কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ// ইস্টবেঙ্গল ২ : মহমেডান ২

আমনা-জাদু, জিতেনের জবাব

সিরিয়ার মিডফিল্ডারের নেতৃত্বে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু লাল-হলুদ শিবিরের উচ্ছ্বাস ২০ মিনিটেই থামিয়ে দিলেন জিতেন মুর্মু। বছর দু’য়েক আগেও জিতেনকে ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যতের তারকা মনে করা হতো।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৯
Share:

দুরন্ত গোল আমনার। মাতালেন জিতেন মুর্মু। নিজস্ব চিত্র

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে আটকে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের অঙ্ক নাটকীয় ভাবে বদলে দিল মহমেডান। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে চ্যাম্পিয়নের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ২৪ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ি ডার্বির উপরেই।

Advertisement

শনিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে মহমেডানের বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরু হওয়ার দু’মিনিটের মধ্যেই টানা আটবার লিগ জয়ের উৎসব শুরু করে দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। নেপথ্যে মহম্মদ আল আমনার বিশ্বমানের গোল।

সিরিয়ার মিডফিল্ডারের নেতৃত্বে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু লাল-হলুদ শিবিরের উচ্ছ্বাস ২০ মিনিটেই থামিয়ে দিলেন জিতেন মুর্মু।

Advertisement

বছর দু’য়েক আগেও জিতেনকে ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যতের তারকা মনে করা হতো। লাল-হলুদেরই যুব দল থেকে তাঁর উত্থান। এ বছরও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রাক-মরসুম প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। কিন্তু লিগ শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে নাটকীয় ভাবে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় মহমেডান। শনিবার কল্যাণীতে সেই জিতেনই আতঙ্ক ছড়িয়ে দিলেন লাল-হলুদ শিবিরে! মহমেডান কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের আস্থার প্রতিদান দিলেন। জবাব দিলেন ইস্টবেঙ্গলের উপেক্ষারও। ম্যাচের পর মহমেডান স্ট্রাইকার বলছিলেন, ‘‘এই ধরনের ম্যাচই হচ্ছে প্রমাণ করার সেরা মঞ্চ। আমিও সেই লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিলাম।’’

জবাব দেওয়ার ম্যাচ ছিল বিশ্বজিতেরও! তাঁর কোচিংয়েই দু’বছর আগে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জয়ের ডাবল হ্যাটট্রিক করেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু আই লিগ চলাকালীনই বিশ্বজিতকে ছেঁটে ফেলে ইস্টবেঙ্গল। এ দিন তাঁর চালেই ঘরোয়া লিগে চব্বিশ ম্যাচ পরে জয়রথ থামল ইস্টবেঙ্গলের।

ওগবা কালুর নেতৃত্বে আমনার জন্য চক্রব্যূহ তৈরি করলেন। ইস্টবেঙ্গল মিডিও আটকে গেলেই তেজ হারিয়ে মশাল যে মোমবাতিতে পরিণত হয়, সেটা পাঠচক্র এফসি-র বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল। এ দিনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। ম্যাচের পর মহমেডান কোচ অবশ্য ক্ষোভ উগরে দিলেন রেফারিং নিয়ে। বললেন, ‘‘পেনাল্টি থেকে রেফারি আমাদের বঞ্চিত করেছেন। তা সত্ত্বেও সাতবার আমরা গোল করার মতো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য যে ম্যাচটা জিততে পারিনি।’’ আইএফএ-র বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন বিশ্বজিৎ। বললেন, ‘‘ছ’দিনে আমাদের তিনটে ম্যাচ খেলতে বাধ্য করা হয়েছে। তার পরেও ছেলেরা যে ফুটবলটা খেলল, তাতে আমি গর্বিত।’’

বিশ্বজিতের ঠিক উল্টোটা করলেন খালিদ জামিল। মহমেডান স্ট্রাইকার দিপান্দা ডিকা-কে আটকে রাখার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আশ্চর্যজনক ভাবে ক্যামেরুন স্ট্রাইকারকে নিশ্চিন্তে খেলার সুযোগটা করে দিলেন। তার পরে আর লাল-হলুদের ডিফেন্ডাররা ছন্দে ফেরা মহমেডান তারকাকে আটকাতে পারলেন না। ৬৭ মিনিটে ডিকা-ই গোল করে এগিয়ে দেন মহমেডানকে।

দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎ স্ট্র্যাটেজি বদলে ফেললেন কেন? জিতেনের গোলের পরে কি চাপে পড়ে গিয়েছিলেন? খালিদের ব্যাখ্যা, ‘‘মহমেডান ভাল খেলেছে। তবে জিততে না পারার জন্য কাউকে দায়ী করছি না।’’ তার পরেই যোগ করলেন, ‘‘ম্যাচে ওরা প্রচুর উইং দিয়ে সেন্টার করছিল। পরের ম্যাচে সেগুলো বন্ধ করার চেষ্টা
করতে হবে।’’

ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে ১৯ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার এই কল্যাণীতেই। তবে টালিগঞ্জ নয়, লাল-হলুদ কোচ এ দিন থেকেই ডার্বির প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। ম্যাচের পরেই ড্রেসিংরুমে প্রত্যেকটা ফুটবলারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন। খালিদের বার্তা— মহমেডান ম্যাচ এখন অতীত। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ডার্বিতে এই ভুলগুলো যেন না হয়। শুধু তাই নয়। ড্রয়ের ধাক্কায় ম্যাচের পরের দিন উইলিস প্লাজা-দের বিশ্রামও বাতিল করে দিয়েছেন তিনি। আজ, রবিবার সকালেই নেমে পড়বেন অনুশীলনে। মহমেডানের বিরুদ্ধে পয়েন্ট খোয়ানোর যন্ত্রণার মধ্যে খালিদের একটাই স্বস্তি, প্লাজার ছন্দে ফেরা।

লাল-হলুদ সমর্থকরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো স্ট্রাইকারের উপর। এ দিন তাঁকে প্রথম দলে দেখেই হাজার সাতেক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক গ্যালারি থেকে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন। সেই প্লাজাই ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে ত্রাতা হয়ে উঠলেন লাল-হলুদ শিবিরে।

গোল করেই গ্যালারির দিকে দৌড়লেন প্লাজা। তবে ইস্টবেঙ্গলের আর এক নায়ক আল আমনা রীতিমতো বিধ্বস্ত। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের তিনটি শট পোস্টে লেগে না ফিরলে জিতেই মাঠ ছাড়তাম। ডার্বি জিততে হবে এখন, তা-ই জিতব।’’

কল্যাণীতে মহমেডান ম্যাচ ড্র করেই শিলিগুড়ির ডার্বিতে ঢুকে পড়েছে লাল-হলুদ শিবির।

ইস্টবেঙ্গল: লুইস ব্যারেটো, সামাদ আলি মল্লিক, অর্ণব মণ্ডল, কার্লাইল ডিয়ন মিচেল, লালরামচুলোভা, লালদানমাওয়াইয়া রালতে (সুরাবুদ্দিন মল্লিক), মহম্মদ রফিক, মহম্মদ আল আমনা, ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা (কেভিন লোবো), জবি জাস্টিন (গ্যাব্রিয়েল ফার্নান্দেজ) ও উইলিস প্লাজা।

মহমেডান: শঙ্কর রায়, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, রানা ঘরামি, সোমোচুকু রিচার্ড, কামরান ফারুক, শেখ ফৈয়াজ, তীর্থঙ্কর সরকার (সত্যম শর্মা), ওগবা কালু, দীপেন্দু দোয়ারি, জিতেন মুর্মু ও দিপান্দা ডিকা (মননদীপ সিংহ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন