লড়াই: খেতাবের লড়াইয়ে থাকতে গেলে জিততে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। শনিবার বারাসত স্টেডিয়ামে প্র্যাক্টিসে কাতসুমি ও ক্রোমা। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
এক দিকে কোচ খালিদ জামিল। অন্য দিকে পুরো দল। লাল-হলুদ অন্দরমহলে যে কোনও মুহূর্তে বিস্ফোরণের আশঙ্কা।
শুক্রবার চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে মিনার্ভা এফসি-র হার দেখে ফের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। কিন্তু ইন্ডিয়ান অ্যারোজের বিরুদ্ধে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে লাল-হলুদ শিবিরের যা ছবি, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতোই। আরও স্পষ্ট বিভাজন। এর ফলে সব চেয়ে সমস্যায় ম্যানেজার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য!
শনিবার সকালে বারাসত স্টেডিয়ামে খালিদের অ্যারোজ বধের মহড়ায় ফের দল বদলের ইঙ্গিত। ম্যাচ প্র্যাক্টিসে এদুয়ার্দো ফেরিরা-র সঙ্গে খেললেন গুরবিন্দর সিংহ। সুযোগ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েক দিন আগেই যিনি ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গুরবিন্দরের ক্ষোভ কমাতে মিনার্ভার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে নিয়ে গিয়েছিলেন খালিদ। অথচ প্রথম দলে জায়গা হয়নি তাঁর। শনিবার প্র্যাক্টিস ম্যাচে এদুয়ার্দোর সঙ্গে খেলানো সত্ত্বেও রাগ কমেনি লাল-হলুদ ডিফেন্ডারের। কোচের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতের রাস্তায় না হাঁটলেও যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিলেন মনোরঞ্জনের কাছে। বলছিলেন, ‘‘মিনার্ভা ম্যাচের আগের দিনও জানতাম, শুরু থেকে খেলব। স্টেডিয়ামে এসে দেখলাম, প্রথম একাদশে নাম নেই। অথচ খেলব বলেই ভাইয়ের বিয়েতে পঞ্জাব গেলাম না।’’ মিনার্ভার বিরুদ্ধে পেনাল্টি নষ্ট করেন কাতসুমি ইউসা। জাপানি মিডফিল্ডার সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন, ফের পেনাল্টি পেলে তিনি-ই মারবেন। অথচ শনিবার পেনাল্টি অনুশীলনে ডুডু ওমাগবেমি, আনসুমানা ক্রোমা, লালডান মাওয়াইয়া-রা থাকলেও ব্রাত্য কাতসুমি। সাইড লাইনের ধারে রাখা গ্লুকোজের বোতলে সজোরে লাথি মারলেন। কাতসুমি অবশ্য সতীর্থ গুরবিন্দরের মতো ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারের দ্বারস্থ হননি। গজগজ করতে করতে চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে। বাকি ফুটবলাররা তখনও মাঠে কুলডাউন করছেন।
মহম্মদ রফিককে দেখা গেল, মনোরঞ্জনকে বলছেন, ‘‘স্যার আমি কী করব? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।’’ আর গোলরক্ষক দিব্যেন্দু সরকার তো গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ফুঁসছেন। প্রকাশ্যেই বলছেন, ‘‘ম্যাচে খেলানো তো দূরের কথা, এখন তো আমাকে অনুশীলনও করতে দিচ্ছেন না কোচ।’’ শনিবার বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে সাংবাদিক বৈঠকে খালিদের জবাব, ‘‘সুযোগ না পাওয়ার হতাশা থেকেই হয়তো দিব্যেন্দু ক্ষোভ জানিয়েছে। তবে ও ভাল গোলরক্ষক। দিব্যেন্দুকে সুযোগের জন্য অপেক্ষা তো করতে হবে।’’
ইস্টবেঙ্গলের হাল ফেরাতে অভিমান ভুলে ফিরে এসেছেন মনোরঞ্জন। কিন্তু এর মধ্যে যে পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয়ে উঠেছে, তার কোনও ধারণা সম্ভবত আশির দশকে স্ট্রাইকারদের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া প্রাক্তন ডিফেন্ডারের ছিল না। অনুশীলনে ফুটবলারদের ভুলত্রুটি শুধরে দেওয়ার বদলে মনোরঞ্জন এখন বেশি ব্যস্ত ‘বিদ্রোহী’ ফুটবলারদের শান্ত করতে। এই পরিস্থিতিতে নিজেও মাঝেমধ্যে উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। বলছিলেন, ‘‘প্রদীপ কুমার (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল দত্তের মতো কোচকেও সরাসরি বলে দিয়েছিলাম, আমাদের নিয়ে ভাববেন না। আমরা ফুটবলাররাই নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে জয়ের শপথ নিয়েছিলাম। এই দৃঢ়তা দেখাতে হবে এখনকার ফুটবলারদেরও।’’
অ্যারোজ কোচ লুইস নর্টন দে মাতোস অবশ্য লাল-হলুদ অন্দরমহলের অশান্তি সম্পর্কে এতটা ওয়াকিবহাল নন। তাঁর মতে কাতসুমি-ই প্রধান অস্ত্র ইস্টবেঙ্গলের। বলছিলেন, ‘‘ও একাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘বারাসতের কৃত্রিম ঘাসের মাঠে ইস্টবেঙ্গলই এগিয়ে থাকবে।’’ আর খালিদের কথায়, ‘‘খেতাবের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে অ্যারোজের বিরুদ্ধে জিততেই হবে।’’
রবিবার না জিতলে পরিস্থিতি যে আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে, তা খালিদের চেয়ে ভাল আর কে জানেন?
রবিবার আই লিগে: নেরোকা এফসি বনাম গোকুলম এফসি (দুপুর, ২.৩০)। ইস্টবেঙ্গল বনাম ইন্ডিয়ান অ্যারোজ (বারাসত, বিকেল ৫.৩০)।