LSG vs CSK match in IPL 2025

হেলিকপ্টার শটের জবাব এক হাতের ছক্কায়, ‘ফিনিশার’ ধোনি করলেন ১১ বলে ২৬! রান পেলেও ম‍্যাচ পেলেন না পন্থ

সূচিতে ছিল লখনউ সুপার জায়ান্টসের সঙ্গে চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে লড়াইটা আদতে ছিল ঋষভ পন্থের সঙ্গে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। সেই লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসলেন মাহি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:২৭
Share:

এক হাতে ছয় মারছেন ধোনি। ছবি: সমাজমাধ্যম।

সূচিতে ছিল লখনউ সুপার জায়ান্টসের সঙ্গে চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে লড়াইটা আদতে ছিল ঋষভ পন্থের সঙ্গে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। প্রথম জন মহানিলামে ২৭ কোটি পাওয়ার পরেই নেতৃত্ব পাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়। দ্বিতীয় জনের নেতৃত্ব পাওয়াটা আকস্মিক। তিন দিন আগেও জানা ছিল না কারও। সেই লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসলেন মাহি। তাঁর চোখের সামনে পন্থকে তাঁরই পছন্দের ‘হেলিকপ্টার শট’ মারতে দেখেছিলেন ধোনি। জবাব দিলেন এক হাতে ছক্কা মেরে। লখনউয়ের তোলা ১৬৬ (৭ উইকেটে) চেন্নাই টপকে গেল পাঁচ উইকেট হারিয়ে। পাঁচ হারের ধাক্কা কাটিয়ে অবশেষে জয়ে ফিরল চেন্নাই। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ দিন বাদে দেখা গেল ফিনিশার ধোনিকে। শেষ পর্যন্ত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে এলেন। তবে ম্যাচ শেষে হালকা খোঁড়াতে দেখা গেল তাঁকে। এত ধকলের পর হাঁটুর পুরনো চোট চাগাড় দিতেই পারে। তা কতটা গুরুতর, সেটা অবশ্য সময়ই বলবে।

Advertisement

টস করতে নেমে গুরু-শিষ্য মেতে ওঠেন মজায়। ছবি তুলতে গিয়ে পন্থের গায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন ধোনি। তরুণ উইকেটকিপারও হাসি চাপতে পারেননি। তিনিও পাল্টা ধোনিকে জড়িয়ে ধরেন। টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সময় আরও এক বার দলের খামতিগুলি উল্লেখ করেছিলেন ধোনি। ম্যাচে দেখা গেল, বেশির ভাগ খামতিই পূরণ করে ফেলেছে দল। তবে মিডল অর্ডার নিয়ে সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে। প্রতি ম্যাচে ধোনি আর শিবম দুবে ম্যাচ জেতাবেন না।

আগে ব্যাট করতে নেমে এডেন মার্করাম, নিকোলাস পুরান, মিচেল মার্শ— লখনউয়ের মারকুটে ব্যাটারেরা ব্যর্থ হওয়ায় মঞ্চটা যেন তৈরিই ছিল পন্থের সামনে। রানে ফেরার জন্য এর থেকে ভাল সময় আর হত না। পন্থ সেটা ভাল ভাবে কাজে লাগালেন। মার্শের অনুপস্থিতিতে আগের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে দুঃসাহসী শট খেলতে গিয়ে গড়াগড়ি খেয়েছিলেন। এ দিনও দুঃসাহসী শট ছিল একটি-দু’টি। তবে ৪৯ বলে ৬৩ রানের ইনিংসের বেশির ভাগটাই ছিল হিসেবি ক্রিকেট। যেখানে অহেতুক ঝুঁকি নেওয়া, দ্রুত রান তোলার মতো তাগিদ ছিল না। বরং পরিস্থিতি মাথায় রেখে দলকে সাহায্য করার একাগ্রতা ছিল।

Advertisement

পন্থ ব্যাট করতে নামার সময় দু’উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে ছিল লখনউ। সেই সময়ে আগ্রাসী হয়ে উইকেট খোয়ালে দল আরও চাপে পড়ত। পন্থ সেই রাস্তায় হাঁটেননি। প্রথম চার মারেন তৃতীয় বলে। জেমি ওভার্টনকে ছয় মেরে দলের রান ৫০ পার করেন। সেই ছয়ও হয় রিভার্স স্কুপে। এর পরে দু’-একটি চার মারলেও বাকি সময় খুচরো রান নেওয়ার দিকে নজর দেন। মন্থর পিচে রান তোলা সহজ ছিল না। পন্থ নিজেও সেই চেষ্টায় যাননি। নুর আহমেদ বিপজ্জনক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তাঁর ছ’টি বলে কোনও রান নেননি পন্থ।

তবে মাথিশা পাথিরানাকে ১৮তম ওভারের প্রথম বলে যে ছয়টা মারলেন, তা অবাক করে দিল ধোনিকেও। মাহিরই ‘হেলিকপ্টার শটে’ বল গ্যালারিতে পাঠালেন পন্থ। ধোনি তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন। সেই ওভারেই আর একটি ছয় মেরে অর্ধশতরান এল। তাঁর ক্যাচও ফেললেন শেখ রশিদ। শেষে সেই ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়েই ফিরতে হল লখনউ নেতাকে।

ধোনি কী করলেন? অংশুল কম্বোজের বল পুরানের প্যাডে লাগার সময় তিনি ডিআরএস নিতে খুব একটা ইচ্ছুক ছিলেন না। তরুণ পেসারের কথায় মৃদু হেসে রাজি হয়ে যান। সাফল্য মিলতে কম্বোজের পিঠও চাপড়ে দেন। তাঁর স্টাম্প, ক্যাচ এবং রান আউট— সবই দেখা গিয়েছে এ দিন। ১৪তম ওভারে আয়ুষ বাদোনির স্টাম্প ভেঙে দেওয়ার পরেও আম্পায়ারেরা নিশ্চিত হননি। তাঁদের মনে হয়েছিল, ধোনি বোধহয় উইকেটের আগে বল ধরেছেন। কিন্তু হাজার হলেও তিনি ধোনি। ২০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা থাকা ক্রিকেটার স্কুলছাত্রদের মতো ভুল কী করে করবেন! রিপ্লে-তে দেখা গেল, উইকেটের কয়েক মিলিমিটার আগে বলটি ধরেছেন তিনি। অতএব, ভুলের কোনও জায়গা নেই।

লখনউ ইনিংসের শেষ ওভার দেখল তাঁর রান আউট। পাথিরানার ওয়াইড ইয়র্কার আব্দুল সামাদ ব্যাটে লাগাতে না পারলেও পন্থ তাঁকে রান নিতে বলেন। সামাদ দৌড়তে একটু দেরি করেন। ধোনির কাছে সে টুকুই যথেষ্ট। তিনি লম্বা থ্রোয়ে সামাদের প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে। পরের বলে পন্থের লোপ্পা ক্যাচ হাতে জমা পড়ে। নেতৃত্বও পিছনে রাখা যাবে না। শুরুর দিকে পেসারদের করিয়ে মাঝের দিকে স্পিনারদের রেখেছিলেন। ছাপ ফেলতে না পারা অশ্বিনকে খেলানইনি। নুর এবং জাডেজাকে দিয়েই কাজ সেরে নেন।

১৬৭ তাড়া করতে নেমে অনেক দিন বাদে পুরনো চেন্নাইকে দেখা গিয়েছে, যারা পাওয়ার প্লে-তে অকুতোভয় ব্যাট করে। ডেভন কনওয়ের জায়গায় এ দিন খেলানো হয় শেক রশিদকে। প্রথম ম্যাচে ছাপ রেখে গেলেন তিনি। প্রথম ওভারে জোড়া চার মেরে শুরু করেন রাচিন রবীন্দ্র। দ্বিতীয় ওভারে আকাশ দীপকে তিনটি চার মারেন রশিদ। এ বারের আইপিএলে দ্বিতীয় বার ওপেনিংয়ে ৫০ রানের জুটি হয়। সমস্যা শুরু হয় রাচিন (৩৭) ফিরতেই। পর পর ফিরে যান রাহুল (৯), জাডেজা (৭) এবং বিজয় শঙ্কর (৯)।

তখনও বোঝা যায়নি, ধোনি নিজের আসলটা জমিয়ে রেখেছেন ব্যাটিংয়ের জন্য। এ দিন সাতে ব্যাট করতে নামেন। দু’টি চার মেরে শুরুটা খারাপ করেননি। তবে ১৭তম ওভারে শার্দূল ঠাকুরকে মারা এক হাতের ছক্কা এ দিন সেরা দৃশ্য হয়ে থাকল। ফিরিয়ে দিল ‘ভিন্টেজ’ ধোনিকে। ১৯তম ওভারে তাঁর সহজ ক্যাচও ফেললেন রবি বিশ্নোই। তত ক্ষণে অবশ্য ম্যাচ চেন্নাইয়ের পকেটে।

চেন্নাইয়ের বোলিংয়ের সময় প্রথম বলেই খলিল আহমেদ তুলে নেন এডেন মার্করামকে। চলতি মরসুমে মার্করাম এবং মিচেল মার্শের জুটি বেশ কয়েক বার সফল হয়েছে। সেই কাঁটা শুরুতেই উপড়ে ফেলে চেন্নাই। খলিলের বল ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন মার্করাম। ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায়। পিছন দিকে অনেকটা দৌড়ে ক্যাচ ধরেন রাহুল ত্রিপাঠী। প্রথম উইকেট পড়ার পর নামেন নিকোলাস পুরান। চলতি মরসুমে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় যিনি সবার উপরে। তবে মন্থর উইকেটে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না নেমেও। খলিল এবং অংশুল কম্বোজকে একটি করে চার মারেন। চতুর্থ ওভারে তিনিও সাজঘরে।

এ ক্ষেত্রে কম্বোজের প্রশংসা প্রাপ্য। তাঁর ধীরগতির বল পুরানের প্যাডে লাগলেও প্রথমে ধোনি ডিআরএস নিতে চাননি। তার পর হাসিমুখেই রাজি হন। দেখা যায়, কম্বোজের আন্দাজই সঠিক। তৃতীয় আম্পায়ার পুরানকে আউট দিতেই সতীর্থেরা ঘিরে ধরেন কম্বোজকে। দলের দুই আগ্রাসী ব্যাটারকে হারিয়ে কিছুটা খোলসের মধ্যে ঢুকে যায় লখনউ। মার্শ তবে আগ্রাসনের রাস্তা থেকে সরে আসেননি। কিন্তু রান তোলার গতি খুবই কম ছিল। পাওয়ার প্লে-তে মাত্র ৪২ রান ওঠে।

দশম ওভারে ফিরে যান মার্শ (৩০)। তখন লখনউয়ের রান রেট সাতের সামান্য বেশি। পাঁচে নামা আয়ুষ বাদোনি তাই শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকেন। তবে হার মানেন ধোনির ক্ষিপ্রতার কাছে। জাডেজার বলে অনেকটা এগিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন বাদোনি। ধোনি অনায়াসে স্টাম্প করে দেন। দলের বিপদের সময় এগিয়ে আসেন পন্থ। দু’-একটি সাহসী শট নিলেও, মূলত ধীরে ধীরে ইনিংস গড়ার দিকেই নজর দেন তিনি। অকারণ ঝুঁকি নেননি। একই রাস্তায় হাঁটেন আব্দুল সামাদও। তবে শেষ ওভারে দু’জনেই ফেরেন সাজঘরে। প্রথম বলে ঝুঁকি নিতে রান নিতে গিয়ে ধোনির ছোড়া বলে রান আউট হন সামাদ। পরের বলেই পন্থের শট তালুবন্দি করেন ধোনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement