মাদুরোর পাশে মারাদোনা, শুরু নয়া বিতর্ক

ভেনেজ়ুয়েলার বামপন্থী নেতা মাদুরোর সঙ্গে তাঁর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সে দেশে গিয়ে মারাদোনা বন্ধুর হয়ে নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১৭
Share:

ক্ষুব্ধ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তোপ মারাদোনার। ফাইল চিত্র

ভেনেজ়ুয়েলার বামপন্থী রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোর প্রশংসা করে নতুন বিতর্কে জড়ালেন দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। সেই সঙ্গে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর তীব্র প্রতিবাদ করলেন। এমনকি তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিদ্রুপে বিদ্ধ করতেও ছাড়লেন না।

Advertisement

আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি এখন মেক্সিকোর দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব দোরাদোস দে সিনালোয়ার কোচ। তাঁর ক্লাব রবিবার তাম্পিকো মাদেরোকে ৩-২ গোলে হারানোর পরে মারাদোনা সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মন্তব্য করেন, ‘‘এই জয় আমি নিকোলাস মাদুরো আর ভেনেজ়ুয়েলার মানুষকে উৎসর্গ করছি। যারা এই মুহূর্তে অসম্ভব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।’’ এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মেক্সিকোর ফুটবল ফেডারেশন মারাদোনার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ফেডারেশনের একাধিক নৈতিক আচরণ বিধি ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু মারাদোনা সে সব বিধির পরোয়া করেননি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একেবারে সরাসরি বলে দেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দুনিয়ার শেরিফ মনে করে। দাবি করে, বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী বোমা ওদের কাছে আছে। আর যে কোনও সময় তা যে কোনও জায়গায় ফেলে আসতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন আমাদের সঙ্গে সেটা কিছুতেই হতে দেব না।’’

একটা মামুলি ফুটবল ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে এসে মারাদোনা কার্যত রাজনৈতিক নেতার মতো বক্তব্য রাখেন। ভেনেজ়ুয়েলার বামপন্থী নেতা মাদুরোর সঙ্গে তাঁর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সে দেশে গিয়ে মারাদোনা বন্ধুর হয়ে নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নিয়েছিলেন। যে নির্বাচনকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে দিয়েছে অবৈধ এবং অনৈতিক। এই মুহূর্তে ভেনেজ়ুয়েলা তীব্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মাদুরোর বিরুদ্ধে সক্রিয় ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে পঞ্চাশের বেশি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে বিরোধী নেতা খুয়ান গুয়ায়দোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। যা মানেনি রাশিয়া, তুরস্ক, চিনের মতো দেশ। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁকেই ভেনেজ়ুয়েলার প্রেসিডেন্ট মনে করছে। এমনকি সে দেশে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টাও করছে বলে অভিযোগ। যে কারণে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মাদুরো পুনর্নিবাচিত হলেও সেই নির্বাচনকে বলা হচ্ছে অবৈধ।

Advertisement

মারাদোনার সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার অন্য বামপন্থী নেতাদের সম্পর্ক চিরকালই ভাল। এক সময় তিনি কিউবার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোকে নিজের ‘দ্বিতীয় পিতা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। হাভানায় তাঁর নিয়মিত যাতায়াতও ছিল। এক সময় চিকিৎসার জন্য সেখানে তিনি দীর্ঘ দিন থেকেছিলেন। হালফিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিনি প্রবল সমালোচক। ট্রাম্পের সঙ্গে মারাদোনা একবার তুলনা করেছিলেন সোনালি চুলের জনপ্রিয় পুতুল-চরিত্র চিরোলিতার। সত্তরের দশকে আর্জেন্টিনার এক টিভি অনুষ্ঠানে এই পুতুল-চরিত্র দারুণ জনপ্রিয় ছিল। মারোদানা অতীতে একবার মন্তব্য করেন, ‘‘যতই চেষ্টা করুক, ওদের ওই চিরোলিতারও (ট্রাম্পের) আমাদের কিনে নেওয়ার ক্ষমতা নেই।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ দিকে, মেক্সিকোর ফুটবল ফেডারেশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি মারাদোনার মন্তব্যের তদন্ত শুরু করেছে। ফেডারেশনের একটি ধারায় বলা আছে, ফুটবলের সঙ্গে জড়িত সবাইকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তদন্তে ‘দোষী’ প্রমাণিত হলে ছিয়াশির বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার সেরা ফুটবলার নির্বাসিত হতে পারেন। অথবা হতে পারে আর্থিক জরিমানা। অবশ্য আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির সঙ্গে চিরকালই বিতর্ক বস্তুটি পাশাপাশি হেঁটেছে। কোকেন কেলেঙ্কারি থেকে নারীঘটিত অপবাদ— বাদ যায়নি কিছুই। কিন্তু এত কিছুর পরেও বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার যে একই রকম অবিচলিত আছেন তা আর একবার স্পষ্ট হয়ে গেল মাদুরোর ঘটনায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন