Yashasvi Jaiswal

রোজগার করি তো একটু ভাল থাকার জন্য! ব্যাট করার সময়ও যশস্বীর মাথায় থাকত সংসারের অভাব

ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকা। এশিয়া কাপের দলে হয়তো সুযোগ হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করেছেন তিনি। সেই যশস্বী জয়সওয়াল মুখ খুললেন তাঁর ছোটবেলা ও ক্রিকেট প্রেম নিয়ে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১৮
Share:

যশস্বী জয়সওয়াল। —ফাইল চিত্র।

সতীর্থেরা যখন দুবাইয়ে এশিয়া কাপ খেলতে ব্যস্ত তখন ভারতে অবসর সময় কাটাচ্ছেন যশস্বী জয়সওয়াল। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকা তিনি। এশিয়া কাপের দলে হয়তো সুযোগ হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করেছেন তিনি। তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটার বলা হয় তাঁকে। ছোট থেকে অনেক লড়াই, অনেক পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে এই জায়গায় পৌঁছেছেন তিনি। সেই লড়াইয়ের কথা শোনা গিয়েছে যশস্বীর মুখে।

Advertisement

ইউটিউব চ্যানেল ‘মাশাবেল ইন্ডিয়া’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের মনের কথা তুলে ধরেছেন যশস্বী। একটি চলন্ত গাড়ির মধ্যে হয়েছে সেই সাক্ষাৎকার। কথা বলার ফাঁকে মুম্বইয়ে নিজের পছন্দের জায়গাও ঘুরে দেখেছেন যশস্বী।

দলে সুযোগ পাওয়াটা আমার হাতে নেই

Advertisement

এশিয়া কাপের দলে সুযোগ না পেয়ে খারাপ লাগেনি। ওটা নির্বাচকদের ব্যাপার। ওঁরা বুঝেছেন, এই দলটাই সেরা। আমার কাজ রান করে যাওয়া। এর বাইরে আর কিছু নিয়ে ভাবছি না।

রোজগার করি তো ভাল থাকার জন্য

ছোটবেলায় যখন আজাদ ময়দানে খেলতাম, তখন খেলার পর ‘খাও গল্লি’-তে যেতাম। কী খাইনি তখন? ইডলি-সম্বর, বড়া-পাও, চা। এগুলো কোনও পাঁচতারা হোটেলে পাব? এখন তো দেশে বিদেশে বড় বড় হোটেলে থাকতে হয়। এখন চিয়া সিড আর গ্রিলড ফিশ খেয়ে থাকতে হয়। কিছু করার নেই। খেলার জন্য এটুকু তো করতেই হবে। কিন্তু কেন খাব না বলুন তো? মানুষ টাকা রোজগার করে কী জন্য? ভাল থাকার জন্য। ভাল খাওয়ার জন্য। দিনের শেষে শান্তিতে ঘুমনোর এত খাটি তো এই জন্যই। খেতে খুব ভালবাসি।

জীবনে টাকার দরকার

টাকার খুব দরকার। আমাদের পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে একটা চল আছে। কেউ সাফল্য পেলে খাওয়াতে হয়। এক বার ক্লাব ক্রিকেটে কোনও একটা ম্যাচে ভাল খেলার পর ভাইকে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। ম্যাকডোনাল্ডসের চিকেন স্প্রিং বার্গার আমার খুব প্রিয়। ওখানেই গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম, টাকা নেই। ভাইকে বলেছিলাম, আজ থাক, পরে এক দিন খাওয়াব। খুব খারাপ লেগেছিল। ভয়ও হয়েছিল। ভাবছিলাম, পরিবারের যদি কারও শরীর খারাপ হয়, কী ভাবে সামলাব। চিকিৎসার খরচের টাকা কোথা থেকে পাব? সেই কারণেই টাকাটা দরকার। যেন পরিবারের সকলকে একটু ভাল রাখতে পারি। এ রকমও হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাট করতে করতে মাথায় এসেছে টাকার দরকার। ম্যাচের চাপ সামলানোর পাশাপাশি টাকার চিন্তাও সামলাতে হয়েছে।

গান শুনতে ভালবাসি

অবসর সময়ে গান শুনতে খুব ভালবাসি। ইংরেজি, পঞ্জাবি, মরাঠি সব শুনি। এই মুহূর্তে প্রিয় গান ‘কোল্ডপ্লে’-র ‘ইয়েলো’। ‘ওয়াকিং অন আ ড্রিম’ সবসময়ের পছন্দের তালিকায় থাকবে।

চুলে ছাঁট দিতে ভাল লাগে

সকলে জানে, চুলের নানা ধরনের ছাঁট দিই। খুব মজা পাই। একটা স্বস্তি পাই। অনেকের হয়তো আমার কোনও ছাঁট ভাল লাগে। অনেকের লাগে না। কিন্তু এ সব করতে আমার ভাল লাগে। এই যে হার্দিক (পাণ্ড্য) ভাই চুলে রং করেছে, ভাল লাগছে। চুলের জন্য ও সময় দেয়। এগুলো উপভোগ করে। জীবনে এই আনন্দটা দরকার। আমি করি।

নিজের চশমাটাকেও সম্মান করি

(গাড়িতে যেতে যেতে মোবাইল পড়ে যাচ্ছিল বার বার। যিনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন, জিজ্ঞাসা করেন মোবাইলে এত মেসেজ বা রিং হচ্ছে কেন? প্রেমিকা ফোন করছে।) ও সবের মধ্যে আমি নেই। মা ফোন করছে। মা সারাক্ষণ ফোন করে। ‘কোথায় আছিস, কী করছিস’ জিজ্ঞাসা করে। (কিছু ক্ষণ পর চশমা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। প্রশ্ন করা হয়, চশমা কি খুব প্রিয়। এত ছটফট করছেন কেন।) আমার কাছে যা যা আছে, যা যা পেয়েছি, তাকে সম্মান করি। এটা মা শিখিয়েছে। মা বলে, জীবনে যা অর্জন করবে তাকে সম্মান করবে, যত্ন করবে।

বেল্ট দিয়ে পিটিয়েছিল মা

মায়ের কাছে এক বার খুব মার খেয়েছিলাম। সে দিন কিছুতেই স্কুল যেতে চাইছিলাম না। মা জোর করছিল। আমি বলছিলাম যাব না, ক্রিকেট খেলব। মা সাধারণত রাগে না। সে দিন রেগেছিল। দরজা বন্ধ করে বেল্ট দিয়ে মেরেছিল। পরে বলেছিল, তোর ভালর জন্য বলছি। তবে কোনও দিন আমাকে কোনও কিছু নিয়ে চাপ দেওয়া হয়নি। ছোট থেকে বিশ্বাস ছিল, ক্রিকেট খেললে ভাল করব। তাই খেলা নিয়েই পড়ে থাকতাম। ছোটবেলা থেকেই মনে মনে ভাবতাম, ওয়াংখেড়েতে ব্যাট করতে নামার সময় কেমন চিৎকার হচ্ছে। সেই পরিবেশটা উপলব্ধি করতাম। পড়াশোনাতেও খারাপ ছিলাম না। পড়ার সময় মন দিয়ে পড়তাম। আমি যদি কোনও কিছু করব বলে ঠিক করি, তা হলে সেটা মন দিয়ে করি। যদি বলা হয় ঘর মুছে দিতে, এবং যদি মনে করি কাজটা করব, তা হলে সেটাও এমন ভাবে করব, সকলে অবাক হয়ে যাবে। আমি এ রকমই।

কনস্টাস পাগল

কনস্টাস, না কনটাস? ওকে তো কনটাস বলে ফেলেছিলাম। আরে ছেলেটা পুরো পাগল। ব্যাট করছিলাম, ও খামোকা বকবক করেই যাচ্ছিল। খুব রাগ হয়েছিল। নেথান লায়ন বল করছিল। তখন মনে হয়েছিল ওকে ধরে আচ্ছা করে দু’ঘা দেব। তার পর মনে হল আমাকে সিলি পয়েন্টে ফিল্ডিং করতে হবে, সামনে ব্যাট করবে স্মিথ। বাপরে বাপ। কনস্টাসের ওই ঘটনার পর রোহিত খুব ধমকেছিল। (মিচেল স্টার্ককে বলেছিলেন, উনি স্লো বল করছেন)। স্টার্কের উপর অবশ্য রাগ হয়নি। ওকে ওই কথা বলেছিলাম একটাই কারণে। তখন ব্যাট করছিলাম। নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে হত। সেই কারণেই বলেছিলাম।

রোহিতের থেকে অনেক কিছু শিখেছি

রোহিত খুব বকাঝকা করে। কিন্তু মন থেকে বিশ্বাস করি, যা বলে ভালর জন্যই বলে। রোহিত ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমার সেরা ওপেনিং জুটি। অনেক কিছু শিখিয়েছে। ও এমন মানুষ যে অনেক কিছু শেখা যায়।

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা রগচটা

এক এক জনের এক এক রকম মানসিকতা থাকে। অস্ট্রেলিয়রা একটু ও রকমই। এখন আইপিএল খেলে খেলে আমাদের সঙ্গে একই সাজঘরে থাকে। আমরা হিন্দিতে কিছু বললে সেটাও একটু-আধটু বুঝতে পারে। আমাদের যে বাছা বাছা শব্দগুলো আছে, সেগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়ে গিয়েছে এত দিনে।

টাকার জন্য ফুচকা বিক্রি করিনি

সত্যিই ফুচকা বিক্রি করেছি। আজাদ ময়দানের পাশেই ফুচকা বিক্রি করতাম। তবে অভাবের জন্য করেছি বলে যেটা বলা হয়, বিষয়টা ঠিক তা নয়। ওখানে যাদের সঙ্গে খেলতাম, তারা একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। কেউ এক দিন মাংস রান্না করলে সকলে মিলে সাহায্য করতাম। বা অন্য কোনও কাজ করলে সকলে মিলে করতাম। সেখানেই এক কাকা ছিলেন। তিনি ফুচকা বিক্রি করতেন। এক দিন বললেন, ‘পারলে চলে আয়, সাহায্য করিস।’ সেই শুরু। ভাল লেগে গিয়েছিল। আসলে ফুচকা আমার খুব প্রিয়। সেটা বিক্রি করতেও ভাল লাগত। ভবিষ্যতে ফুচকা বিক্রি করব ভেবে করিনি। পরস্পরকে সাহায্য করতাম। সেটা ভেবেই করেছি।

হাসতে শুরু করলে থামতে পারি না

এক বার হাসতে শুরু করলে নিজেকে থামাতে পারি না। দলের সকলেই এটা জানে। টিম মিটিংয়ে রাহুল (দ্রাবিড়) স্যর বা গৌতম (গম্ভীর) স্যর খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বোঝালে, সিরিয়াস কোনও আলোচনা করলে, ঠিক সেই সময় ইচ্ছা করে ধ্রুব জুরেল, রিয়ান পরাগেরা আমাকে হাসিয়ে দেয়। তখন নিজেকে সামলাতে পারি না। কখনও ঠোঁটে ন্যাপকিন চেপে, কখনও হাত দিয়ে হাসি চাপার চেষ্টা করি। পারি না। শুনেছি খুব হাসি পেলে নিজের নাকের দিকে তাকালে নাকি হাসি থেমে যায়। সেই চেষ্টাও করেছি।

বাড়ি ফেরাটা সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত

যখন নিজের বাড়িতে ফিরি, গর্ব অনুভব করি। ছোট থেকে দেখেছি, মুম্বইয়ে কত বড় বড় বাকি। মাকে বলতাম, আমিও এক দিন বাড়ি বানাব। অবশেষে সেটা পেরেছি। তাই বাড়ি ফিরলে গর্ব অনুভব করি। ওটাই আমার কাছে সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত।

ইংল্যান্ড সিরিজ়ে বল দখতে পাচ্ছিলাম না

ইংল্যান্ড সিরিজ়ে অনেক ক্যাচ ফেলেছিলাম। কী করব, বল দেখতে পাচ্ছিলাম না। গ্যালারিটা এমন ছিল, আমার বল দেখতে সমস্যা হচ্ছিল। তার উপর বুমরাহের বল তো গোলার মতো। ক্যাচগুলোও আসছিল একই রকম গতিতে। কী করব? ক্যাচ ছাড়ায় যে সমালচনা হয়েছে সেগুলো থেকে শিখব। সমালোচনা হবেই। আমার লক্ষ্য ফোকাস থাকা।

বান্ধবী নেই

মেয়েদের অ্যাটেনশন পেলাম কই! কখনও বান্ধবী ছিল না। এখনও নেই। কোনও দিন ডেটে যায়নি। ও সব নিয়ে ভাবি না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement