India vs England

ইডেনের প্রথম দলে কেন নেই ঘরের ছেলে? ব্যাখ্যা নেই অধিনায়কের, খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মহম্মদ শামির প্রত্যাবর্তন আরও পিছিয়ে গেল। অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব দল নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেননি। শামির কেন প্রথম একাদশে জায়গা হল না, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৭
Share:

মহম্মদ শামি। —ফাইল চিত্র।

চোট সারিয়ে এক বছরের বেশি সময় পর দলে ফেরা মহম্মদ শামি কি আছেন প্রথম একাদশে? না। ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন হল না দেশের অন্যতম সেরা জোরে বোলারের। তাঁকে বাদ দিয়েই প্রথম একাদশ বেছে নিয়েছেন কোচ গৌতম গম্ভীর এবং অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। অথচ তাঁর প্রত্যাবর্তন নিয়েই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ক্রিকেট মহলে।

Advertisement

টসের সময় সঞ্চালক রবি শাস্ত্রী ইংরেজ অধিনায়ক জস বাটলারকে ইংল্যান্ডের প্রথম একাদশ নিয়ে প্রশ্ন করলেও আশ্চর্যজনক ভাবে ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমারকে এই নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাই করেননি। ম্যাচের অন্যতম ধারাভাষ্যকার ইংল্যান্ডের নিক নাইটও বিস্ময় প্রকাশ করেন শামির না খেলা নিয়ে। যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির সময় শামিকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাতে চেয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। কিন্তু ফিটনেস সমস্যার জন্য টেস্ট সিরিজ় খেলা সম্ভব হয়নি তাঁর। সকলে মনে করেছিলেন, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলবেন শামি। কিন্তু প্রথম একাদশে না থাকায় শামির প্রত্যাবর্তন আরও পিছিয়ে গেল। মনে করা হচ্ছে, এই মুহূর্তে ভারতীয় দল সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে। সেখানে সম্পূর্ণ সুস্থ শামিকেই চায় দল। হয়তো সেই কারণেই ইডেনে প্রথম ম্যাচে তাঁকে খেলিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি গম্ভীরের দল।

Advertisement

বল করতে পারেন এমন ছ’জন ক্রিকেটার রয়েছেন ভারতের প্রথম একাদশে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জোরে বোলার হিসাবে ভারতীয় শিবিরের প্রথম পছন্দ আরশদীপ সিংহ। তিনি খেলছেন। তাঁর সঙ্গে জোরে বোলিংয়ের দায়িত্ব সামলাবেন দুই অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ড্য এবং নীতীশ কুমার রেড্ডি। স্পিনার হিসাবে দলে রয়েছেন বরুণ চক্রবর্তী, রবি বিশ্নোই এবং অক্ষর পটেল। দলের ভারসাম্যের স্বার্থেই হয়তো শামিকে রাখা যায়নি প্রথম একাদশে। টসের আগে ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা যখন গা ঘামাচ্ছিলেন, সে সময় শামির দু’পায়ের হাঁটুতেই মোটা টেপ জড়ানো ছিল। গত কয়েক দিন অনুশীলনের সময়ও শামির বাঁ পায়ের হাঁটুতে টেপ জড়ানো থাকছিল। তা হলে কি এখনও সম্পূর্ণ ফিট নন তিনি? উল্লেখ্য, বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলার সময়ও তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটু ফুলে যাচ্ছিল। যে কারণে তাঁকে আবার যেতে হয় বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। চিকিৎসকেরা যা যা পরামর্শ দিয়েছেন, সব মেনে চলার চেষ্টা করেছেন।

মাঠে ফেরার জন্য শামি মুখিয়ে রয়েছেন। বিসিসিআইয়ের পোস্ট করা একটি ভিডিয়োয় গত এক বছরের কঠিন সময় নিয়ে তিনি বলেন, “এক বছর অপেক্ষা করেছি এবং কঠোর পরিশ্রম করেছি। দৌড়নোর সময় ভয় লাগত, আবার না চোট পেয়ে যাই। ভাল ফর্মে থাকার সময়ে যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে চোট পাওয়া খুব দুর্ভাগ্যজনক। তার পরে এনসিএ-তে যাওয়া এবং ফিরে আসার চেষ্টা করা, বেশ কঠিন একটা কাজ। তবে আমার মনে হয়, চোট পেলে ক্রীড়াবিদ হিসাবে নিজেকে আরও শক্তিশালী করা যায়। কারণ মনের দিক থেকে নিজেকে শক্ত রেখে একই কাজ বার বার করে যেতে হয়।”

দু’দিন আগে সিএবি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “দেশের হয়ে খেলার খিদে কখনও শেষ হয়ে যাওয়া উচিত নয়। যদি আপনি দেশকে ভালবাসেন তা হলে ১০ বার চোট পেলেও ফেরার জন্য সব সময় লড়াই করবেন। যারা দেশ বা রাজ্যের হয়ে খেলে তারা কখনওই ভাবে না দুম করে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কথা।” শামিও লড়াই ছাড়ার পাত্র নন। আরও শক্তিশালী ভাবে ফিরতে চান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ওজন কমানোর জন্য গত কয়েক মাস প্রিয় বিরিয়ানি মুখে তোলেননি। সারা দিন ফল খেয়ে থেকেছেন। রাতে খেয়েছেন রুটি। এই অচেনা শামিকে কখনও দেখেননি তাঁর ঘনিষ্ঠেরা। বিরিয়ানি না খেয়ে থাকতে না পারা শামি শুধু ফল খেয়েছেন একটাই কারণে। আবার দেশের জার্সি পরবেন বলে। জার্সি পেয়েছেন। কিন্তু সেই জার্সি পরে ইডেনে নামা হল না তাঁর।

ভারতের প্রথম একাদশে তেমন বড় চমক নেই। মনে করা হচ্ছে, টানা ব্যর্থতায় চাপে থাকা কোচ গম্ভীর সম্ভবত পরীক্ষার পথে হাঁটতে চাননি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং মেন্টর গম্ভীর জানেন ইডেনের ২২ গজের চরিত্র। তিনি নিশ্চিত ভাবেই জয় দিয়ে সিরিজ় শুরু করতে চাইবেন। সম্ভবত সে কারণেও দীর্ঘ দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা শামিকে এই ম্যাচের প্রথম একাদশে রাখেননি। ঝুঁকিহীন প্রথম একাদশ বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

শামিকে প্রথম একাদশে রাখলেও হয়তো ঝুঁকি হত না তেমন। বোলার শামিকে নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। ব্যাটার শামিও বদলেছেন নিজেকে। এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী। এনসিএর অনুশীলন ম্যাচ বা বিজয় হজারে ট্রফিতে তাঁকে আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতে দেখা গিয়েছে। শামি জানেন, তীব্র প্রতিযোগিতার মাঝে শুধু ভাল বল করে প্রথম একাদশে জায়গা নিশ্চিত করা যায় না। তাই নিজের ব্যাটিংও পোক্ত করেছেন। শামি অপেক্ষায় থাকলেন। গম্ভীর তাঁকে অপেক্ষায় রাখলেন। হয়তো আরও বেশি জেদ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের উপর। কয়েক দিন আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সমাজমাধ্যমে নিজের একটি ভিডিয়ো দেন শামি। ২৭ সেকেন্ডের সেই ভিডিয়োয় দেখা যায়, একের পর এক বল করছেন তিনি। একই রকম গতি। একই রকম লাইন, লেংথ। বেশ কয়েকটি বলে উইকেটও ভেঙে দেন। ভিডিয়োর ক্যাপশনে শামি লেখেন, “গতি ও আবেগের মিশেলে ক্রিকেটবিশ্বকে দেখাতে তৈরি।” শামিকে দেখে বোঝা গিয়েছিল, পুরোদমে বল করছেন। কোনও সমস্যা নেই। শামি তৈরি, আত্মবিশ্বাসী। শুধু মাঠে নামার অপেক্ষা।

ইডেনের ২২ গজ সাধারণত ব্যাটিং সহায়ক হলেও শীতের সন্ধেয় কিছুটা সাহায্য পেতে পারেন বোলারেরাও। তাই ব্যাটিং গভীরতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়েছে ভারত। ব্যাট করতে পারেন এমন ক্রিকেটারেরা রয়েছেন আট নম্বর পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement