ম্যাচের মাঝে রেফারিদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ালেন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
জিতলেও শেষ পর্যন্ত আই লিগ আসত না। কারণ ঘরের মাঠে চার্চিলকে হারিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে মিনার্ভা পঞ্জাব। কিন্তু লক্ষ লক্ষ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের হৃদয়ের ক্ষতে মলমটুকুও হয়ে উঠতে পারলেন না লাল-হলুদের মশালধারীরা।
হাইভোল্টেজ ম্যাচে, ঘরের মাঠে নেরোকার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে লিগ টেবিলে চার নম্বরে থেকে শেষ করল ইস্টবেঙ্গল। রয়ে গেল হতাশা, বাড়ল দীর্ঘশ্বাস। আবার সেই প্রথমবার আই লিগ জয়ের জন্য প্রহর গোনার পালা।
প্রথমার্ধে একের পর এক আক্রমণ তুলে আনলেও গোলের খাতা খুলতে ব্যর্থ হয় ইস্টবেঙ্গল। কারণ, স্ট্রাইকারদের চরম ব্যর্থতা। গ্যালারি থেকে সমর্থকদের রোষ আছড়ে পড়ছিল— ‘এরা পাড়া ফুটবলে খেলারও অযোগ্য’।
এরই মাঝে ম্যাচের ৪২ মিনিটে খেলার গতির বিরুদ্ধেই গোল করে নেরোকাকে এগিয়ে দেন ফেলিক্স চিডি। যদিও এই গোল নিয়ে রয়ে গেল এক রাশ প্রশ্ন। স্পষ্ট অফসাইড দেখা গেলেও সেটা চোখেই পড়েনি রেফারি রোয়ান আরুমুঘানের। শুধু এই একটি ক্ষেত্রেই নয়, এ দিন বারবার রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের ‘বলি’ হতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে।
দ্বিতীয়ার্ধে দু-দু’বার নেরোকা ডিফেন্ডাররা নিজেদের পেনাল্টি বক্সে হ্যান্ড বল করলেও তা নজরে আনার প্রয়োজন মনে করেননি রেফারি। ‘ধৃতরাষ্ট্র’ রেফারি হলেও, ম্যাচের ৭৩ মিনিটে লালরামচুলোভার পাস থেকে গোল করে দলকে হারের মুখ থেকে বাঁচান ডুডু।
ম্যাচ শেষে হতাশ খেলোয়াড়েরা।
কিন্তু দেশের সেরা লিগকে আর কত দিন দুয়োরানী করে রাখবেন কুশল দাস-সুনন্দ ধররা! আই লিগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে যদি এই মানের রেফারিং হয়, তা হলে কি আদৌ ভাল খেলা হওয়া সম্ভব! আরুমুঘানের খেলা পরিচালনা দেখলে যে কারও মনে প্রশ্ন আসতে বাধ্য, আদৌ কি যোগ্যতা অর্জন করে রেফারি প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন তিনি, না কি বাবা-কাকার সম্পর্কের হাত ধরে ভারতীয় ফুটবলকে ধ্বংস করছেন ফুটবলের অ-আ-ক-খ জ্ঞান না থাকা এই রেফারিরা। প্রেসবক্স তো বটেই, এই আলোচনা উঠেছে দর্শকদের মধ্যেও।
রেফারির পাশাপাশি লাল-হলুদ সমর্থকদের কাছে এ দিনের খলনায়ক ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিলও। ম্যাচ ড্রয়ের জন্য অনেকটাই দায়ী করা যেতে পারে খালিদের স্ট্যাটেজিকে।
লাজং ম্যাচ ড্রয়ের পর নেরোকার মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খালিদের কাছে দল গঠনের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেই ডাহা ফেল খালিদ।
গ্যালারিতে শোকের ছায়া।
গতকালই সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন— নেরোকার বিরুদ্ধে দলে পরিবর্তন তিনি আনবেন। কিন্তু পরিবর্তন আনা মানে সেরা খেলোয়াড়দের বসিয়ে রাখা যে নয়, তা বোধহয় জানা ছিল না এই মুম্বইকরের!
লাজংয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ ড্র করলেও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে নজর কেড়েছিলেন আনসুমানা ক্রোমা এবং কেভিন লোবো। কিন্তু এই দুই জনকেই এ দিন শুরু থেকে রাখেননি খালিদ। পরিবর্তে এ দিন মাঠে নামান মহম্মদ রফিক এবং জবি জাস্টিনকে। দু’জনেই সুপার ফ্লপ। আই এম বিজয়নের রাজ্য থেকে উঠে আসা জবির খেলার বিশ্লেষণ যতটা কম করা যায় ততটাই ভাল। ম্যাচের সহজতম সুযোগটি মিস করেন তিনিই। শুধু পা ছোঁয়ালে যে বলটা গোলে ঢুকে যায়, তা মাঠের বাইরে পাঠালেন ক্রিকেটের ওভার বাউন্ডারি মারার ঢংয়ে।
তবে, এত খারাপের মধ্যেও এ দিন নিজেদের কাজটা ঠিক মতো করে গেলেন লাল-হলুদের মাঝমাঠের দুই কাণ্ডারী আল আমনা এবং কাটসুমি ইউসা। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ ড্র করলেও আমনা-কাটসুমির অদম্য লড়াই-ই এই ম্যাচ থেকে এক মাত্র প্রাপ্তি।
দ্বিতীয়ার্ধে হয়তো ভুলটা নিজেই বুঝতে পেরেছিলেন খালিদ। রফিক-জবিকে তুলে নামান লোবো আর ক্রোমাকে। কিন্তু ম্যাচ তখন অনেকটাই শেষের দিকে। পরিবর্তনটা যদি দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও করতেন, অন্য রকম হওয়ার সম্ভবনা ছিল ম্যাচের ফল।
ভারতীয় ফুটবলে একটি প্রচলিত কথা আছে— পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল খোঁচা খাওয়া বাঘের থেকেও ভয়ঙ্কর। কিন্তু বৃহস্পতিবার নেরোকা ম্যাচ দেখে সেটা কে বলবে!