মাঠের মধ্যে বরফ গলাতে পারেননি। কিন্তু মাঠের বাইরে জ্বালিয়ে দিয়েছেন আগুন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
মঙ্গলবার ইউরো কাপে আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিআর সেভেনকে ছন্দে পাওয়া যায়নি। রিয়াল মাদ্রিদের মহাতারকা গোলও পাননি, দলকে জেতাতেও পারেননি। উল্টে পর্তুগালকে ১-১ আটকে দেওয়ার পর আইসল্যান্ডের উৎসব দেখে বেজায় চটেছেন।
আইসল্যান্ড এমন একটা দেশ, যার জনসংখ্যার (তিন লক্ষ তেইশ হাজার) থেকে টুইটারে সিআর সেভেনের ফলোয়ারের সংখ্যা (চার কোটি একত্রিশ লক্ষ) প্রায় একশো তিরিশ গুণ বেশি। তাদের কাছে আটকে গিয়ে এতটাই ক্ষিপ্ত রোনাল্ডো, যে বলে বসেছেন, ‘‘ওদের উৎসব দেখে মনে হচ্ছিল চ্যাম্পিয়নই হয়ে গিয়েছে। এই জন্যই এদের কিছু হয় না।’’ আইসল্যান্ডের রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিয়েও বিস্তর নিন্দেমন্দ করেছেন তিনি। ‘‘আইসল্যান্ড তো কিছুই করল না। শুধু ডিফেন্স, ডিফেন্স, ডিফেন্স। এতেই বোঝা যাচ্ছে ওদের মানসিকতা কতটা ছোট। ওরা ইউরোয় কিছুই করতে পারবে না,’’ সটান বলেছেন সিআর সেভেন। ম্যাচের শেষে আইসল্যান্ডের প্লেয়ারদের সঙ্গে হাতও মেলাননি।
রোনাল্ডোর এই বিস্ফোরণের পর আইসল্যান্ডের পাল্টা আক্রমণ আসতেও সময় লাগেনি। ‘‘রোনাল্ডো তো হারলেই কাঁদুনি গায়। কিছুতেই হার মেনে নিতে পারে না। ও কি ভেবেছিল আমরা ওদের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার মতো খেলব আর ও মাঠময় ডাইভ দিয়ে বেড়াবে! আমরা ওকে এক ফোঁটাও বেশি পাত্তা দিইনি,’’ বলেছেন আইসল্যান্ডের ডিফেন্ডার কারি আর্নাসন। আইসল্যান্ডের এক প্রাক্তন খেলোয়াড় হার্মান হেইডারসন আবার বলেছেন, ‘‘রোনাল্ডো মনে হয় ভেবেছিল ওকে প্লেটে করে গোল সাজিয়ে দেওয়া হবে। ও যদি আইসল্যান্ডের প্রত্যেকটা ফুটবলারের মতো পরিশ্রম করত, তা হলে এই কথাগুলো বলতে পারত না।’’
পর্তুগালের জার্সিতে ১২৭ নম্বর ম্যাচ খেলতে নামা রোনাল্ডো যদিও মনে করেন, মঙ্গলবার তাঁদের বিপক্ষের ‘ভাগ্য ভাল ছিল’। তাই ম্যাচটা ড্র হয়েছে। এতে আইসল্যান্ডের খুব বেশি কৃতিত্ব নেই। উত্তরে আর্নাসন বলছেন, ‘‘রোনাল্ডো এ সব বলায় আমাদের জন্য জয়টা আরও মধুর হয়ে উঠল। রোনাল্ডো কি ম্যাচে সুযোগ পায়নি? কিন্তু গোল করতে পারল কোথায়!’’ কাটা ঘায়ে
আরও নুনের ছিটে দিয়ে আর্নাসনের মন্তব্য, ‘‘এই কারণেই রোনাল্ডো কোনও দিন মেসির মতো হতে পারবে না। মেসি সব সময় ওর থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকবে। রোনাল্ডো দুর্দান্ত ফুটবলার হতে পারে, কিন্তু সেই মাপের মানুষ নয়।’’
এর আগেও বড় মঞ্চে ম্যাচ হেরে রোনাল্ডোর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখেছে বিশ্ব। ২০১০ বিশ্বকাপে স্পেনের কাছে শেষ ষোলোয় হেরে ছিটকে গিয়েছিল পর্তুগাল। সেই ম্যাচেও গোল না পেয়ে হতাশ ও ক্রুদ্ধ রোনাল্ডো মাঠ ছাড়ার সময় ক্যামেরার দিকে থুতু ছিটিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এ বারও তাঁর মন্তব্যের জেরে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। কেউ কেউ বলেছেন, ‘আইসল্যান্ডের গোলের উৎসব নিয়ে এত কথা বলছেন। রোনাল্ডো নিজে গোল করলে কেমন উৎসব করেন সেটা কি মনে নেই?’ তা ছাড়া, এমন তো নয় ম্যাচটা ড্র করে ইউরো থেকে ছিটকে গিয়েছে তাঁর দল। তা হলে এতটা আক্রমণাত্মক মন্তব্য করার কারণ কী? এতে তো তাঁর খেলোয়াড়ি মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
রোনাল্ডো ভক্তরা অবশ্য মঙ্গলবারের ম্যাচেই একটা আশার ইঙ্গিত খুঁজে পেয়েছেন। ২০১২-র ইউরোতেও প্রথম ম্যাচে জ্বলে উঠতে পারেননি রোনাল্ডো। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই চেনা ছন্দে পাওয়া গিয়েছিল তাঁকে। পর্তুগালকে সে বার একাই সেমিফাইনাল পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন সিআর সেভেন। এ বারও তাই দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে মাঠের বিস্ফোরণের অপেক্ষায় ভক্তকুল।