বিতর্ক: এই সেই মুহূর্ত। চুলোভার ফ্রি-কিক ক্রসবারে লেগে গোললাইন পেরিয়ে গেলেও গোল দেননি রেফারি।
আইজল এফসি ৩ • ইস্টবেঙ্গল ২
আইজল এফসি-কে হারিয়ে জয়ের সরণিতে ইস্টবেঙ্গলের প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন শেষ গোল বাতিল বিতর্কে! ম্যাচের পরেই জোরালো দাবি উঠতে শুরু করে দিয়েছে, গোললাইন বা ভিডিয়ো অ্যাসিট্যান্ট রেফারি (ভার) প্রযুক্তি ব্যবহারের।
যুবভারতীতে আগের ম্যাচে চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে মরিয়া ছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু একের পর এক সহজ সুযোগ নষ্ট করেন জবি জাস্টিন ও এনরিকে এসকুয়েদা। ২৫ মিনিটে গতির বিরুদ্ধে গোল করে আইজলকে এগিয়ে দেন জ়িকাহি দোদোজ়। এর ১৪ মিনিট পরেই সূত্রপাত বিতর্কের।
ইস্টবেঙ্গল শিবিরের অভিযোগ, লালরাম চুলোভার অসাধারণ ফ্রি-কিক ক্রসবারের নীচে লেগে গোললাইন পেরিয়ে প্রায় দু’ফুট ভিতরে ড্রপ পড়ার পরে আইজল এফসি-র গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহ হাত দিয়ে বল বার করেন। অথচ রেফারি গোল দিলেন না! টেলিভিশন রিপ্লে-তেও স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, আইজল গোলরক্ষক গোলের ভিতর থেকেই বল বার করছেন।
আইজল বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকা রেনেডি সিংহ। তিনিও বিস্মিত রেফারির সিদ্ধান্তে। রেনেডি বলছিলেন, ‘‘নিশ্চিত গোল। গোললাইনের অন্তত দু’ফুট ভিতরে বল ড্রপ পড়েছিল। রেফারি ও লাইন্সম্যানের অবশ্যই দেখা উচিত ছিল। ন্যায্য গোল থেকে বঞ্চিত হল ইস্টবেঙ্গল।’’ লাল-হলুদের প্রাক্তন তারকা সমরেশ চৌধুরী অবশ্য রেফারি ও লাইন্সম্যানকে কাঠগড়ায় তুলতে রাজি নন। তিনি বললেন, ‘‘টেলিভিশনে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, বল গোললাইনের ভিতরে ড্রপ পড়েছিল। তবে অনেক সময় সব কিছু চোখে পড়ে না রেফারি ও লাইন্সম্যানের। এই কারণেই সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের উচিত বিতর্ক এড়াতে গোললাইন বা ‘ভার’-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা।’’
দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে একই ভাবে গোল বাতিল হয়েছিল ইংল্যান্ডের ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের। যা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠে উঠেছিল বিশ্বজুড়ে। চার বছর পরে ব্রাজিল বিশ্বকাপেই গোললাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফিফা। এ বছর রাশিয়া বিশ্বকাপে আরও উন্নত ‘ভার’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা। অথচ ভারতীয় ফুটবলে এখনও পড়ে রয়েছে ডাইনোসর যুগে। আই লিগ থেকে আইএসএল— ভরসা রেফারি ও লাইন্সম্যানেরাই।
আই লিগে কেন গোললাইন বা ‘ভার’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে না? আইজল বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে ফেডারেশনের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘এই ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের খরচ অনেক। এই মুহূর্তে এআইএফএফ-র আর্থিক সামর্থ নেই গোললাইন বা ‘ভার’ প্রযুক্তি ব্যবহারের।’’ তা হলে কি ভুল করলেও রেফারি বা লাইন্সম্যানেরা ছাড় পেয়ে যাবেন? ফেডারেশন কর্তার জবাব, ‘‘আই লিগে ক্লাবগুলো রেফারি ও লাইন্সম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে ফেডারেশন।’’ ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই ইস্টবেঙ্গলের তরফে সরকারি ভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে ফেডারেশনের কাছে।
শুধু রেফারি বা লাইন্সম্যান নন, ইস্টবেঙ্গলের জিততে না পারার জন্য দায়ী রক্ষণের ব্যর্থতাও। ৬২ মিনিটে চুলোভার ফ্রি-কিকে মাথা ছুঁইয়েই সমতা ফেরান জবি। আট মিনিট পরে বোরখা গোমেস পেরেস এগিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গলকে। কিন্তু ৭৩ মিনিটে আইজলের ডেভিড লালবিয়াকাজ়ারার কর্নার থেকে উড়ে আসা বল গ্রিপ করে গিয়ে ফস্কান লাল-হলুদ গোলরক্ষক উবেদ সি কে। জোরালো শটে গোল করে সমতা ফেরান জো জ়োহিরলিয়ানা। ৮৩ মিনিটে দোদোজ়ের পাস থেকে কার্যত বিনা বাধায় গোল করে আই লিগে আইজলের প্রথম জয় নিশ্চিত করেন লালখাওপুইমাওয়াইয়া। আশ্চর্যজনক ভাবে সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের কোনও ডিফেন্ডারই ছিলেন না তাঁকে বাধা দেওয়ার জন্য।
আই লিগে টানা দু’ম্যাচ হারের ধাক্কায় হতাশ ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস রেফারিকেই কাঠগড়ায় তুললেন। বললেন, ‘‘চুলোভার ফ্রি-কিক গোললাইনের ভিতরে পড়া সত্ত্বেও গোল দেননি রেফারি। এই গোলটা হলে ম্যাচের ছবিটাই হয়তো বদলে যেত। ম্যাচের শেষের দিকে পেনাল্টিও দেননি। শুধু তাই নয়। আমাদের ফুটবলারদেরই বেশি হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি।’’