India win Edgbaston Test

বিলেতের ক্রিকেট আকাশে উজ্জ্বল বাংলার দীপ, দ্বিতীয় টেস্টে ৩৩৬ রানে জয়ী ভারত, সিরিজ়ে সমতা ফিরিয়ে লর্ডসে নামবেন শুভমনেরা

বার্মিংহ্যামে প্রথম বার টেস্ট জিতল ভারত। সৌজন্যে শুভমন গিলের ব্যাটিং এবং আকাশদীপের বোলিং। জসপ্রীত বুমরাহের অভাব ঢেকে দিলেন বাংলার জোরে বোলার। সিরিজ়‌ এখন ১-১।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ ২১:৪০
Share:

আকাশদীপকে ঘিরে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স।

রবিবার এজবাস্টনে খেলা শুরু হওয়ার সময় তখন পেরিয়ে গিয়েছিল। কখন খেলা শুরু হবে বোঝা যাচ্ছিল না। ভারতীয় সাজঘরের দিকে ক্যামেরা ঘোরার পর দেখা গেল, হতাশ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন শুভমন গিল। ভারত অধিনায়ক হয়তো ভাবছিলেন, শনিবার আর একটু আগে ইনিংস ডিক্লেয়ার করলে কি ভাল হত? দিনের শেষে অবশ্য ভারত অধিনায়কের মুখে হাসি। মাথার উপরের আকাশ এবং বোলার আকাশদীপ, দুই ‘আকাশ’ বার্মিংহ্যামে জিতিয়ে দিল ভারতকে। প্রথম বার এজবাস্টনে টেস্ট জিতল ভারত। ভেঙে গেল ইংরেজদের দুর্গ। ভারতের জয় ৩৩৬ রানে। সিরিজ়‌েও সমতা ফিরল। লর্ডসে দুই দলকেই শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।

Advertisement

ব্যাট হাতে একটি টেস্টে ৪৩০ রান করেছেন। তবু শনিবার চতুর্থ দিনের খেলা শেষে কিছুটা সমালোচিত হচ্ছিলেন শুভমন। বার বার প্রশ্ন উঠছিল, কেন চতুর্থ দিন একটু আগে ডিক্লেয়ার করলেন না? তা হলে ইংল্যান্ডের হয়তো আরও দু’টি উইকেট ফেলে দেওয়া যেত। রবিবারের বৃষ্টি শুধু শুভমন নয়, গৌতম গম্ভীরেরও ভ্রুকুটি বাড়িয়ে দেয়। সব অবশ্য ঢেকে গেল বোলারদের পারফরম্যান্সে। আকাশদীপ, মহম্মদ সিরাজেরা বোঝালেন, বুমরাহ না থাকলেও তাঁরা টেস্টে ২০টি উইকেট নিতে পারেন।

দিনের শুরুটা হয়েছিল খুবই ভাল। এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে খেলা শুরু হওয়ার পর চতুর্থ ওভারেই অলি পোপকে ফিরিয়ে দেন আকাশদীপ। কিছু ক্ষণ পর হ্যারি ব্রুককেও তুলে নেন। দর্শকাসনে তখন ফিসফাস শুরু হয়ে গিয়েছে, আর কত ক্ষণের মধ্যে ইংল্যান্ডের বাকি উইকেট তুলে নেবে ভারত। তবে বেন স্টোকস এবং জেমি স্মিথের মাথায় অন্য পরিকল্পনা ছিল। দলের বিপদের সময় তাঁরা ‘বাজ়বল’ বেমালুম মাথা থেকে বার করে দিলেন! ধ্রুপদী টেস্ট খেলার দিকে মনোযোগ দিলেন দু’জনেই। যে স্মিথ প্রথম ইনিংসে বলের চেয়ে রান বেশি ছিল, তিনিই এমন ভাবে ঠুকতে শুরু করলেন যে দেখে অবাক হতে হল। স্টোকস ছিলেন আরও শ্লথ। কোনও রকম ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার রাস্তায় হাঁটেননি। ব্যাটের মাঝখান দিয়ে বল আটকাচ্ছিলেন।

Advertisement

দুই ব্যাটারের চোয়ালচাপা লড়াই ক্রমশ হতাশ করে তুলছিল ভারতকে। ৭০ রানের জুটিও হয়ে গিয়েছিল। হালকা প্রশ্ন উঠছিল শুভমনের অধিনায়কত্ব নিয়েও। টানা স্পিনারদের দিয়ে বল করিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। আকাশদীপ, সিরাজদের অনেকটা সময় বাইরে রেখেছিলেন। ফিল্ডিং সাজানোর ভঙ্গিও ছিল রক্ষণাত্মক। বাগে পেয়েও কেন ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তাই নিয়ে আলোচনা করছিলেন ধারাভাষ্যকারেরাও। তবে এক স্পিনারই সাফল্য এনে দেন ভারতকে।

এজবাস্টন টেস্টের পঞ্চম দিনের স্কোরকার্ড। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে শেষ ওভারে হঠাৎই স্টোকসের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। তাতেই উইকেট। ওয়াশিংটন সুন্দরের বল এগিয়ে খেলতে গেলেন। কিন্তু ব্যাট ছিল প্যাডের পিছনে। অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ডিআরএস নিলেন ঠিকই। তবে ইংরেজ অধিনায়ক বুঝতেই পেরেছিলেন আর বাঁচার রাস্তা নেই। মধ্যাহ্নভোজের আগে ওই উইকেটই ভারতের জয় নিশ্চিত করে দিল।

স্টোকসকে হারানোর পর লড়াই করার জন্য পড়ে ছিলেন শুধু স্মিথই। তিনি চেষ্টা করলেন পাল্টা ভারতকে চাপে ফেলার। আকাশদীপকেই আক্রমণ করতে শুরু করলেন। এক ওভারে মারলেন দু’টি ছয়। তবে জানতেন এ ভাবে বেশি ক্ষণ চালানো যাবে না। সেই ওভারেই আকাশদীপ তুলে নেন স্মিথকে। দু’টি শর্ট বলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন স্মিথ। আবার শর্ট বল দেন আকাশদীপ। এ বারও তুলে ছয় মারতে গিয়েছিলেন স্মিথ। তবে স্লোয়ার বল হওয়ায় ব্যাটে-বলে ঠিকমতো হয়নি। বাউন্ডারির ধারে ক্যাচ ধরেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ওখানেই ইংল্যান্ডের ‘স্বপ্ন’ শেষ হয়ে যায়।

তবু ইংল্যান্ডকে অলআউট করতে অতিরিক্ত আধ ঘণ্টা সময় নিল ভারত। ইংল্যান্ডের দুই টেলএন্ডার খেলে গেলেন অনায়াসে। ভারতের জিততে অসুবিধা না হলেও রান পেলে টেলএন্ডারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে। প্রথম টেস্টে সে ভাবেই ভুগেছিল ভারত।

আকাশদীপ যে ভাবে এজবাস্টনে বল করেছেন তাতে লর্ডসে তাঁর খেলা পাকা। সঙ্গে থাকবেন সিরাজ এবং অবশ্যই বুমরাহ। সে ক্ষেত্রে হয়তো প্রসিদ্ধকে বাদ পড়তে হতে পারে। তবে এজবাস্টনে মাত্র এক উইকেট নেওয়া প্রসিদ্ধ বাদ গেলে কারওরই কিছু বলার থাকবে বলে মনে হয় না। যদিও গম্ভীরের ‘প্রসিদ্ধ-প্রীতির’ কথা কারওরই অজানা নয়। দল নির্বাচনের যে ধরন, তাতে লর্ডসেও প্রসিদ্ধকে খেলিয়ে আচমকা আকাশদীপকে বাদ দেওয়া হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এজবাস্টনে ভারতের জয়ে উচ্ছ্বসিত বিরাট কোহলি এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সমাজমাধ্যমে বিরাট কুর্নিশ করেছেন ভারতের ভয়ডরহীন ক্রিকেটকে। লিখেছেন, “এজবাস্টনে অসাধারণ ম্যাচ জিতল ভারত। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে ইংল্যান্ডকে দেওয়ালে ঠেসে ধরেছিল। ব্যাটে এবং মাঠে দলকে দারুণ ভাবে নেতৃত্ব দিল শুভমন। প্রত্যেকে ভাল খেলেছে। যে ভাবে বল করল তার জন্য আলাদা করে সিরাজ এবং আকাশের প্রশংসা প্রাপ্য।”

সৌরভ লিখেছেন, “শুভমন গিল এবং ওর দল কী অসাধারণ খেলল। আগে ব্যাটে, তার পরে বলে। আকাশদীপ এবং সিরাজ দুর্দান্ত বোলিং করেছে। ভারতীয় দলের বোলিংকে ইংল্যান্ডের থেকে অনেক ভাল দেখাচ্ছে। আকাশদীপ এবং সিরাজ প্রচুর পরিশ্রম করতে পারে। বুমরাহকে ছাড়াই জিতল ভারত। অসাধারণ শুভমনের নেতৃত্বে এর চেয়ে ভাল ফল হতে পারে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement