হায়দরাবাদের সেই অনুষ্ঠান।
সচিন তেন্ডুলকরের হাত থেকে উপহার নেওয়া বিএমডব্লিউ গাড়িটি পরিস্থিতির চাপে ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন দীপা কর্মকার। বদলে তাঁকে টাকা দিতে রাজি ওই গাড়ি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। টাকা হাতে পেলে একটি ছোট গাড়ি কিনবেন ঠিক করেছেন রিও অলিম্পিক্সে ইতিহাস সৃষ্টি করা জিমন্যাস্ট। বাকি টাকা রেখে দেবেন নিজের অ্যাকাউন্টে।
আগরতলায় নারী নির্যাতন বিরোধী একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফেরার পথে বুধবার দীপা বললেন, ‘‘সচিনের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়া গর্বের ব্যাপার। ওই গাড়িটি নিজের কাছে রাখতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু ত্রিপুরায় ওই গাড়ির কোনও সার্ভিসিং সেন্টার নেই। একটা কাঁচ ভাঙলেও কলকাতায় যেতে হবে। যা কোনও মতেই সম্ভব নয়। তাই আমি গাড়িটি ফেরত দিতে চাইছি।’’
ডিসেম্বরে জার্মানিতে চ্যালেঞ্জার্স কাপে অংশ নিতে যাওয়ার কথা অলিম্পিক্সে চতুর্থ হওয়া মেয়ের। কিন্তু গাড়ি ফেরত দেওয়া নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি হওয়ায় বিরক্ত তিনি। তাঁর পাশে বসে কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী বললেন, ‘‘হায়দরাবাদে আমরা বিএমডব্লিউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা আমাদের সমস্যাটা বুঝেছে। আমরা বলেছি কেটেকুটে যা হবে সেটাই দীপার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিন। এতে সচিনকে অসম্মান করা হচ্ছে বলে অনেকে যে বিতর্ক তুলছে সেটা খুব খারাপ লাগছে। আমরা কি রাস্তায় অত বড় গাড়ি ফেলে রেখে নষ্ট করব?’’
কত টাকা ফেরত পেতে পারেন দীপা? আগরতলার মেয়ের কাছে যে বিএমডব্লিউটি আছে তার দাম উনচল্লিশ লাখ টাকার কাছাকাছি। সব কিছু বাদ দিয়ে কোচের আশা তিরিশ-বত্রিশ লাখ টাকা পাবেন তাঁর ছাত্রী।
রিও অলিম্পিক্সে দুই পদকজয়ী পিভি সিন্ধু ও সাক্ষী মালিকের সঙ্গে জিমন্যাস্ট দীপাকেও বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দিয়েছিল হায়দরাবাদ ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন। সিন্ধুর কোচ গোপীচন্দ দেওয়া হয়েছিল ওই গাড়ি। সচিনের হাত থেকে সবাই নিয়েছিলেন গাড়ির চাবি। অ্যাসোসিয়েশনের সচিব চামুণ্ডেশ্বরনাথ এ দিন বলেছেন, ‘‘দীপা আমাকে ফোন করেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওদের গাড়ি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলতে বলি। ওরা কথা বলেছে। যেটা ওদের সুবিধা হবে সেটাই ব্যবস্থা করে দেব।’’
আগরতলায় বাড়ির সামনের এই রাস্তায় বিএমডব্লিউ চালানো নিয়েই বিব্রত দীপা কর্মকার।-বাপি রায়চৌধুরী
দীপা চাইছিলেন বিএমডব্লিউ কোম্পানির কাছ থেকেই ছোট গাড়ি পেলে সেটা নেবেন। দীপার কোচ বললেন, ‘‘ওদের কাছে সেটা বলেছিলাম। কিন্তু কোম্পানির লোকেরা জানিয়েছে উনচল্লিশ লাখের কমে কোনও গাড়ি তাদের নেই। তাই টাকা চেয়েছি।’’
সরকারিভাবে সার্ভিসিং সেন্টার নেই জানালেও যেটা দীপারা জানাননি তা হল, ত্রিপুরার রাস্তা-ঘাটও ভাল নয়। আগরতলার অভয়নগরে দীপার বাড়ির সামনের রাস্তা প্রায় কুড়ি ফুট চওড়া। এই রাস্তা দিয়ে সব ধরনের গাড়ি চলে| কিন্তু শহরের বাকি রাস্তার হাল খারাপ। সেটাও দীপাদের বিএমডব্লিউ ফেরত দেওয়ার অন্যতম কারণ বলে খবর।
গাড়ি নিয়ে সমস্যা চললেও অনুশীলন অবশ্য শুরু করে দিয়েছেন দীপা। অ্যাপারেটাস নিয়ে না শুরু করলেও ফিটনেস ট্রেনিং করছেন তিনি। বিশ্বেশ্বরবাবু বললেন, ‘‘জার্মানির টুর্নামেন্ট পিছিয়ে গিয়েছে। নভেম্বরে অনুশীলন শুরু করব পুরোদমে।’’ দুর্গাপুজোয় এ বার আগরতলায় কুড়িটি পুজোর উদ্বোধন করেছেন দীপা। এর বাইরেও প্রতিদিন নানা অনুষ্ঠানে যেতে হচ্ছে তাঁকে। অনুশীলন শুরু করলেও এ সব সোনার মেয়ের মনঃসংযোগে কতটা ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে সেটাই দেখার।