নতুন আলো দেখা এলকোর কাঁটা আজ মর্গ্যানের আবেগ

আই লিগে মোহনবাগানের কাছে হেরে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তখনও তিনি মুষড়ে পড়েননি। শেষ পাঁচ ম্যাচ (যার মধ্যে চারটে জয়) অপরাজিত থাকা ডুডু-র‌্যান্টিদের নিয়ে লাল-হলুদ জনতা ফের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার একটা ক্ষীণ আলো দেখছেন তখনও তিনি উচ্ছ্বাসে ভাসছেন না। তিনি ইস্টবেঙ্গল কোচ এলকো সতৌরি বরং বলছেন, ‘‘ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবছি। লিগ কিন্তু এখনও ওপেন।’’

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

তিন পয়েন্টের লক্ষ্যে মর্গ্যানরে বল দখল।

আই লিগে মোহনবাগানের কাছে হেরে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তখনও তিনি মুষড়ে পড়েননি।
শেষ পাঁচ ম্যাচ (যার মধ্যে চারটে জয়) অপরাজিত থাকা ডুডু-র‌্যান্টিদের নিয়ে লাল-হলুদ জনতা ফের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার একটা ক্ষীণ আলো দেখছেন তখনও তিনি উচ্ছ্বাসে ভাসছেন না।
তিনি ইস্টবেঙ্গল কোচ এলকো সতৌরি বরং বলছেন, ‘‘ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবছি। লিগ কিন্তু এখনও ওপেন।’’
আই লিগ যদি মেহতাব-অভিজিৎ মণ্ডলদের কাছে শুরুতে পিছিয়ে পড়ে ফের খেতাব ছিনিয়ে আনার একটা জবরদস্ত চ্যালেঞ্জ হয়, তা হলে তাঁদের কোচের কাছেও উপস্থিত একটা অন্য চ্যালেঞ্জ। ট্রেভর মর্গ্যানের সঙ্গে দ্বৈরথে এগিয়ে এলকো। ব্রিটিশ কোচের বিরুদ্ধে চার বারে তিন বার জিতেছেন ডাচ কোচ। কিন্তু তার পরেও ইস্টবেঙ্গল আর তাঁর পুরনো ক্লাব ইউনাইটেড স্পোর্টসের ওজন যে এক নয়, তা শুনতে হয়েছে এলকোকে।
নিজেদের ডিফেন্সিভ আর মিডল থার্ডে একাধিক ব্যাক পাস, স্কোয়ার পাস খেলতে খেলতে হঠাৎই থার্ডম্যান মুভে এলকোর টিমের গোলের দরজা খুলে ফেলার ট্যাকটিক্সও কোনও কোনও লাল-হলুদ কর্তার না-পসন্দ। যার উত্তর মাঠে দেওয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে ফুটছেন এলকো। সাংবাদিক সম্মেলনে বলেই ফেললেন, ‘‘আমাদের স্কোয়ার পাস, ব্যাক পাস নিয়ে সমালোচনার মাঝেই কিছুটা উন্নতি হয়েছে টিমের। সেটা ভাঙিয়েই এগোচ্ছি। দু’মাসের মধ্যে এর বেশি কিছু করার রাস্তা আমার অন্তত অজানা।’’

Advertisement

কিন্তু শনিবার তো সামনে সেই ডেম্পো। লাল-হলুদ কোচের জোব্বায় আই লিগ অভিষেক ম্যাচে যাদের র‌্যান্টি মার্টিন্সের ‘হাই ফাইভ’ দেখিয়ে ৫-১ জিতে গোয়া থেকে ফিরেছিলেন এলকো। পঞ্চান্ন দিন আগের চিত্রনাট্যেই এ বারও কি একই ‘ডেম্পো বধ’ পালার আসর বসবে শনি সন্ধেয়?

শুনেই সতর্ক ইস্টবেঙ্গল কোচ। ‘‘না, না। এ বার অন্য লড়াই। তখন ওদের চোট-আঘাত, কার্ড সমস্যায় অনেকে ছিল না। এ বার টোলগে, আমিরিরা থাকবে। সুতরাং লড়াই মোটেও সহজ নয়।’’

Advertisement

১৪ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলে চতুর্থ স্থানে থাকা ইস্টবেঙ্গল কোচের দিকে ফের তীক্ষ্ম প্রশ্ন— ডেম্পোর বর্তমান কোচ মর্গ্যান তো পরের মরসুমে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের রাডারে রয়েছেন। এটা কি আপনাকে বাড়তি চাপে রাখছে? ‘নো কমেন্টস’ বলে হনহন করে এ বার হাঁটতে থাকেন এলকো।

জানেন, তাঁর এই দলের কাঠামোটা মর্গ্যানের হাতেই প্রায় গড়া। জানেন, মেহতাব-খাবরাদের সব ইতিবাচক-নেতিবাচক ফ্যাক্টরই। ডেম্পোর মতোই ইস্টবেঙ্গলও এ মরসুমে ৪-৪-২ ডায়মন্ডেই খেলে আসছে। তাই মর্গ্যানের বিরুদ্ধের জয়ের রেকর্ডটা বাড়িয়ে রাখতে শনিবার ছক বদলের রাস্তায় হাঁটতে চলেছেন এলকো। ৪-৩-৩-এ চমকে দিতে চাইছেন প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কোচকে। এ দিন বিকেলে তারই জোরদার অনুশীলন হল। যেখানে খাবরাকে উইংয়ে রেখে অপারেট করানো হল। যাতে ডেম্পো মাঝমাঠ দিয়ে চাপ বাড়ালে উইং প্লে দিয়ে মন্দার, ফ্রান্সিসদের পেড়ে ফেলা। কারণ, নারায়ণ, কার্লোস হার্নান্দেজ, প্রবীর দাসদের না পাওয়ায় কিছুটা হলেও চাপে গোয়ানরা।

লাল-হলুদ কোচ বার্তোসদের এটা বলতেও ভুলছেন না, ‘‘মোহনবাগান যদি সামনের দু’একটা ম্যাচে খারাপ ফল করে, তা হলে তোমাদের সামনেই দরজা খুলে যাবে। সুতরাং, সব ভুলে জয়ের জন্য ঝাঁপাও।’’ যে ভোকাল টনিকের জোশে র‌্যান্টি বলে গেলেন, ‘‘রোজ রোজ তো পাঁচ গোল হবে না। তবে জিততেই হবে।’’

সেই জয়ের জন্যই দুই স্টপারের মধ্যে হঠাৎ-হঠাৎ তৈরি হওয়া ফাঁক, সেকেন্ড বল ধরার দুর্বলতা সব ঝাঁড়পোঁছ হল প্র্যাক্টিসে। এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট না এলে ফের ধোঁয়াশায় ঢেকে যাবে আই লিগ জয়ের রাস্তা। এলকো যদিও বলছেন, ‘‘শেষ দিন পর্যন্ত তাড়া করব।’’

তাড়া খেয়ে না হলেও ১৪ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগে ষষ্ঠ স্থানে থাকা ডেম্পো দলের কোচ মর্গ্যান এ দিন প্র্যাকটিস সেরেই টোলগে আর ক্যালাম অ্যাঙ্গাসকে নিয়ে ছুটেছিলেন সিটি সেন্টারে তাঁর এককালের প্রিয় রেস্তোরাঁয়। যাওয়ার আগে শনিবার ম্যাচ দর্শকশূন্য যুবভারতীতে হবে শুনেই চকচকে হাসি টোলগের মুখে। ‘‘সাপোর্টার না থাকলে তো হোম ম্যাচ খেলার সুবিধেই পাবে না ইস্টবেঙ্গল,’’ বললেন প্রাক্তন লাল-হলুদ স্ট্রাইকার।

লাল-হলুদ সমর্থকদের ডিএনএ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল টোলগের কোচ সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি পেটের গণ্ডগোলের দোহাই দিয়ে। যদিও সিটি সেন্টারের প্রিয় রেস্তোরাঁয় গুছিয়ে লাঞ্চ সারলেন দুই ছাত্রের সঙ্গে। ব্যথাটা পেটে না মনে জানতে চাইতেই মুখে হাইভোল্টেজ হাসি। কলকাতা ছাড়ার পর প্রথম বার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নামার আগে বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল আর ওয়েস্ট হ্যাম আমার জীবনে দুটো স্পেশ্যাল আবেগ। তাই চুপ থাকতে হয় কখনও কখনও।’’

আবেগই কি তা হলে এই ম্যাচের রিংটোন হয়ে বাজবে শনিবার? আই লিগ, চ্যালেঞ্জ, রেকর্ড, তিন পয়েন্ট —সব যেখানে তুচ্ছ!

মোদ্দা কথা, যুবভারতীতে আজ ইস্টবেঙ্গলের লড়াই ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গেই!

শনিবারে আই লিগ

ইস্টবেঙ্গল-ডেম্পো (যুবভারতী, ৪-৩০)

মোহনবাগান-পুণে এফসি (বালেওয়াড়ি, ৭-০০)

লাজং-সালগাওকর (শিলং, ৪-৩০)।

ছবি: উৎপল সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন