ধোনিকে ডেকে এনে সতীর্থদের উদ্বুদ্ধ করেন ঝাড়খণ্ড অধিনায়ক
Ishan Kishan

ধ্যান করেই বাড়ে ধৈর্য, কাপ-স্বপ্নে বিভোর ঈশান

গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবারের মধ্যে দু’টি বড় উপহার পেয়েছেন ঈশান। যেন আগাম বড়দিন এসেছে তাঁর জীবনে। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দু’দিনের মধ্যে ভারতের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার শুভসংবাদ।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:২২
Share:

লক্ষ্যস্থির: বিশ্বকাপে সেরা ছন্দে থাকতে মরিয়া ঈশান। — ফাইল চিত্র।

ভারতীয় দলে ফিরে এসেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, একেবারে শুভমন গিলের মতো তারকাকে ছিটকে দিয়ে ঢুকে পড়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে। এক মাস আগেও যদি ঈশানকে বলা হত তিনি বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাবেন, বিশ্বাস হত?

লক্ষ্যে যদিও স্থির ছিলেন ঝাড়খণ্ডের অধিনায়ক। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ১০ ইনিংসে দু’টি শতরান-সহ ৫১৭ রান করেছেন। ফাইনালে ৪৯ বলে তাঁর ১০১ রানের ইনিংসের দৌলতে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন হয় ঝাড়খণ্ড। প্রাক-মরসুমে বুচিবাবু প্রতিযোগিতাতেও ঝাড়খণ্ডকে জেতান তিনি। ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পরে মৌখিক ভাবে প্রতিবাদ করেননি। ব্যাটেই জবাব দিয়েছেন ঈশান।

চারিদিক থেকে কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার পরে ঈশান ঠিক করেন, জীবনদর্শন পাল্টাবেন। আনন্দবাজারকে তিনি সোমবার বিকেলে ফোনে বললেন, ‘‘নিয়মিত অনুশীলন করেছি। কখনও ফাঁকি দিইনি। কোচ বলেছিলেন ধৈর্য বাড়াতে হবে। আমি নিয়মিত ধ্যান শুরু করি। প্রত্যেক দিন অনুশীলন শেষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধ্যানে বসতাম। তাতে সত্যিই উপকার পেয়েছি।’’

গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবারের মধ্যে দু’টি বড় উপহার পেয়েছেন ঈশান। যেন আগাম বড়দিন এসেছে তাঁর জীবনে। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দু’দিনের মধ্যে ভারতের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার শুভ সংবাদ। এক সময় অনুরোধ করেও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলানো যাচ্ছিল না। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে সাফল্যই ভারতীয় দলের দরজা খুলে দিল তাঁর সামনে। ঈশান বলছিলেন, ‘‘সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি চলাকালীন কখনও ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের কথা মাথায় আসেনি। একটাই লক্ষ্য ছিল, ঝাড়খণ্ডকে চ্যাম্পিয়ন করব। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বার নিজের রাজ্যকে ট্রফি দিতে চেয়েছিলাম। সত্যি ভাবিনি এই সাফল্য একই সঙ্গে আমার এত বড় স্বপ্নপূরণও করবে। বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে পারার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! ভারতীয় বোর্ডের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’

প্রায় দু’বছর পরে ভারতীয় দলে নিজের নাম দেখার পরে অনুভূতি কেমন ছিল? ঈশানের উত্তর, ‘‘দল যখন ঘোষণা হয়, আমি বিমানে ছিলাম। রাঁচী পৌঁছনোর পরে একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে। ঠিক করেছিলাম, ব্যাগেজ কাউন্টার থেকে ব্যাগ নিয়ে বাইরে বেরিয়ে ফোন তুলব। বুঝতে পারছিলাম না এত ফোন কেন আসছে?’’ যোগ করলেন, ‘‘এর পর খুব কাছের এক বন্ধুর ফোন তুলি। ও-ই আমাকে প্রথম বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়ার খবরটা দেয়। শুনে বিমানবন্দরের ভিতরেই লাফিয়ে উঠেছিলাম। এত দিনের পরিশ্রমের ফল পেলাম। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না এই অনুভূতি।’’ যোগ করেন, ‘‘বিশ্বকাপ নিয়ে এখন থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আমরা গত বারের চ্যাম্পিয়ন। এ বারও দল শক্তিশালী। কাপ ধরে রাখার লড়াইয়ে নামতে হবে। নিজের সেরাটা দিয়ে ঝাঁপাতে চাই।’’

এক সময় ভারতীয় দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। ২০২৩-এর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে মানসিক ক্লান্তির কারণ দেখিয়ে ফিরে আসতে চেয়ে বোর্ডকে চিঠি দেন তিনি। এর পর দেখা যায়,ঘরোয়া ক্রিকেটে একাধিক ম্যাচ না খেলে দুবাইয়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছেন। তৎকালীন কোচ রাহুল দ্রাবিড় নির্দেশ দেওয়ার পরে ঈশান ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরেন। কিন্তু ভারতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও ছেঁটে ফেলা হয় তাঁকে। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই অভিশপ্ত অধ্যায় কাটিয়ে ঈশান আবার ফিরলেন আলোয়।

ঈশানের এক সময়ের সতীর্থ শাহবাজ় নাদিম বলছিলেন, প্রত্যেক দিন প্রায় চার ঘণ্টা নেটে ব্যাট করতেন তাঁর রাজ্যের অধিনায়ক। দলের প্রত্যেককে অনুপ্রাণিত করতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গেও সতীর্থদের আলাপ করিয়ে দেন ঈশান। ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থা (জেএসসিএ) থেকেই ধোনির সঙ্গে রাজ্য দলের সদস্যদের একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়। নাদিম এখন জেএসসিএ-র যুগ্মসচিব। সৌরভ তিওয়ারি সচিব। তাঁদের অনুরোধে ধোনি আসেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করতে। নাদিম বলছিলেন, ‘‘ঈশান যে বড় অধিনায়কও, সে দিন বুঝলাম। ও নিজে মাহি ভাইয়ের সঙ্গে সকলের আলাপ করিয়ে দিল। এবং ওঁর সামনে সতীর্থদের প্রশংসা করল। মাহি ভাই কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের খবর রাখে। সে দিন ছেলেদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছিল, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেললে ভারতীয় দলের দরজা খুলবেই। ঈশানের ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই তো হল।’’

ঈশান নিজেও বলছিলেন, ‘‘মাহি ভাইয়ের পরামর্শ আশীর্বাদের সমান। মুস্তাক আলি ট্রফির আগে সকলের সঙ্গেই কথা বলেছে। তবে দল ভাল না খেললে এই প্রতিযোগিতা জেতা সম্ভব ছিল না। সতীর্থদের জন্যই এই সাফল্য। দল জিতেছে বলেই আমার কাছে বড় সুযোগ এসেছে।’’

ঈশানের কোচ উত্তম মজুমদারও মুগ্ধ ছাত্রের নিষ্ঠা ও পরিশ্রম দেখে। বলছিলেন, ‘‘ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ায় খুব ধাক্কা খেয়েছিল। অধৈর্য হয়ে পড়েছিল। নিজের প্রতি আস্থা ফেরাতে অনেকটা সময় লেগেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘আমিই ওকে ধ্যান শুরু করতে বলি। জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদদের আত্মজীবনী পড়তে বলি। ধর্মগ্রন্থও পড়া শুরুকরেছিল। ধীরে ধীরে ওর পরিবর্তন লক্ষ্য করি। নিজের প্রতি আস্থা ফিরে আসে। ওকে বলেছিলাম, যত বেশি ম্যাচ খেলবি ততই জড়তা কাটবে। ও কিন্তু তার পর থেকে একটাও ম্যাচে বিশ্রাম নেয়নি।’’ যোগ করেন, ‘‘বুচিবাবু প্রতিযোগিতাও খেলতে চলে গিয়েছিল। ক্লাব ক্রিকেট, জেলা স্তরের ক্রিকেট সব ম্যাচে ওকে খেলতে বলতাম। বড় রান করতে করতেই ওর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। সৈয়দ মুস্তাক আলি ফাইনালে তারই প্রতিফলন দেখতে পেলেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন