T20 World Cup 2022

ভুবি-আরশদীপ জুটিই স্বপ্ন দেখাচ্ছে

ভারত কেনই বা চাপে থাকবে? সূর্যকুমার যাদবের মতো একজন ক্রিকেটারই দলকে আরও চাঙ্গা করে দিয়েছে। প্রত্যেকটি দলকেই চিন্তা করতে হয়, কী করে মাঝের ওভারে দ্রুত রান তুলব।

Advertisement

ঝুলন গোস্বামী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৯:২৯
Share:

উল্লাস: ইনিংসের প্রথম বলেই জ়িম্বাবোয়ের মাধিভেরের অসাধারণ ক্যাচ নেওয়ার পরে কোহলিকে অভিনন্দন রোহিতের। রবিবার। ছবি পিটিআই।

ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা! ঘুম থেকে উঠে স্কোরটা দেখেই আঁতকে উঠেছিলাম। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ১৫৯ রানও তাড়া করতে না পেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা!

Advertisement

শুরুতে মনে হচ্ছিল, আদৌ কি ঠিক দেখছি? যে দলে এত ম্যাচউইনার, এত ভাল ছন্দে রয়েছে সকলে, কী ভাবে তারা নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে হারতে পারে? বিশ্বাস করতে খারাপই লাগছিল। কিন্তু আরও একটি খবর মনটা হাল্কা করে দিয়ে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় জ়িম্বাবোয়ে ম্যাচের আগেই শেষ চারের রাস্তা পাকা হয়ে গিয়েছিল ভারতের। তাই ক্রেগ আর্ভাইনদের বিরুদ্ধে চাপমুক্ত ভারতীয় দলকে দেখতে পেলাম।

ভারত কেনই বা চাপে থাকবে? সূর্যকুমার যাদবের মতো একজন ক্রিকেটারই দলকে আরও চাঙ্গা করে দিয়েছে। প্রত্যেকটি দলকেই চিন্তা করতে হয়, কী করে মাঝের ওভারে দ্রুত রান তুলব। ভারতীয় দলের সেই চিন্তা দূর করে দিয়েছে সূর্য। জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ভারত যখন ১১.৫ ওভারে ৮৭-২, সেই সময় ব্যাট করতে নামে সূর্য। মাত্র ২৫ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থেকে ভারতকে পৌঁছে দিল ১৮৬-৫ স্কোরে। যে ধরনের শট ও খেলছে, তার জন্য কোনও বোলার তৈরি হয়ে আসতে পারে না। স্কুপ শট আটকানোর জন্য কী ফিল্ডিং সাজানো হবে? ফাইন লেগ অঞ্চলে ফিল্ডার রাখলে স্কোয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে চার মারছে। সূর্যকুমারের তাণ্ডব থামানোর কোনও উত্তরই ছিল না জ়িম্বাবোয়ের কাছে। ২০০৭ সালে এই কাজটাই করেছিল যুবরাজ সিংহ। ও দ্রুত রান করায় ভারতকে বিশ্বকাপ জুড়ে কখনও চাপে ফেলা যায়নি। সূর্যের ব্যাটে সেই ছায়া আবারও দেখতে পাচ্ছি।

Advertisement

সূর্যকুমারের সব চেয়ে বড় শক্তি, ও বোলারের জায়গা নষ্ট করে দেয়। বোলার এক রকম ভেবে এসে বল করে। ওর মধ্যে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। কারণ, অফস্টাম্পের বাইরের বলও ও স্কুপ করে লেগস্টাম্প দিয়ে চার মারতে পারে। মুম্বইয়ের ব্যাটাররা সাধারণত ক্রিকেট ব্যাকরণ মেনে ব্যাট করে। কারণ, ছোট থেকেই ওদের অনেক দ্রুত গতির উইকেটে খেলতে হয়। সেই পিচে তৈরি হয়ে আসা ব্যাটার কী ভাবে বলে বলে পেসারকে স্কুপ মারতে পারে, আমার জানা নেই। সূর্যকুমারই বর্তমান ক্রিকেটবিশ্বের মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি তারকা।

ভারতের বোলিং যদিও আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে। ভুবনেশ্বর কুমার ও আরশদীপ সিংহের সুইংই শেষ চারে ভারতীয় বোলিংয়ের অস্ত্র। প্রথম বলেই ভুবনেশ্বরের সুইংয়ে কভার ড্রাইভ মারতে গিয়ে ফিরে গেল ওয়েসলি মাধিভেরে। অসাধারণ ক্যাচ নিল বিরাট কোহলি। রেগিস চাকবভার প্যাডে লেগে আরশদীপের আউটসুইং (ডান-হাতির ক্ষেত্রে ইনসুইং) ছিটকে দেয় স্টাম্প। পাওয়ারপ্লেতে এ রকম সুইংই যে কোনও বিপক্ষকে ধরাশায়ী করে দিতে পারে। ইংল্যান্ড দলও উপরের সারির ব্যাটিংয়ের উপরে নির্ভরশীল। সেমিফাইনালে নতুন বলে এই জুটিই ভারতকে ভাল জায়গায় পৌঁছে দেবে। স্পিন বিভাগও অসাধারণ ছন্দে। আর অশ্বিন বেশি বৈচিত্র প্রয়োগ না করে অফস্পিনেই বিপক্ষকে চাপে রাখছে। তাই উইকেটও আসছে। আর শামি সব সময়ই রোহিতের সব চেয়ে নির্ভরযোগ্য বোলার। বিপক্ষের কোনও জুটি ভাঙতে হলেই শামির হাতে বল তুলে দেয়। অধিনায়কের আস্থার মর্যাদাও রাখে শামি।

তবে এ দিন অশ্বিনই কিন্তু রায়ান বার্ল ও সিকান্দার রাজ়ার জুটি ভেঙে ভারতকে বিপন্মুক্ত করে। তিন উইকেট পেল। দু’টি করে উইকেট শামি ও হার্দিক পাণ্ড্যর। মাত্র ১১৫ রানে গুটিয়ে যায় জ়িম্বাবোয়ে। শেষ চারের আগে এই বড় জয়, ভারতীয় দলকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

বিশ্বকাপে জিততে গেলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভাগ্যের। যা এখন পাকিস্তানকে সঙ্গ দিচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করার আগে পর্যন্ত বাবার আজ়ম কল্পনাও করতে পারেনি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কার্যত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলতে হবে তাদের। নেদারল্যান্ডস জেতায় ওরা আরও তেতে ওঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন