Sports News

কেঁদে ফেলল ধীরাজ, সান্ত্বনা ঘানা গোলকিপারের

এই টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারদের মধ্যে ধীরাজ কিন্তু প্রথম তিনে থাকবেই। ওর যেন হতাশাটা সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে অনেকগুন।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৫৫
Share:

ম্যাচশেষে ভারতীয় গোলকিপার ধীরাজকে সান্ত্বনা ঘানার গোলকিপারের।

মাঠের মাঝখানে দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ গুজে বসেছিল ধীরাজ মইরাংথেম। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আনোয়ার, রহিম, বরিসরা। কয়েক সেকেন্ড আগেই ম্যাচ শেষের বাঁশি বেজেছে স্টেডিয়ামে। যে স্টেডিয়াম এতক্ষণ ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’ চিৎকারে সরগরম হয়ে উঠেছিল সেই স্টেডিয়ামে শব্দের ডেসিবেল যেন দ্বিগুন হয়ে গেল কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই।হওয়ার কথা ছিল উল্টোটাই। শব্দ একটাই, ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’। বাকিরা যখন উঠে রিজার্ভ বেঞ্চে ফিরছে তখনও মাঠের মধ্যে বসে ধীরাজ।

Advertisement

আরও পড়ুন: হারের জ্বালা থেকে ভারতীয় দলকে মুক্তি দিল ৫২ হাজারের গ্যালারি

এই টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারদের মধ্যে ধীরাজ কিন্তু প্রথম তিনে থাকবেই। ওর যেন হতাশাটা সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে অনেকগুন। বৃহস্পতিবারও ঘানার বিরুদ্ধে যে গোলের নিচে একাই একাধিকবার ভারতের পতন রোধ করেছে। রেগে যাচ্ছিল রক্ষণের ভুল দেখে। ম্যাচ শেষে চোখের জল সামলাতে পারেনি, তাই লুকোচ্ছিল নিজেকে। ঘানা গোলকিপার এসে টেনে তুলল ধীরাজকে। জড়িয়ে ধরল। তার পরই গুটিগুটি পায়ে রিজার্ভ বেঞ্চে ফিরল সুব্রত, গুরপ্রীতদের পরবর্তী প্রজন্ম। তখনও তার চোখে জল। সতীর্থরাই স্বান্ত্বনা দিল। একরাশ হতাশা, একটা স্বপ্নের ভেঙে যাওয়া সবই ছিল। সঙ্গে ছিল অনেকটা শিক্ষা। ওদের মুখে এত হতাশার মধ্যেও হাসি ফোঁটালেন সমর্থকরা। গ্যালারির সামনে গিয়ে সেলফিও তুলল অনেক ফুটবলার।

Advertisement

কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ল গোটা দল।

ম্যাচ শেষে মিক্সজোন দিয়ে বেরতে বেরতে থমথম করছিল সবার মুখ। আনোয়ার আলিকে চোট নিয়েও নামিয়ে দিয়েছিলেন মাতোস। একটা সময়ের পর অসুবিধেই হচ্ছিল। মেনে নিল দলের নির্ভরযোগ্য এই ডিফেন্ডার। বলছিল, ‘‘হ্যাঁ একটু অসুবিধে হচ্ছিল। কিন্তু খেলতে তো হতই। খারাপ লাগছে কিন্তু এই সমর্থন অনেকটাই হতাশা কাটিয়ে দিয়েছে। এটাই তো প্রাপ্তি।’’ প্রথম দিন থেকে যে লড়কে লেঙ্গে মনোভাব ছিল সেটা যেন আজ অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। তবুও এখান থেকেই নতুন পথে চলা শুরু করতে চায় সকলে। ভবিষ্যৎ কী ওদের সেই বার্তা এখনও এসে পৌঁছয়নি ওদের কাছে। কিন্তু কয়েকটাদিন বিশ্ব ফুটবলের ঘোরেই থাকতে চায় ওরা। টেলিভিশনের পর্দায় যখন অন্যদের খেলাগুলো ভেসে উঠবে তখন কি মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠবে না?

আরও পড়ুন: আমাদের প্রতিপক্ষ কিন্তু নেপাল, ভুটান ছিল না: মাতোস

জবাব এল অধিনায়ক অমরজিতের কাছ থেকে। ‘‘খারাপ লাগা তো আছেই। আমরা দ্বিতীয়ার্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিছুটা মানসিকও। হয়তো সব হিসেব-নিকেশগুলো চেপে বসেছিল। কিছুটা চাপ হয়ে গিয়েছিল। যেখান থেকে আমরা বেরতে পারলাম না। তবে অনেক কিছু শিখলাম যা আমাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’’ একই কথা বলে গেল সঞ্জীব স্ট্যালিনও। গড়গড় করে ইংরেজি বলতে পারে। একজন পেশাদার ফুটবলার হয়ে ওঠার মতো সব গুণই রয়েছে তার মধ্যে। তাই চটজলদি উত্তরও পাওয়া গেল তার কাছ থেকে। ‘‘খারাপ লাগা তো থাকবেই। কিন্তু এই সমর্থকরা সব কিছু ভুলিয়ে দিল। আত্মবিশ্বাসটা বাড়িয়ে দিল। আমরা পারব। চাই আরও অনেক বড় দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ।’’ কোচের কথারই যেন ইকো শোনা গেল তার গলায়। সঙ্গে সংযোজন, ‘‘আসলে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না গ্রুপের এমন কী টুর্নামেন্টের সব থেকে কঠিন দলের সঙ্গে খেললাম। ওদের স্পিড দেখেছেন? প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার অভাবে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়লাম।’’

ম্যাচ শেষে হতাশা গ্রাস করল দলের ফুটবলারদের।

ভারতীয় দলের বিশ্বকাপ শেষ। আর এই শেষ থেকেই শুরুর কথা বলে গেল এই ছোট ছোট ছেলেগুলো। দেখিয়ে গেল একটা নতুন পথ। সামনে এখন অনেক পরিকল্পনা ফেডারেশনের। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ। যে দলে এখান থেকে যে বেশ কয়েকজনের ডাক আসবে সেটা স্বাভাবিক। তার সঙ্গে রয়েছে এই দলের সঙ্গে কিছু অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলার মিশিয়ে আই লিগ খেলানোর পরিকল্পনাও। সব মিলে খুব বেশি দিন কেউ বিশ্রাম পাবে না। তার আগে কিছুটা সময় পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চায় ওরা। তাকিয়ে ফেডারেশনের দিকে।

ছবি: এআইএফএফ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন