পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আউট হয়ে ফেরার পথে সূর্যকুমার যাদব। ছবি: রয়টার্স।
ব্যাট হাতে দুঃস্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন সূর্যকুমার যাদব। এক সময় বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটারের ব্যাটে রানের খরা। চলতি এশিয়া কাপে সেটাই দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ ছাড়া একটি ম্যাচেও রান পাননি তিনি। কেন এই অবস্থা? অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কি কাল হয়েছে সূর্যের? ফাইনালকে ফাইনালের মতো নিচ্ছেন না তিনি। সূর্যের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং সমস্যায় ফেলে দিচ্ছে ভারতীয় দলকে।
এশিয়া কাপের ফাইনালে অভিষেক শর্মা আউট হওয়ার পর সূর্য নেমেছিলেন। তিনি জানতেন, ফাইনালে আলাদা চাপ থাকে। প্রথম বার ভারতের ওপেনিং জুটি রান পায়নি। পিচও খুব সহজ ছিল না। পাকিস্তানের ইনিংসেই দেখা গিয়েছে, কী ভাবে পর পর উইকেট হারিয়েছে তারা। সেখানে সূর্যের উচিত ছিল কয়েকটা বল ধরে খেলা। পিচ বুঝে তার পর শট মারা।
সূর্য সেখানে কী করলেন। শাহিন শাহ আফ্রিদির পঞ্চম বলেই হাওয়ায় শট খেললেন। বলের গতি কম রেখেছিলেন শাহিন। সূর্য আগেই শট খেলে ফেলেন। ফলে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি তিনি। মিড অফে সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে ভাল ক্যাচ ধরেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন আলি আঘা। ৫ বলে ১ রান করে ফেরেন সূর্য।
গত এক বছরে সূর্যের পরিসংখ্যান দেখে আঁতকে উঠবেন ভারতীয় সমর্থকেরা। শেষ ১১ টি-টোয়েন্টিতে ১০০ রান করেছেন তিনি। গড় ১১.১১। স্ট্রাইক রেট ১০৫.২৬। অর্থাৎ, চলতি বছর প্রতি ম্যাচে ১১ রান করেছেন তিনি। চলতি এশিয়া কাপে সাত ম্যাচে ৭২ রান করেছেন সূর্য। ১৮ গড় ও ১০১.৪০ স্ট্রাইক রেট। এই ৭২ রানের মধ্যে একটি ম্যাচেই এসেছে ৪৭ রান।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সূর্যের পরিসংখ্যান বরাবরই খারাপ। আট ম্যাচে ১১২ রান করেছেন তিনি। ১৬ গড় ও ১১৩.১৩ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন তিনি। বড় ম্যাচেও খুব একটা ভাল খেলতে পারেন না সূর্য। সে ভারতের হয়েই হোক, বা আইপিএলে। আটটি ফাইনালে ১৪.৩৭ গড় ও ১০৮.৪৯ স্ট্রাইক রেটে ১১৫ রান করেছেন ভারত অধিনায়ক। ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে ২৮ বলে ১৮ ও ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ৪ বলে ৩ রান করেছিলেন তিনি। এই ফাইনালে ৫ বলে করলেন ১ রান।
সূর্যের খেলা দেখে মনে হচ্ছে আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন তিনি। নইলে অধিনায়ক হিসাবে যে ভাবে তাঁর খেলা উচিত ছিল তা দেখা গেল না সূর্যের ব্যাটে। ধারাভাষ্যকার সুনীল গাওস্কর বলেই ফেললেন, “১৪৭ রানকে ভারত কোনও রানই মনে করেনি। ওদের খেলা দেখেই সেটা বোঝা গিয়েছে। ১২ ওভারে তো ম্যাচ জিততে হবে না। ম্যাচ জেতা নিয়ে কথা। একটু সাবধানে খেলতে হত। তা হলেই এই সমস্যা হত না।” সূর্য সেটা ভাবলেনই না। অহেতুক শট মারতে গিয়ে আউট হলেন।
ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে সূর্যের ব্যাটিংয়ে অবনতি হয়েছে। তার আগে মিডল অর্ডারে নেমে একার কাঁধে ম্যাচ জেতাতেন। সেই সূর্য অধিনায়ক হওয়ার পর রানই পাচ্ছেন না। তবে কি অধিনায়কত্বের চাপ তাঁকে সমস্যায় ফেলছে? অধিনায়ক হয়ে কি বেশিই সামনে থেকে খেলার চেষ্টা করছেন? প্রতিপক্ষকে প্রয়োজনীয় সম্মান দিচ্ছেন না? আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন ভারতীয় অধিনায়ক? কারণ যা-ই হোক না কেন, সূর্যের ব্যাটিং সমস্যায় ফেলছে ভারতকে।