যুবভারতীতে আজ খালিদের সঙ্গে লড়াই খালিদের

চৌম্বকে যুদ্ধটা তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে, লাল-হলুদকে চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন দেখানো খালিদ বনাম আইজলকে ভারতীয় ফুটবলের ক্যানভাসে জায়গা করে দেওয়া অন্য এক খালিদ।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০১
Share:

মহড়া: আই লিগের প্রস্তুতিতে হাল্কা মেজাজে কাতসুমি, আমনারা। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

যুবভারতীতে আজ মঙ্গলবার খালিদ জামিল যেন নিজের ছায়ার সঙ্গেই যুদ্ধে নামছেন !

Advertisement

ইস্টবেঙ্গল কোচকে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে দেখে মনে হচ্ছে সত্তাটা দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে তাঁর। চৌম্বকে যুদ্ধটা তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে, লাল-হলুদকে চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন দেখানো খালিদ বনাম আইজলকে ভারতীয় ফুটবলের ক্যানভাসে জায়গা করে দেওয়া অন্য এক খালিদ।

মুখে হাসি নেই। চোখ দুটো কেমন যেন গর্তে ঢোকা। দাড়ি না কামিয়ে চলে এসেছেন অনুশীলনে। সকাল সাড়ে সাতটায় সেই যে যুবভারতীতে এসেছেন, রাত সাড়ে সাতটাতেও ক্লাব তাঁবুর বিশাল ড্রেসিংরুমে একলা তিনি পায়চারি করছেন। কখনও প্রার্থনা করছেন। কখনও ঝোলানো ফুটবলারদের জার্সি ছুঁয়ে দেখছেন। মাটি থেকে বুট হাতে তুলে দেখছেন। এটাই নাকি খালিদ-স্ট্র্যাটেজি!

Advertisement

অনেকে এটাকে বলছেন ময়দানের ‘ছোটা নইমুদ্দিন’-এর তুকতাক! কেউ বলেন ‘ফুটবল-পাগলামি’! যেটাই হোক, খালিদ যেন নিজের চাপ নিজেই নিয়ে নিয়েছেন ঘাড়ে। সোমবার বিকেলে মাঠের মধ্যে আইজল অনুশীলন করছিল। আই লিগের উদ্বোধনী ম্যাচে পুরনো কোচকে হারানোর জন্য ফুটতে থাকা একদল মিজো-যুবক যেন টাট্টুঘোড়ার জন্য ছটফট করছেন। আর ঠিক তখন ঘামতে থাকা খালিদের মুখ থেকে বেরোয়, ‘‘আমি চাপে আছি ঠিক। কিন্তু নিজেকে প্রমাণও করতে চাই।’’

আরও পড়ুন: আজ শেষ আটে উঠলেও দুশ্চিন্তা থাকবে বাংলার

চাপটা কীসের? তাঁর পুরনো আইজল তো ভেঙে ছারখার। নিজে সঙ্গে করে লাল-হলুদে নিয়ে এসেছেন ওই টিমের হৃৎপিন্ড আল আমনা-সহ চার ফুটবলারকে। বাকিরা চলে গেছে নানা টিমে। পড়ে রয়েছেন শুধু এক বিদেশি আলফ্রেড জারিয়ান আর জনা তিনেক মিজো ফুটবলার? তাতেও ভয়? প্রশ্ন শুনে উইলিস প্লাজাদের কোচ বলে ওঠেন, ‘‘মিজো ছেলেদের আমি চিনি। ভয়ঙ্কর এনার্জি ওদের। শেষ পর্যন্ত দৌড়ে যাবে। ফিটনেস দুর্দান্ত। আর জানেনই তো, যে কোনও টুনার্মেন্টে প্রথম ম্যাচটা খুব ভাইটাল।’’ ক্লাব তাঁবুর টিকিট কাউন্টারে লম্বা লাইন পড়েছে। সে দিকে না তাকিয়ে পাশ দিয়ে টিমের দুই স্ট্রাইকার উইলিস প্লাজা আর চার্লস ডি’সুজাকে নিয়ে খালিদ ঢুকে যান সন্ধ্যার ফাঁকা ড্রেসিংরুমে। রাতে কী বোঝালেন কে জানে!

চোদ্দো বছর আই লিগ নেই লাল-হলুদের ট্রফি ক্যাবিনেটে। সে জন্যই ভাগ্য ফেরাতে কপাল ঠুকে খালিদকে এনেছেন কর্তারা। আর মজার ব্যাপার হল, প্রথম ল্যাপেই হাজির পাহাড়ি যোদ্ধারা। যাঁদের পর্তুগিজ কোচ পাওলো মেনেসেস আবার ঘাড় দুলিয়ে বলে গেলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের সব আমার নখদর্পণে। খোঁজ খবর নিয়ে এখানে এসেছি। যে কোনও চ্যাম্পিয়ন হতে চাওয়া দলের বিরুদ্ধে খেলার মজাটাই আলাদা। আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি।’’ পাওলো যা করেছেন সেটা খালিদ করে ফেলেছেন গত এক সপ্তাহ ধরে। তাঁর একশোটা ফোনের নব্বইটা গিয়েছে আইজল লিগের বিভিন্ন টিমের কাছে। এবং সেটা জানার পর ইস্টবেঙ্গল কোচ ৪-৫-১ ফর্মেশনে টিম সাজাচ্ছেন। সামনে শুধু প্লাজাকে রেখে মাঝমাঠে আল আমনার সঙ্গে তিনি খেলাতে চলেছেন দুই বিদেশি ইউসা কাতসুমি আর বাজোকে। কিন্তু গোল বেধেছে অন্য জায়গায়। শোনা যাচ্ছে, টিমে বহুদিন খেলা তিন সিনিয়র ফুটবলার অধিনায়ক অর্ণব মণ্ডল, গুরবিন্দর সিংহ এবং মহম্মদ রফিকের জায়গা হচ্ছে না প্রথম এগারোয়। যা নিয়ে ক্ষোভের রসদ একটু হলেও মজুত হচ্ছে মশালধারীদের ক্লাবে।

সে হোক, সৈয়দ নইমুদ্দিনের মন্ত্রে চলা খালিদ নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকাতেই বিশ্বাসী। আইজলকে না হারাতে পারলে, তাঁর স্বপ্নের প্রথম সিঁড়িটাই যে গুঁড়িয়ে যাবে। আর সে জন্যই আল আমনাকে টিমের হৃৎপিন্ড বানিয়ে ‘ধর্মযুদ্ধে’ নামছেন খালিদ। আর কী আশ্চর্য, আইজল অধিনায়ক আলফ্রেডও ভয় পাচ্ছেন সিরিয়ান আমনাকেই। দু’জনেই এক সঙ্গে খেলেছেন গত মরসুমে। এ বার প্রতিদ্বন্দ্বী। আর সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আলফ্রেডের মন্তব্য, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের সব পজিশনেই ভাল ফুটবলার আছে। কিন্তু আল আমনা এমন একজন অভিজ্ঞ ফুটবলার যে ম্যাচের চেহারাটাই মুহূর্তে বদলে
দিতে পারে।’’

আজ আই লিগে: ইস্টবেঙ্গল বনাম আইজল এফসি, যুবভারতী, রাত ৮-০০, স্টার স্পোর্টস টু চ্যানেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন