দেবশ্রী: বাংলার নতুন স্বপ্ন।
চিন্তায় বহু রাত ঘুমোতে পারেননি তিনি। বেঙ্গালুরুর শিবিরে অনুশীলন করেছেন দিনভর। আর রাতে বিছানায় শুয়ে শুধুই কেঁদেছেন। খবর ছড়িয়েছিল, তাঁর যোগ্যতামান থাকা সত্ত্বেও কেরলের এক মেয়ে অ্যাথলিটকে পিছনের দরজা দিয়ে ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে। বাদ দেওয়া হবে তাঁকে। যে ঘটনা আগে ঘটেছে বেশ কয়েক বার।
অনেক নাটকের পর শেষ পর্যন্ত তাঁর সামনে রিও অলিম্পিক্সের দরজা খুলল শনিবার দুপুরে। মেয়েদের ষোলোশো মিটার রিলে দলে সুযোগ পেলেন বাংলার দেবশ্রী মজুমদার। কোচ আর এস সাঁধু যখন তাঁকে খবরটা দেন, তখন দেবশ্রীর বিশ্বাসই হচ্ছিল না। রিও-র টিকিট প্রাপ্তির খবরটা সঠিক কি না, সেটা জানতে তিনি উঁকি দিয়েছিলেন তালিকায় তাঁর নীচে নাম থাকা দুই অ্যাথলিটের ঘরে। শেষ পর্যন্ত প্রিয়াঙ্কা পানওয়ার আর অনু রাঘবনের ঘর খালি দেখে আনন্দে শপিং করতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। বেঙ্গালুরুতে সন্ধ্যায় ফোনে ধরা হলে এশিয়াডের রিলেতে সোনা জেতা মেয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমার রানিং শ্যু-টা ছিঁড়ে গিয়েছিল। ঠিক করেছিলাম, অলিম্পিক্স টিমে সুযোগ পেলেই নতুন জুতো কিনব। সেটাই কিনতে বেরিয়েছি। আবার তো দৌড়তে হবে। তা-ও আবার অলিম্পিক্সের ট্র্যাকে।’’
সুস্মিতা সিংহ রায় নামার বহু দিন পর ফের অলিম্পিক্সে ট্র্যাকে নামবেন আর এক বঙ্গললনা। ‘‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দৌড়নোর পর আমার স্বপ্ন ছিল অলিম্পিক্স। সে জন্যই তো গ্রাম ছেড়ে মাসের পর মাস পড়ে থেকেছি ক্যাম্পে। সাইতে। বাবার স্বপ্ন সফল করতে পেরেছি। কত দিন যে গ্রামে যাইনি। খুব যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু শুনলাম এখান থেকেই সরাসরি রিও যাবে টিম,’’ বলছিলেন উচ্ছ্বসিত দেবশ্রী। গত কয়েক মাস স্বপ্ন সফল করার জন্য যিনি পোল্যান্ড, তুরস্ক, পাতিয়ালা, বেঙ্গালুরু করে বেড়িয়েছেন।
মেয়েদের রিলে টিমের তালিকায় চার নম্বরে নাম ছিল দেবশ্রীর। কিন্তু হঠাৎই অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন জানিয়ে দেয়, ৩৮ জনের বদলে ৩৬ জনকে নিয়ে যাওয়া হবে। রিলে দলে ঢুকবেন পিটি উষার ছাত্রী টিন্টু লুকা। যিনি ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত ৮০০ মিটার দৌড়ে রিও-র টিকিট পেয়েছেন। এর পরই ঝামেলা শুরু হয়। টিন্টু ঢুকলে বাদ যাবে কে, তা নিয়েই সমস্যা তৈরি হয়। অ্যাথলেটিক্সে কেরল লবি প্রচণ্ড শক্তিশালী। তারাই ছয় নম্বরে নাম থাকা অনুকে ঢোকানোর চেষ্টা করতে থাকে দেবশ্রীকে বাদ দিয়ে। কিন্তু এ দিন রাতে দিল্লিতে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট আদিম সুমারিওয়ালাকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘‘তালিকায় শেষ দু’জন বাদ যাবে। দেবশ্রী টিমে থাকছে।’’
এত নাটকের পর রিওগামী ভারতের মেয়েদের রিলে দল নির্বাচিত হলেও পদক পাওয়ার সম্ভবনা কতটা? ‘‘আমরা এখানে ক্যাম্পে যে সময়ে দৌড়েছি (৩ মিনিট ২৭.৮৪ সেকেন্ড) তার চেয়ে আরও অনেক ভাল সময় করতে হবে পদক পেতে হলে। যে টিম হয়েছে তাতে সময় আরও ভাল হবেই,’’ বলে দিলেন দেবশ্রী। সুযোগ পাওয়ার পর যে উচ্ছ্বাস ছিল বাঙালি মেয়ের কথায়, পদকের প্রশ্নে সেই গলার জোর অবশ্য পাওয়া গেল না।