ভারতকে জিতিয়ে হুঙ্কার তিলক বর্মার। ছবি: রয়টার্স।
তিনি যখন ব্যাট করতে নামেন তখন চার ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে ভারত। ফিরে গিয়েছেন এশিয়া কাপে ফর্মে থাকার অভিষেক শর্মা ও শুভমন গিল। আউট অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবও। তখনও জিততে দরকার ১২৭ রান। সেখান থেকে দলকে টেনে তুললেন তিলক বর্মা। চাপের মধ্যেও নিজের উপর ভরসা রেখেছিলেন তিলক। বল দেখে খেলেছেন। প্রথমে সঞ্জু স্যামসন ও তার পর শিবম দুবের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন। শেষ পর্যন্ত ৬৯ রানে অপরাজিত থেকেছেন। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিলক। জয়ের নায়ক তিনি। অথচ এই তিলকের ক্রিকেট শিখতে যাওয়ার টাকাই ছিল না।
ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দরাবাদের ব্যাটারদের আলাদা কদর রয়েছে। মহম্মদ আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষ্মণদের সেই ধারাই বয়ে নিয়ে চলেছেন তিলক। তিলকের পিতা নাম্বুরি নাগারাজু ছিলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। মা গায়ত্রী দেবী গৃহবধূ। টানাটানির সংসারে কষ্ট করে ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি করেছেন তাঁরা। তাঁদের সেই কষ্টের প্রতিদান দিচ্ছে তিলকের ব্যাট। গত কয়েক বছর ধরে দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম সারিতে জায়গা করে নেওয়া তিলকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০২৩ সালের ৩ অগস্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে শুরু। মাত্র দু’বছরে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
১১ বছরের তিলকের টেনিস বলের ক্রিকেটে ব্যাটিং দেখে সম্ভাবনা দেখেছিলেন তাঁর কোচ সালিম বায়াশ। তিনিই তিলককে নিয়ে যান নিজের লিগালা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেই থেকে শুরু তিলকের প্রথাগত ক্রিকেট সাধনা। বাড়ি থেকে অ্যাকাডেমির দূরত্ব ছিল ৪০ কিলোমিটার। সেই পথ প্রতি দিন যাওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না বর্মা পরিবারের। সালিমই সেই দায়িত্ব নেন। নিজের স্কুটারে প্রতি দিন তিলককে নিয়ে যেতেন, আবার প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি পৌঁছে দিতেন।
২০১৮-১৯ মরসুমে হায়দরাবাদের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তিলকের। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। আইপিএলে মুম্বইয়ের হয়ে নজর কাড়ার পর সুযোগ পান ভারতীয় দলে। তাঁর ব্যাটিং দেখে নিজের তিন নম্বর জায়গা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক সূর্য। তবে তিনি যেখানেই নামুন না কেন, একই রকম খেলেন। রবিবারের দুবাই সেই ছবিই দেখল। সূর্যের মুখে হাসি ফুটিয়ে ফিরলেন তিলক।
অথচ এই তিলকের উপরেই ভরসা দেখাতে পারেননি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্য। অধিনায়ক ও ম্যানেজমেন্টের নির্দেশে খেলার মাঝে তিলককে ‘রিটায়ার্ড আউট’ হয়ে ফিরতে হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তিলক অবশ্য বিতর্ক বাড়াননি। নিজের উপর আস্থা ছিল তাঁর। তিনি যে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে পারেন, সেটা ম্যাচের পর ম্যাচে দেখিয়েছেন। আরও এক বার সেটা করে দেখালেন তিলক। এ বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এশিয়া কাপের ফাইনালে।