Rohit Sharma

অস্ট্রেলিয়া সফরে শেষ টেস্টে না খেলা নিয়ে কোচ গম্ভীরের সঙ্গে মতবিরোধ হয়েছিল, অবশেষে জানালেন রোহিত

অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের মুখোমুখি হয়েছিলেন রোহিত শর্মা। আইপিএলের মাঝেও তাঁর ক্রিকেট মস্তিষ্কে শুধু ভারতীয় দলের অতীত এবং ভবিষ্যৎ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:২৭
Share:

রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।

ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা ব্যস্ত আইপিএলে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা খেলছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। অধিকাংশ ম্যাচেই খেলছেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে। আইপিএলের ব্যস্ততার মাঝেও রোহিতের মাথায় ভারতীয় দল। আগামী ইংল্যান্ড সফরের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। মাইকেল ক্লার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিত নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন। উঠেছে অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যর্থতার প্রসঙ্গও।

Advertisement

গত বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় দলের সবচেয়ে বিতর্কিত সফর। যে বিতর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন অধিনায়ক রোহিত নিজেই। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পঞ্চম টেস্টের দল থেকে সরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। রোহিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে পারেন বলেও জল্পনা তৈরি হয়েছিল সে সময়।

ক্লার্ককে রোহিত বলেছেন, ‘‘সিডনির শেষ টেস্ট থেকে নিজেই সরে গিয়েছিলাম। নিজের কাছে সৎ থাকতে চেয়েছিলাম। ব্যাট-বলে ঠিকমতো হচ্ছিল না আমার। সে জন্যই নিজেকে প্রথম একাদশে রাখতে চাইনি। আমাদের দলের বেশ কয়েক জন ফর্মে ছিল না। সমস্যায় ছিল। অন্য কাউকে বাদ দেওয়ার থেকে নিজেকে বসিয়ে দেওয়াই সঠিক মনে হয়েছিল। এই ধরনের সিদ্ধান্তে বাড়তি একটা ব্যাপারও থাকে। চেয়েছিলাম শুভমন গিল ম্যাচটা খেলুক। ও খুব ভাল ব্যাটার। আগের টেস্টটা খেলতে পারেনি ও।’’ রোহিত আরও বলেছেন, ‘‘কখনও কখনও এ রকম হয়। সব ঠিক থাকলেও ব্যাট-বলে ঠিকমতো সংযোগ হয় না। হয়তো ১০ দিন বা পাঁচ দিন পরই ঠিক হয়ে যাবে। তবু সে সময় আমার ওই সিদ্ধান্তটাই ঠিক মনে হয়েছিল। টেস্টের আগে কোচ গৌতম গম্ভীর এবং প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওরা একটু নিমরাজি ছিল। একটু মতবিরোধও হয়েছিল আমাদের মধ্যে। তবে আমার কাছে দলই সবার আগে। আমি চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দলের প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া। অনেক সময় এই সিদ্ধান্তগুলি কাজে আসে। অনেক সময় আসে না। তবু সিদ্ধান্ত একটা নিতেই হয়। সিদ্ধান্ত কার্যকর করে দেখতে হয়। তা ছাড়া নিশ্চিত সাফল্য বলে কিছু হয় না।’’

Advertisement

ক্লার্কের সঙ্গে কথা বলার সময় অধিনায়ক হিসাবে নিজের দর্শনের কথাও জানিয়েছেন রোহিত। ভারতীয় দলের অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার শুরু থেকেই ভেবেছি, দলের সকলে নিজের মতো করে ভাবুক। সবার আগে দলের স্বার্থের কথা ভাবুক। দলের জন্য যেটা প্রয়োজন, সেটাই করুক। আমি কত রান করলাম, আমি কেমন খেললাম— এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দলের পারফরম্যান্সই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা একটা দলগত খেলা খেলি।’’

বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির প্রথম টেস্ট খেলেননি রোহিত। পুত্রের জন্মের জন্য আগেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে ছুটি নিয়ে রেখেছিলেন। শেষ টেস্ট খেলেননি। সিরিজ়ের মাঝের তিনটি টেস্টে করেন মোট ৩১ রান। দ্বিতীয় টেস্টে অনভ্যস্ত ছ’নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। পরে আবার ওপেন করেন। তাতেও রান পাননি। রোহিত বলেছেন, ‘‘উপরের দিকে ব্যাট করতে চাই। ওটাই আমার নিজের জায়গা। আমি যখন অস্ট্রেলিয়ায় যাই, তখন পরিস্থিতি একটু অন্য রকম ছিল। জশস্বী জয়সওয়াল এবং লোকেশ রাহুল ওপেন করেছিল প্রথম টেস্টে। সত্যি বলতে ওরা বেশ ভাল খেলেছিল। সন্তান জন্মের সময়ও ওদের ব্যাটিংয়ের দিকে নজর ছিল আমার। জুটি ভাঙতে চাইনি। মনে হয়েছিল, কেন শুধু শুধু পরিবর্তন করতে যাব? সিরিজ়টা আমরা যে কোনও মূল্যে জিততে চেয়েছিলাম। আমাদের আসল লক্ষ্য ছিল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। বলতে পারেন, একটা মিশ্র ভাবনা কাজ করেছিল। মনে হয়েছিল ওরাই ওপেন করুক। দেখা যাক কী হয়। ভাল করলে ক্ষতি কী?’’

তা হলে কেন পরের টেস্টেই নিজে ওপেন করতে নামলেন? রোহিত বলেছেন, ‘‘অ্যাডিলেডে নীচে ব্যাট করতে নেমে রান পাইনি। হোটেলে ফিরে ভেবেছিলাম, কী করা উচিত। মনে হয়েছিল, ওপেন করে দেখি। নিজের জায়গায় নেমে যদি রান পাই। কারণ ওটাই আমার আসল জায়গা। ওপেনে করলে হয়তো রান পাব।’’ ওপেন করা নিয়ে রোহিত আরও বলেছেন, ‘‘অ্যাডিলেডের পর মনে হয়েছিল, একটা টেস্টে তো ব্যর্থ হয়েছি। বেশি ভাবার দরকার নেই। ইতিবাচক থাকতে চেয়েছিলাম। আরও একটা ম্যাচ দেখতে চেয়েছিলাম। তখন সিরিজ় ১-১ ছিল। মনে হয়েছিল ব্রিসবেনে ভাল কিছু হতে পারে। সেই ম্যাচ ড্র হওয়ার পর মেলবোর্নে গিয়ে পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছিলাম আমরা। আবার ওপেন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’

ইংল্যান্ড সফরের ভাবনাও শুরু করে দিয়েছেন রোহিত। তাঁর আশা, পাঁচ টেস্টের সিরিজ়ে জসপ্রীত বুমরাহ এবং মহম্মদ শামিকে সম্পূর্ণ ফিট অবস্থায় পাবেন। টেস্ট দলের দুই প্রধান জোরে বোলারকে পেলে ইংল্যান্ডকে কড়া লড়াইয়ের মুখে ফেলতে পারবেন। ক্লার্ককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহিত বলেছেন, ‘‘শেষ বার ওরা দু’জনেই খেলেছিল। ২-২ ফলে সিরিজ় শেষ হয়েছিল। এ বারও ১০০ শতাংশ ফিট বুমরাহ এবং শামিকে দরকার আমাদের। আশা করব, দু’জনেই ভাল ভাবে আইপিএল শেষ করবে। অনেকেই বলবেন, আইপিএলে মাত্র চার ওভার বল করতে হয়। কিন্তু ঘন ঘন ম্যাচ এবং যাতায়াত কম চ্যালেঞ্জের নয়। সারা দেশ ঘুরে খেলতে হয় আইপিএল। ওরা দু’জন তো বটেই, চাইব দলের সকলে আইপিএলের শেষে ফিট থাকুক। আমরা পুরো ফিট দল নিয়ে ইংল্যান্ড সফরে যেতে পারলে দারুণ একটা সিরিজ় হবে। এমনিই ওখানে টেস্ট সিরিজ় বেশ চ্যালেঞ্জিং।’’

২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চেয়েছেন ক্লার্ক। সাদা বলের ক্রিকেটে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেন রোহিত। নিজের রান নিয়ে এখন আর ভাবেন না তিনি। রোহিত বলেছেন, ‘‘আমরা ম্যাচ জিততে চাই। ট্রফি জিততে চাই। প্রতিযোগিতা জিততে চাই। ২০১৯ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের পর একটা বিষয় বুঝতে পেরেছিলাম। ওই বিশ্বকাপে আমি পাঁচটা শতরান করেছিলাম। অথচ আমরা সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিলাম। বিমানে দেশে ফেরার সময় মন খুব খারাপ ছিল। মনে হয়েছিল, শতরানগুলো সব মূল্যহীন হয়ে গেল। সেই ধাক্কাটা আমার মানসিকতা বদলে দিয়েছে। একটা ম্যাচে কত রান করলাম, এটা আর আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। দলের জয়টাই আসল।’’

একই মানসিকতা নিয়ে আইপিএল খেলছেন রোহিত। মুম্বইয়ের হয়ে আইপিএলে এখনও পর্যন্ত পাঁচটি ইনিংসে করেছেন যথাক্রমে শূন্য, ৮, ১৩, ১৭ এবং ১৮। নিজের রান নিয়ে ভাবছেন না। দলকে আগ্রাসী শুরু উপহার দিতে চাইছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement