বাইসাইকেল কিক

পাঁচ গোল হল না, আক্ষেপ রয়ে গেল

মর্যাদার লড়াইয়ে সাড়ে ৩২ মাস পরে মোহনবাগানকে হারাল ইস্টবেঙ্গল। এই ম্যাচের আগে লাল-হলুদ সমর্থকদের দেখলে খুব কষ্ট হত। দলের ব্যর্থতায় মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল ওরা।

Advertisement

শ্যাম থাপা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১০
Share:

অনবদ্য: দুর্দান্ত সাইড ভলিতে এ ভাবেই ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দিলেন লাল-হলুদের স্ট্রাইকার জবি জাস্টিন। রবিবার যুবভারতীতে, আই লিগের ডার্বি ম্যাচে। ছবি: সুমন বল্লভ

ইস্টবেঙ্গল ৩ • মোহনবাগান ২

Advertisement

আই লিগের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের দুরন্ত জয় দেখে আনন্দের পাশাপাশি দুঃখও হচ্ছে। পাঁচ গোল হল না যে!

মর্যাদার লড়াইয়ে সাড়ে ৩২ মাস পরে মোহনবাগানকে হারাল ইস্টবেঙ্গল। এই ম্যাচের আগে লাল-হলুদ সমর্থকদের দেখলে খুব কষ্ট হত। দলের ব্যর্থতায় মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল ওরা। আমি বলতাম, ‘‘আস্থা রাখো। তোমাদের দল ঠিক ঘুরে দাঁড়াবে।’’ আমার ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেল রবিবারের যুবভারতীতেই। দীর্ঘদিন লাল-হলুদ জার্সি গায়ে খেলার সুবাদে জানি, খোঁচা খাওয়া ইস্টবেঙ্গল কতটা শক্তিশালী হতে পারে। এ দিন আরও এক বার তা প্রমাণিত।

Advertisement

ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বি মানে শুধু মর্যাদার লড়াই নয়। টানটান উত্তেজনা, রোমাঞ্চও। এ দিন সব উপাদানই ছিল যুবভারতীতে। ১৩ মিনিটে আজহারউদ্দিন মল্লিকের গোলে এগিয়ে গেল মোহনবাগান। দারুণ প্রতিশ্রুতিমান সবুজ-মেরুনের এই বাঙালি ফুটবলার। কিন্তু মোহনবাগানের কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী প্রথমার্ধেই কেন যে ওকে তুলে নিলেন, বুঝলাম না।

আরও পড়ুন: রক্ষণের ভুল দু’পক্ষেই, তাই দেদার গোল

গোল খেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার চার মিনিটের মধ্যেই গোল শোধ লালডানমাউইয়া রালতের। যদিও যত বিতর্ক এই গোলটা নিয়েই। মোহনবাগান শিবিরের দাবি, অফসাইড থেকে গোল করেছেন লাল-হলুদ মিডফিল্ডার। রালতে অফসাইডে ছিল কি না, টেলিভিশনে বারবার রিপ্লে দেখেও আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই। গোল নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে অবিশ্বাস্য গোলে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেয় জবি জাস্টিন। ৬২ মিনিটে ফের রালতের গোল। দু’বছর আগে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন আইজল এফসি-তে ছিল রালতে। ছোটখাটো চেহারা। কিন্তু প্রচণ্ড লড়াকু। ফুটবলবোধ অসাধারণ। দু’‌টো গোলের ক্ষেত্রেই দারুণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। ৭৫ মিনিটে ব্যবধান কমায় মোহনবাগানের দিপান্দা ডিকা। ৯০ মিনিটে পাঁচ গোল— ডার্বি তো এ-রকমই হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: জবির গোলে দাদার মৃত্যুর যন্ত্রণা ভুললেন গুরু বিজয়ন

আমি অবশ্য অভিভূত জবির অ্যাক্রোবেটিক সাইডভলির গোলটা নিয়ে। এ ধরনের গোল খুবই কঠিন। কারণ, শরীর শূন্যে ভাসিয়ে বল মারতে হয়। সামান্য ভুল হলেই বল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তাই নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়। দরকার দুর্দান্ত ফিটনেসও। আমি এই ধরনের গোল প্রচুর করেছি।

জবির গোল দেখে মনে পড়ে যাচ্ছিল সত্তরের দশকের শেষ দিকের আইএফএ শিল্ডের কথা। আমি তখন মোহনবাগানে। এ-রকমই গোল করেছিলাম মহমেডানের বিরুদ্ধে। ম্যাচের পরে সমর্থকেরা আমাকে কাঁধে তুলে নেচেছিলেন।

মনে পড়ছিল, এ ধরনের গোল করার জন্য কী ভাবে বাড়তি পরিশ্রম করতাম। অনুশীলন শেষ হওয়ার পরেও মাঠে পড়ে থাকতাম। শরীরে যাতে আঘাত না-লাগে, তার জন্য জল দিয়ে মাঠ ভিজিয়ে দিতাম। তার পরে সতীর্থদের বলতাম সেন্টার তুলতে। বক্সের ভিতর থেকে আমি কখনও সাইডভলি, ব্যাকভলি, কখনও আবার বাইসাইকেল কিকে গোল করার অনুশীলন করতাম। সব চেয়ে সুবিধে হত বর্ষায়। তখন আর মাটি নরম করার জন্য জল ঢালতে হত না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি এ ভাবে অনুশীলন করে গিয়েছি। আমি নিশ্চিত, জবিও বাড়তি অনুশীলন করে। নইলে সাইডভলিতে এমন গোল করা কখনওই সম্ভব নয়। রালতে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেলেও আমার মতে ইস্টবেঙ্গলের জয়ের আসল নায়ক জবি।

তবে দুই কোচেরই রণকৌশল আমাকে হতাশ করেছে।

ইস্টবেঙ্গলের আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস কোচিং করিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলে। ৩-১ এগিয়ে যাওয়ার পরে ওঁর ফুটবলারদের নির্দেশ দেওয়া উচিত ছিল, নিজেদের মধ্যে বেশি পাস খেলে তারা যেন ম্যাচের গতি কমিয়ে আনে। যাতে মোহনবাগানের ছন্দ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ওরা যেন ঘুরে দাঁড়াতে না-পারে। তা হলেই হয়তো পাঁচ গোলে ম্যাচটা জিততে পারত। উল্টে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের দেখলাম, গতি বাড়িয়ে খেলার চেষ্টা করছে!

সব চেয়ে আশ্চর্য হয়েছি, মোহনবাগান কোচ শঙ্করলালকে দেখে। আজহারকে তুলে যাকে নামালেন, সেই শেখ ফৈয়জ এই মরসুমে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে এ দিনই প্রথম খেলল। ডার্বিতে এই ঝুঁকি কেউ নেয়! দ্বিতীয়ত, শুরুর দিকে মোহনবাগানকে দেখে মনে হচ্ছিল, প্রতিপক্ষকে বাড়তি সমীহ করছে। আর তাই সতর্ক হয়ে খেলছে। ওরা হয়তো উদ্বিগ্ন ছিল ডার্বিতে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে অভিষেক ঘটানো খাইমে সান্তোস কোলাদোকে নিয়ে। আমার অবশ্য লাল-হলুদের নতুন বিদেশিকে খুব একটা আহামরি লাগেনি। হতে পারে, প্রথম দিন বলে খুব একটা ছন্দে ছিল না।

কোলাদো-আতঙ্ক মোহনবাগান কাটিয়ে উঠেছিল ম্যাচের শেষ ৩৩ মিনিটে। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। এর জন্য দায়ী অধিনায়ক এজে কিংসলে।৬০ মিনিটে লাল কার্ড (দ্বিতীয় হলুদ কার্ড) দেখে মাঠ ছাড়ে সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার। অধিনায়কের দায়িত্ব অনেক। ১২ মিনিটে প্রথম হলুদ কার্ড দেখা কিংসলের সতর্ক হয়ে খেলা উচিত ছিল। তার উপরে সনি নর্দের মতো তারকা চোটের কারণে দলে নেই। অথচ পেনাল্টি বক্সের বাইরে জবিকে আটকাতে গিয়ে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখল ও। তার পরেই লালরিনডিকার ফ্রি-কিক থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল
করে রালতে।

দশ জনে হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও শেষ ৩৩ মিনিট অসাধারণ খেলল ডিকারা। মনে হচ্ছিল, যে-কোনও সময় স্কোর ৩-৩ হয়ে যাবে। তা হয়নি জনি আকোস্তো ও বোরখা গোমেস পেরেসের জন্য। ঠান্ডা মাথায় মোহনবাগানের আক্রমণ সামলেছে ইস্টবেঙ্গলের দুই বিদেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন