জোবির জোড়া গোলে রামধনু ইস্টবেঙ্গলে

মেঘে ঢাকা ময়দানের আকাশে হঠাৎই মঙ্গলবার বিকেলে রামধনুটা দেখা গেল, হয়তো জোবি জাস্টিনের চোখ ধাঁধানো প্রত্যাবর্তনকে স্যালুট জানাতেই!

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০৬:৩৫
Share:

নায়ক: ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করছেন জোবি জাস্টিন (২২ নম্বর জার্সি)। পাশে কাশিম আইদারা (১৬)। মঙ্গলবার কলকাতা লিগে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মেঘে ঢাকা ময়দানের আকাশে হঠাৎই মঙ্গলবার বিকেলে রামধনুটা দেখা গেল, হয়তো জোবি জাস্টিনের চোখ ধাঁধানো প্রত্যাবর্তনকে স্যালুট জানাতেই!

Advertisement

শহরের সবচেয়ে উঁচু বাড়ি ‘দ্য ফরটি টু’ জাতীয় পতাকার ত্রিবর্ণ আলোয় উজ্জ্বল। স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে যা ছিল শহরের অন্যতম দর্শনীয় জিনিস। জোড়া গোল করার পর জোবির দু’রকম স্টাইলের নাচ, সেটাও তো এ দিন সন্ধ্যায় দর্শনীয় হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল মাঠে।

সেই কবে জানুয়ারির শেষে আই লিগে মিনার্ভা পঞ্জাবের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন জোবি। তার পর কেরলের এই স্ট্রাইকারের নামও তো ভুলেই গিয়েছিল লাল-হলুদ জনতা। চোটের কবলে পড়ে সাড়ে ছয় মাস নামতেই পারেননি মাঠে। তীব্র চাপের মুখে সেই ফুটবলারের পায়েই দুটো গোল। ‘‘এটাই আমার স্বপ্ন ছিল। যে দিন নামব, সে দিনই গোল করতে হবে। তবে দু’টো গোল করব ভাবিনি।’’ বলার সময় গত বছর আই এম বিজয়নের পছন্দ করে পাঠানো জোবির গলায় উচ্ছ্বাস। ফিরে আসার মঞ্চকে আরও ঘটনাবহুল করে তুলতে ম্যাচ শেষে আরও একটা ঘোষণা করে দিলেন তিনি। বলে দিলেন, ম্যাচ সেরা হওয়ার টাকা তিনি দান করে দিচ্ছেন নিজের রাজ্য কেরলের বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য।

Advertisement

নতুন হেয়ার স্টাইলের জোবির গোল, মহম্মদ আল আমনার মাঠ জুড়ে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো নড়াচড়া, দু’ প্রান্তে ব্র্যান্ডন ভ্যানলালরেমডিকা এবং লালডানমুইয়া রালতের দুর্দান্ত উইং প্লে—মরসুমে প্রথম বার লাল-হলুদে যেন রং ধরিয়ে দিল এ দিন। যার রেশে গ্যালারিতে ম্যাচের পর জ্বলে উঠল কয়েকশো রং-মশাল। শুক্রবার রাতে কাস্টমস ম্যাচের ‘গো ব্যাক’ স্লোগান, বিক্ষোভ সব উধাও চার দিনের মধ্যেই। এটাই ময়দানী ফুটবলের মজা। কোনও কিছুই যে এখানে স্থায়ী নয়।

পাঠচক্র দলটা নিয়ে খুব মাতামাতি হচ্ছিল লিগ শুরুর আগে। রাশিয়া বিশ্বকাপে রানার্স হওয়া ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার, জাপানি মিডিয়ো, জিম্বাবোয়ের স্টপার, নেদারল্যান্ডসের কোচ—মনে হচ্ছিল প্রিমিয়ার লিগে নতুন আসা ক্লাব লিগে এ বার চমকে দেবে। কিন্তু দলটাকে এ দিন দেখে মনে হল: গর্জন যত বেশি, বর্ষণ ততই কম। স্পনসর নেই, অনেক কষ্ট এর ওর কাছে চেয়েচিন্তে পাঠচক্র দলটা তৈরি করেছেন কর্তারা। কিন্তু ফুটবলারদের মধ্যে কর্তাদের মতো জেদটাই নেই। অতি সাধারণ মানের সব ফুটবলার। সাকুল্যে নব্বই মিনিটে দু’বার অ্যান্টো পেজিচ, ফুতা নাকামুরারা ইস্টবেঙ্গল গোলে বল মেরেছেন। বাকি সময়টা লালকমল ভৌমিকদের মনোভাব ছিল সাত-আট জন মিলে গোলের মুখ বন্ধ করে মশালধারীদের আটকানোর। আল আমনার পিছনে লাগানো হয়েছিল তন্ময় কুণ্ডুকে। তিনি সিরিয়ান মিডিওকে একবারের জন্যও ধরতে পারেননি। ফলে যা হওয়ার তাই হল। বিরতির আগেই সুভাষ ভৌমিকের দল এগিয়ে গেল দু’গোলে। যার মধ্যে একটা আবার পেনাল্টি থেকে গোল। পাঠচক্রের মনতোষ চাকলাদার হাতে বল লাগিয়েছিলেন। রালতে নিখুঁত পেনাল্টি মেরে গোলটা করে যান।

ইস্টবেঙ্গল এই ম্যাচটায় জিততে পারত পাঁচ-ছয় গোলে। বিপক্ষ যদি নির্বিষ হয়, তা হলে সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাঠ ফেরত লাল-হলুদ সমর্থকরা কর্তাদের কাছে জানতে চাইছিলেন, বিদেশি স্ট্রাইকার কবে আসবেন? বিশ্বকাপার জনি আকোস্টা কবে নামবেন মাঠে? জানতে চাওয়ার কারণ স্বাভাবিক, কলকাতা ডার্বি যে সতেরো দিন পরেই, ২ সেপ্টেম্বর। সেখানে আমনা, জোবিরা যে এখনও ধ্রুবতারা হয়ে ওঠেননি। টানা আট বার লিগ জিতলেও ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের ট্র্যাক রেকর্ড সাম্প্রতিক কালে একেবারেই ভাল নয়। আর ডার্বি হেরে কলকাতা লিগ জয় যে, নুন ছাড়া সুস্বাদু খাবারের মতোই!

স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন ইস্টবেঙ্গলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুভাষ ভৌমিক কি পরাধীন হলেন?

আমনাকে প্রথম একাদশে খেলানো নিয়ে শুক্রবার কাস্টমস ম্যাচের পরে চাপান-উতোর হয়েছিল টিডির সঙ্গে কর্তাদের। সুভাষ টেবল চাপড়ে বলেছিলেন, পরের ম্যাচেও আমনাকে প্রথম একাদশে রাখবেন না। উল্টোদিকে শীর্ষ কর্তারা চেয়েছিলেন, সিরিয়ান ফুটবলার প্রথম থেকেই খেলুন। এ দিন দেখা গেল, কর্তারা যা চাইছিলেন সেই দলই নামিয়েছেন আসিয়ান জয়ী কোচ। ডাকাবুকো সুভাষও তা হলে আপস করেন? চাপের মুখে স্বঘোষিত সিদ্ধান্ত থেকে সরেও আসেন? জেতার পরে সুভাষের হাসি দেখে মনে হল, কর্তাদের চাপে পরাধীন হলেও তিনি খুশিই। আপাতত চাপমুক্তও।

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত দাগার, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, কিংশুক দেবনাথ, লালরাম চুলোভা, লালডামুইয়া রালতে, কমলপ্রীত সিংহ, ব্র্যান্ডন ভানলালরেমডিকা (বিদ্যাসাগর সিংহ), কাশিম আইদারা, মহম্মদ আল আমনা (সঞ্চয়ন সমাদ্দার), জোবি জাস্টিন (বালি গগনদীপ)।

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ

ইস্টবেঙ্গল ৩ পাঠচক্র ০

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন