India Vs Bangladesh

চিপকের চেনা পিচের অচেনা আচরণ! তবু পরিকল্পনা বদলে সফল অশ্বিন, দলকে সাহায্য করতে পেরে খুশি

যে পিচে স্পিনারদের জন্য তেমন কিছুই ছিল না, সেখানেও বল হাতে সফল অশ্বিন। খেলা যত এগিয়েছে চিপকের পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য তত সহজ হয়েছে। তবু একের পর এক উইকেট তুলেছেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:১৯
Share:

রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ছবি: বিসিসিআই।

চেন্নাইয়ের ২২ গজে স্পিনারের তুলনায় বেশি সাহায্য পেয়েছেন জোরে বোলারেরা। তবু চেনা মেজাজে দেখা গিয়েছে রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ভারতের ২৮০ রানে জয়ের অন্যতম প্রধান কারিগর তিনিই। প্রথম ইনিংসে উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছেন। তাঁর বল বুঝতে না পেরে উইকেট দিয়েছেন বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারও। ঘরের চেনা মাঠই কি অশ্বিনের সাফল্যের একমাত্র কারণ?

Advertisement

কিছুটা তো বটেই। ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার নিয়ে অশ্বিন বলেছেন, ‘‘চেন্নাইয়ে খেলা সব সময় আমার কাছে অন্য রকমের অনুভূতি। এই মাঠের গ্যালারিতে প্রচুর টেস্ট দেখেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখেছি। সেই গ্যালারির সামনে ভাল পারফর্ম করতে পারলে ভালই লাগে।’’

ঘরের চেনা মাঠের সুবিধা পেয়েছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু যে পিচে স্পিনারদের জন্য তেমন কিছুই ছিল না, সেখানেও এমন সাফল্য কী ভাবে? খেলা যত এগিয়েছে চিপকের পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য তত সহজ হয়েছে। তবু ৫১৪ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন রোহিত শর্মা। শনিবার সে সময় স্বচ্ছন্দে ব্যাট করছিলেন শুভমন গিল এবং লোকেশ রাহুল। রোহিতের সিদ্ধান্তে ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তাঁদের মনে হয়েছিল, আরও ঘণ্টাখানেক ব্যাট করে বাংলাদেশকে ৬০০ রানের লক্ষ্য দিতে হত। শান মাসুদদের পাকিস্তানের মাটিতে হারিয়ে আসা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কি ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলেন ভারত অধিনায়ক। রোহিত ঝুঁকি নেননি প্রমাণ করে দিয়েছেন অশ্বিন। তা ছাড়া, যে দলে যশপ্রীত বুমরা, অশ্বিনদের মতো বোলারেরা রয়েছেন, সেই দলের অধিনায়ক বোধহয় এটুকু সাহসী হতেই পরেন।

Advertisement

বুমরা বা মহম্মদ সিরাজ দ্বিতীয় ইনিংসে পিচ থেকে তেমন সাহায্য না পাওয়ায় আশঙ্কা আরও একটু তীব্র হয়েছিল শনিবার। বাংলাদেশের ব্যাটারেরাও আউট হয়েছিলেন মূলত ভুল শট নির্বাচন করে। তাতে ভারতীয় শিবিরে অবশ্য আশঙ্কা তৈরি হয়নি। রোহিত বা কোচ গৌতম গম্ভীরের ভরসা ছিল দলের বোলিং শক্তির উপর। কিন্তু অশ্বিনকেও বাংলাদেশের ব্যাটারেরা তিনটি ছক্কা মারায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল কিছুটা। মিলছিল না হিসাব। বাংলাদেশের প্রথম ছয় ব্যাটারের পাঁচ জনই বাঁহাতি। অশ্বিনের বল খেলতে বাঁহাতি ব্যাটারেরা তুলনায় বেশি সমস্যায় পড়েন। তবু অশ্বিনকে অচেনা দেখাচ্ছিল তাঁর চেনা ২২ গজে!

অশ্বিনকে নির্বিষ করে দেওয়া কি এত সহজ? সাফল্যের খোঁজে পরিকল্পনা বদলে ফেলেন অশ্বিন। ওপেনার শাদমান ইসলামকে আউট করেন বলের লেংথ পরিবর্তন করে। কিছুটা ওভার পিচড বল করেন। ধরতে না পেরে আগে খেলে ফেলেন বাংলাদেশের ওপেনার। বল তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো শুভমন গিলের হাতে। মোমিনুল হককে আউট করেন বলের গতিতে বিভ্রান্ত করে। ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে ধারাবাহিক ভাবে বল করা অশ্বিন বলের গতি একটু কমিয়ে দেন। ৮৭ কিলোমিটার গতির বলটি একটু খাটো লেংথে ফেলেন। বিভ্রান্ত মোমিনুলের ব্যাটের পাশ দিয়ে গিয়ে উইকেট ভেঙে দেয় বল। মুশফিকুর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করচে চাইছিলেন। কয়েকটি সহজ বল দিয়ে তাঁকে প্রলোভন দেখান অশ্বিন। তার পর খাটো লেংথে মন্থর গতির বল করে ভুল করতে বাধ্য করেন বাংলাদেশের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে। তাঁর এই ৩ উইকেটই শনিবার শেষবেলায় ভারতের জয় নিশ্চিত করে দেয়। রবিবার বাকি ৬ উইকেট তুলে নেওয়া ভারতীয় দলের কাছে ছিল মূলত সময়ের অপেক্ষা। অশ্বিনকেও রবিবার উইকেটের জন্য বিশেষ পরিশ্রম করতে হয়নি।

নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেছেন, ‘‘কঠিন সময় দলের জন্য কিছু করে দেখানোর একটা সুযোগ পেয়েছিলাম। এমন পরিস্থিতি থেকে সতীর্থেরা অনেকে অতীতে দলকে টেনে তুলেছে। আমিও এ বার সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। তাই এই ম্যাচের ইনিংসটা আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি কিন্তু আগে বোলার। বল করাই আমার মূল কাজ। নিজেকে প্রথমে বোলার ভাবি। ব্যাটিংকেও যতটা সম্ভব ভাবার চেষ্টা করি। এখন ব্যাটিং এবং বোলিংকে আলাদা ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’

অশ্বিন গুরুত্ব দেন দলের স্বার্থকে। দলের জন্য কার্যকর ভূমিকা নিতে পছন্দ করেন। পিচ থেকে সাহায্য না পেলেও বিকল্প পরিকল্পনায় সাফল্যের রাস্তা খুঁজে নেন। তাই চিপকের চেনা পিচের অচেনা আচরণও হতাশ করতে পারেনি অশ্বিনকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement