সুশান্ত পাল রোজ সকাল ৮টার মধ্যে দশকর্মার দোকান খুলে ফেলেন। কিন্তু এ বারে দোকান বন্ধ রেখেই ভোর ভোর শিলিগুড়ি গিয়েছেন তিনি।
রেলের টিকিট কাটার এজেন্সি রয়েছে মালবাজারের ঘড়ি মোড়ের ব্যবসায়ী রঞ্জন প্রসাদের। ব্যবসা ভুলে শিলিগুড়িমুখী তিনিও।
ওদলাবাড়ির অভি বসু ঠিকাদারির কাজ করেন। ডুয়ার্স ঘুরেই ব্যবসার কাজ করত হয় তাঁকে। কিন্তু তাঁরও গন্তব্য শিলিগুড়ি।
কারণ সবারই এক। বাঙালির সেরা ফুটবল লড়াই, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ডার্বি। মরসুমের সেই প্রথম ডার্বির উত্তাপ এতটাই, যে শিলিগুড়ির গণ্ডি পেরিয়ে সেই তাপ এসে পড়ছে ৬০ কিলোমিটার দূরের ডুয়ার্সেও। ডুয়ার্সের মহকুমা শহর মালবাজার এবং ওদলাবাড়ি, চালসা এমনকী প্রত্যন্ত চা বাগানগুলোতেও রীতিমতো ফুটবল জ্বর অনুভব করা যাচ্ছে। টিকিট কাটতে পালা করে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন ডুয়ার্সের বাসিন্দারা। ভোর ছটাতেই একদল ডুয়ার্স থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। বন্ধু, পরিচিতেরা আবার ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে মধ্যে গিয়ে তাঁদের পিছনে দাঁড়াচ্ছেন। একজনকে সর্বোচ্চ ২টি করে টিকিট দেবার ফলে ডুয়ার্সের ফুটবলপ্রেমীদের টিকিট কাটতে ভরসা এমন ‘জোট’-ই।
বহু পরিশ্রমের পর অবশেষে রাতে যখন তাঁরা টিকিট হাতে ফিরে আসছেন তখন তাদের নিয়েই উৎসবে মাতছেন বন্ধুরা। ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে টিকিট-সহ ছবি তুলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মোহনবাগানের সমর্থক তুলনায় কম থাকলেও জোট বেঁধে প্রস্তুত তাঁরাও। মালবাজারের জুন গুপ্তই যেমন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সঙ্গে ওঠাবসা করে গেলেও মাঝেমধ্যেই পাল্টা আওয়াজ দিচ্ছেন। তিনি জানালেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের ঘরের মাঠ বলে ওরা হয়তো জোরে গলা ফাটাবে, কিন্তু ম্যাচ মোহনবাগানই জিতবে।’’
মেটেলি ব্লকের নাগেশ্বরী চা বাগানের কর্মী দীপ ভট্টাচার্যও টিকিট কেটেছেন। নাগেশ্বরীর মত প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। খেলা দেখতে হলে যেতে হবে দুপুরে। ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে। তাও উৎসাহের কমতি নেই। গাড়িভাড়াও করে ফেলছেন ফুটবলপ্রেমীরা। দীপের কথায়, ‘‘বললেন সমস্যা মনে করলেই সমস্যা। আমরা গাড়িগুলোকে সব একসঙ্গে রওনা করাবার পরিকল্পনা করছি। যাতে সড়ক পথে নিরাপত্তাও থাকে, আবার একটা মিছিলের রূপও দেওয়া যায়।’’