কানা ছুয়ে উইকেটকিপারের হাতে চলে যাবে। এ দিন যে ভাবে উইয়ান মুল্ডার আর মার্কো জানসেনকে আউট করল। শামির আর একটা বড় গুণ হল, নিখুঁত নিশানায় ক্রমাগত বলটা ফেলে যেতে পারে। অনেকটা গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসারের মতোই ছোট ছোট সুইং করিয়ে ব্যাটারদের সমস্যা ফেলে দেয়। এর সঙ্গে তো বুমরা আর সিরাজ ছিলই। যত দিন যাচ্ছে সিরাজ কিন্তু বড় অস্ত্র হয়ে উঠছে লাল বলের ক্রিকেটে। এই পিচে ভেবেছিলাম স্পিনারদের কোনও ভূমিকাই থাকবে না। কিন্তু দেখলাম, শেষ বেলায় পরপর দু’উইকেট তুলে নিজের কাজটা করে গেল অফস্পিনার আর অশ্বিনও।

পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, সেঞ্চুরিয়নে ২৮টা টেস্ট খেলে এই নিয়ে তিনটেতে মাত্র হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং এ বার ভারতের কাছে। সেঞ্চুরিয়নের পিচ বরাবরই দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের সাহায্য করে এসেছে। এ বারও করেছে। আর সেখানেই আরও বেশি কৃতিত্ব রাহুল এবং মায়াঙ্কের। ওদের ওপেনিং জুটিটাই জয়ের ভিত তৈরি করে দিয়েছিল। রাহুলের শট খেলার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওর বল ছাড়ার দক্ষতা। রাহুল আর মায়াঙ্ক খুব ভাল করে বুঝে গিয়েছিল ওদের অফস্টাম্পের অবস্থানটা। যেটা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা বুঝতে পারেনি। ম্যাচের পরে দেখলাম সে কথাটা স্বীকারও করে নিল এলগার।

ব্রিসবেন, ওভাল, লর্ডস আর এ বার সেঞ্চুরিয়ন জয়। পাশাপাশি সিডনির ওই লড়াকু ড্রটাকে ধরলে বলতেই হবে লাল বলের ক্রিকেটে ২০২১ সালটা সোনার সময় গিয়েছে ভারতের কাছে। বিদেশের মাঠে কঠিন প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে এ রকম পরপর জয় সাধারণত দেখা যায় না।

আর দু’দিন বাদেই নতুন বছর। তিন তারিখ থেকে শুরু জোহানেসবার্গ টেস্ট। তার পর ১১ তারিখ থেকে কেপটাউন টেস্ট। শ্রীলঙ্কা ছাড়া আর এশিয়ার কোনও দল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে টেস্ট সিরিজ় জিতে আসতে পারেনি। ভারতের সামনে কিন্তু ভাল সুযোগ আছে নতুন বছরের শুরুতেই একটা ইতিহাস লিখে ফেলার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন