.
মা-বাবা, বাড়ির লোকজনকে নিয়ে রাত এগারোতেই বসে গিয়েছিলাম টিভির সামনে। দীপার গলায় অলিম্পিক্স পদক দেখতে।
ইস্, যদি ম্যাটে কোমরটা না ছুঁয়ে যেত ওর! তা হলেই তো রিওতে ভারতের গেমস ভিলেজে উৎসব শুরু হয়ে যেত।
আগে থেকেই জানতাম ফাইনালে প্রথমে সুকাহারা, তার পরে প্রোদুনোভা দীপার স্ট্র্যাটেজি। ঠিকঠাক খেটেও গিয়েছিল। কিন্তু শেষবেলায় ওর ভাগ্যটা ক্লিক করল না। প্রোদুনোভার ল্যান্ডিংয়ের সময় দীপার কোমরটা ম্যাট ছুঁয়ে গেল।
আমার বুকটা কেঁপে উঠেছিল তখনই। কারণ, প্রোদুনোভায় ল্যান্ডিংয়ের সময় হাঁটুর জোর লাগে। কোমর ম্যাটে ঠেকা মানেই পয়েন্ট কাটা যাবে। মন বলছিল, এটাই না পদকের স্বপ্ন চুরমার করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ঠিক সেটাই হতে দেখলাম।
সুকাহারা ভল্টে কিন্তু ও খারাপ করেনি। কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে দীপা এই সুকাহারায় পেয়েছিল ১৪.৬। সেখানে এ দিন ফাইনালে ওর পয়েন্ট ১৪.৮। এর পরে ওর প্রোদুনোভার ল্যান্ডিংটা যদি ঠিকঠাক হত, তা হলে স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতটা হয়তো অন্য রকম ভাবে আসত আমাদের সবার কাছে।
যদিও ভাগ্যের হাতে মার খেয়ে দীপার কানের পাশ দিয়ে অলিম্পিক্স পদক ছিটকে যেতে দেখে কোনও দুঃখ বা আফসোস নেই আমার। বরং গর্ব হচ্ছে। একটা মেয়ে অলিম্পিক্স জিমন্যাস্টিকসের ভল্টে আট জনের মধ্যে আট নম্বর হিসেবে ফাইনালে উঠল। এক সপ্তাহের মধ্যেই ফাইনালে চার ধাপ এগিয়ে গিয়ে চতুর্থ হয়ে শেষ করা! বেজিং অলিম্পিক্সের পদক জয়ীকেও পিছনে ফেলে! দীপা পদক না পেলেও এই অ্যাচিভমেন্টটা অনেক বড়।
পদক না পেলেও রিওতে দীপার পারফরম্যান্সকে উপেক্ষা করার কোনও রাস্তা নেই। আমাদের দেশের জিমন্যাস্টিকস দীপার এই পারফরম্যান্সে অনেকটা এগিয়ে গেল। অলিম্পিক্স জিমন্যাস্টিকসে সেরাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতের একটা মেয়ে চতুর্থ! বিশ্বাস করতেই পারছি না।
এক বছর আগেও দীপা কর্মকার ছিল দেশের এক অচেনা জিমন্যাস্ট। আর এখন দীপাকে নিয়ে দেশজুড়ে টুইটারে হইহই পড়ে গিয়েছে। এমন দৃশ্য এ দেশের কোনও জিমন্যাস্ট এর আগে কল্পনা করতে পেরেছে কি?
একটাই আক্ষেপ হচ্ছে আবার। ইস, যদি প্রোদুনোভার সময় ওর কোমরটা ম্যাটে না ছুঁয়ে যেত!