ডুরান্ড কাপ

জিতেও মানসিক যন্ত্রণায় বিদ্ধ নবিদের মুখে নেই হাসি

শ্রীনগর ছাড়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দানিশ, উজায়র নবি বাটদের। তার উপরে সোমবার ইদ। জিতেও তাই কোনও উচ্ছ্বাস নেই। অবশ্য ম্যাচের ৯০ মিনিট কিন্তু ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫৭
Share:

উৎসব: গোলের পরে লিংডোকে আলিঙ্গন সুভাষের। নিজস্ব চিত্র

রিয়াল কাশ্মীর ৪ • আর্মি গ্রিন ০

Advertisement

ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেড়ে বসে মাঠে মাথা ঠেকালেন রিয়াল কাশ্মীরের ফুটবলারেরা। তার পরে গ্যালারির দর্শকের দিকে হাত নেড়ে ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়লেন দানিশ ফারুখেরা। টানা দু’ম্যাচ জিতে ডুরান্ড কাপ সেমিফাইনালের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আশ্চর্যজনক ভাবে উচ্ছ্বাসহীন রিয়াল কাশ্মীরের ফুটবলারেরা। কড়া সেনা পাহারায় টিম বাসে উঠে কল্যাণী স্টেডিয়াম থেকে হোটেলে ফিরে গেলেন।

জয়ের উল্লাস উধাও উদ্বেগে!

Advertisement

শ্রীনগর ছাড়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দানিশ, উজায়র নবি বাটদের। তার উপরে সোমবার ইদ। জিতেও তাই কোনও উচ্ছ্বাস নেই। অবশ্য ম্যাচের ৯০ মিনিট কিন্তু ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো। ৩ মিনিটে চেস্টারপল লিংডোর গোলে এগিয়ে যায় কাশ্মীর। ৩৪ মিনিটে গোল করেন সুভাষ সিংহ। ৪০ মিনিটে ফের গোল চেস্টারপলের। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই জয় নিশ্চিত করে ফেলে কাশ্মীর। সংযুক্ত সময়ে চতুর্থ গোল করেন ভিকি মিতেই। পুরো ম্যাচে আর্মি গ্রিন দলের ফুটবলারদের কার্যত বল ধরতেই দেননি দানিশেরা। অথচ খেলা শেষ হওয়ার পরে কাশ্মীরের ফুটবলারদের দেখলে মনেই হবে না, জিতে মাঠ ছেড়েছেন তাঁরা।

মাঠে নেমে ফুটবলারদের বদলে যাওয়ার রহস্যটা কী? কাশ্মীরের কোচ ডেভিড রবার্টসন শোনালেন চমকপ্রদ কাহিনি। বললেন, ‘‘আমাদের দলে পাঁচ জন ফুটবলার রয়েছে, যাদের বাড়ি শ্রীনগরে। এখানে আসার পর থেকে ওরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। ফলে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে কারও পক্ষে মাঠে নেমে সেরাটা দেওয়া অসম্ভব। কোচ হিসেবে আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল, অন্তত ৯০ মিনিট ওদের সব কিছু ভুলিয়ে দেওয়া। যাতে খোলামনে খেলতে পারে। আমি সেটাই সফল ভাবে করতে পেরেছি।’’

কাশ্মীর দলে শ্রীনগরের পাঁচ ফুটবলার যেমন রয়েছেন, তেমনই বাঙলার ঋত্বিক দাস, মণিপুরের সুভাষ সিংহ, আইভরি কোস্টের বাজ়ি আর্মান্ড, জ়াম্বিয়ার অ্যারন কাটবি, নাইজেরিয়ার লাভডে ওকেচুকু-র মতো ফুটবলারেরাও আছেন। বিদেশি ও কাশ্মীরের বাইরের ফুটবলারদের উপরেই রবার্টসন দায়িত্ব দিয়েছেন নবি, দানিশদের উদ্বুদ্ধ করার। কী ভাবে? রবার্টসন বললেন, ‘‘ওদের বলেছি, তোমরাও দিনের পর দিন পরিবারের থেকে দূরে থাক। মাঝেমধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তোমাদের। দানিশদেরও এখন এক অবস্থা। তোমরা যে ভাবে নিজেদের উদ্বুদ্ধ করো, সে ভাবেই সতীর্থদের পাশে দাঁড়াও। তা ছাড়া আমি নিজেও বিভিন্ন ভাবে ওদের মন ভাল করার চেষ্টা করছি।’’

পাঁচ ফুটবলার শুধু নন। দলের অন্যান্য কর্মীদের অনেকেই শ্রীনগরের বাসিন্দা। তাঁদের উদ্বেগ দূর করতে দলের কর্ণধার সন্দীপ ছাট্টুও মরিয়া। ম্যাচের দিন দুপুরে তিনি কল্যাণী পৌঁছে যাচ্ছেন। পরের দিন সকালেই ফিরে যাচ্ছেন শ্রীনগরে। কারণ, পরিবারের সঙ্গে দানিশদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় টিম হোটেলে গিয়ে দেখা গেল, ইদের পরিবারের সদস্যদের কী উপহার দিতে চান পাঁচ ফুটবলার, সেই তালিকা তৈরি করতে ব্যস্ত। বললেন, ‘‘সব মিলিয়ে আমাদের দলে শ্রীনগরের স্থানীয় বাসিন্দার দশ-বারো জন। এই মুহূর্তে ফোন, ইন্টারনেট বন্ধ। ওরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। ওদের পরিবারের সদস্যরাও প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় রয়েছে। ম্যাচের পরের দিন শ্রীনগরে ফিরে গিয়ে প্রত্যেকের বাড়িতে খবর পাঠিয়ে বলি, সবাই ভাল আছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘সবার বাড়িতে আমার একার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন অন্য কাউকে দিয়ে ওদের বাড়িতে খবর পাঠাই। জিজ্ঞেস করি, কোনও কিছুর প্রয়োজন আছে কি না। ইদের উপহারও যাতে ঠিক সময়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছতে পারে, তার দায়িত্বও আমার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন