Euro Cup 2020

EURO 2020: ওয়েম্বলির গর্জন হ্যারিদের জন্য সেরা আশীর্বাদ

আর্জেন্টিনা ও জার্মানি— ইংল্যান্ডের মানুষ কখনওই এই দুই দেশের বিরুদ্ধে হার মেনে নিতে পারেন না। সেই মানসিকতা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে।

Advertisement

ট্রেভর জেমস মর্গ্যান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২১ ০৭:২৫
Share:

মহড়া: গোল না পেলেও প্রস্তুতিতে খামতি নেই কেনের। ছবি রয়টার্স।

ইউরো ২০২০-র শেষ ষোলোয় ইংল্যান্ড বনাম জার্মানি। আরও একটা বিনিদ্র রজনী কাটানোর আশঙ্কা। ১৯৬৬-র বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে ১৯৯৬ সালের ইউরো সেমিফাইনাল— ৩০ বছরের ব্যবধানে দেখেছিলাম এই মহারণকে কেন্দ্র করে কী ভাবে বদলে গিয়েছিল লন্ডনের আবহ।

Advertisement

১৯৬৬ সালে আমার বয়স ছিল ১০ বছর। তখন আমরা লন্ডনেই থাকতাম। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ফাইনালে মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ। ইংল্যান্ড বনাম জার্মানি ম্যাচের আগে টানটান উত্তেজনা। আমার বাবা ও কাকা ফাইনাল দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন। মাঠে গন্ডগোল হতে পারে, এই আশঙ্কায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। দিদিমার বাড়িতে টিভিতে খেলা দেখেছিলাম। জার্মানিকে ৪-২ হারিয়ে ইংল্যান্ড প্রথম বার বিশ্বকাপ জয়ের পরে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল সর্বত্র। আমরা রাস্তায় নেমে ফুটবল খেলতে শুরু করে দিয়েছিলাম। টিভিতে দেখেছিলাম জার্মান সমর্থকদের জেফ হার্স্টের গোল নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেওয়া। এত দিন পরেও ছেষট্টির ৩০ জুলাইয়ের কথা মনে পড়লে শিহরণ জাগে শরীরে।

১৯৯৬ ইউরো সেমিফাইনালের সময় আমি সদ্য ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে কোচিং শুরু করেছি। সেবারও খেলা ছিল ওয়েম্বলিতে। আমরা একশো শতাংশ নিশ্চিত ছিলাম, জার্মানিকে হারিয়ে ইংল্যান্ডের ফাইনালে ওঠার ব্যাপারে। গ্রুপ পর্বে নেদারল্যান্ডসকে ৪-১ চূর্ণ করেছিলাম আমরা। অ্যালান শিয়েরার, পল গ্যাসকোয়েন, টেডি শেরিংহ্যাম— দুর্ধর্ষ দল ইংল্যান্ডের। রবি ফাওলারের মতো স্ট্রাইকারও প্রথম দলে নিয়মিত ছিলেন না। এখনকার কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও ছিলেন সেই দলে।

Advertisement

ইংল্যান্ড বনাম জার্মানি সেমিফাইনাল সে দিন শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধে সাড়ে সাতটায়। বিশেষ কারণে আমি সে দিন লন্ডনে ছিলাম না। দুপুরে শহর ছাড়ার সময়ই দেখেছিলাম, উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। রাস্তা, বাড়ি, গাড়ি, বাস ইংল্যান্ডের জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। রেস্তরাঁ, পানশালায় ভিড়। মনে হচ্ছিল যেন খেলা শুরু হওয়ার আগেই ইংল্যান্ড ম্যাচটা জিতে গিয়েছে। ভাবতেও পারিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছবিটা এ ভাবে বদলে যাবে। টাইব্রেকারে সাউথগেট গোল করতে ব্যর্থ হওয়ায় জার্মানি জিতেছিল। দেশ জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। সেই সঙ্গে চলছিল সাউথগেটের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়া।

আর্জেন্টিনা ও জার্মানি— ইংল্যান্ডের মানুষ কখনওই এই দুই দেশের বিরুদ্ধে হার মেনে নিতে পারেন না। সেই মানসিকতা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে হার, ৯৬-র ইউরো এবং ২০১০ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে হারের প্রসঙ্গ উঠলেই রক্ত গরম হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড সমর্থকদের। এই মুহূর্তে আমি রয়েছি ইংল্যান্ড থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অস্ট্রেলিয়ার পারথে। মানসিক ভাবে যেন পৌঁছে গিয়েছি লন্ডনে। সেই একই রকম উত্তেজনা অনুভব করছি। কারণ খেলা হবে ওয়েম্বলিতে। নিজেদের সমর্থকদের সামনে খেলবে ফিল ফডেন-রা। আমি নিশ্চিত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের গর্জন ওদের উজ্জীবিত করবে। যা জার্মানিকে সব সময় চাপে রাখবে। সেই সঙ্গে উদ্বেগও বাড়ছে।

এ বার লড়াই অনেক বেশি কঠিন বলেই আমি করি। প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হার দেখে যাঁরা মনে করেছিলেন জার্মানির পক্ষে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়, তাঁদের ভুল ভাঙতে বেশি দেরি হয়নি। পর্তুগালের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল থোমাস মুলাররা। আমি ইংল্যান্ডের সমর্থক হলেও জার্মানির ফুটবলারদের লড়াকু মানসিকতাকে সম্মান করি। তার উপরে ওয়াকিম লো-র মতো কোচ রয়েছেন। টানা পনেরো বছর ধরে জার্মানির দায়িত্বে। ইউরোর পরেই জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। যে কোনও মূল্যে শেষ প্রতিযোগিতা জিততে চাইবেন লো। চোট সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে মুলার। জার্মানি দলে ওর মতো ভয়ঙ্কর ফুটবলার খুব কম রয়েছে। মুলার পাশে পাচ্ছে টোনি খোস, কাই হাভার্ৎজ়, লিয়ন গোরেৎজ়ার মতো সতীর্থদের।

ইংল্যান্ডের প্রধান সমস্যা গোল করতে না পারা। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে গোল করেছে মাত্র দু’টি! দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার ও অধিনায়ক হ্যারি কেন এখনও পর্যন্ত গোল করতে পারেনি। ভাবা যায়? এই ম্যাচে তো আরও কঠিন হবে ওর কাছে। কারণ, জার্মান রক্ষণ অনেক বেশি শক্তিশালী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেলসির হয়ে খেলে আন্তোনিয়ো রুডিগার। ও খুব ভাল করেই জানে, কী ভাবে আটকাতে হয় হ্যারিকে। এ ছাড়াও গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার তো অসাধারণ। ইংল্যান্ডকে তাই অনেক বেশি অঙ্ক করে খেলতে হবে। আমার মনে হয় এই ম্যাচে ৪-৪-২ ছকে দলকে খেলানো উচিত সাউথগেটের। তা হলে হ্যারির উপরে চাপ একটু কম পড়বে। অবশ্যই রাখা উচিত বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে জার্মান বুন্দেশলিগায় খেলা জাডন স্যাঞ্চোকে। ও খেললে জার্মান রক্ষণ সমস্যায় পড়বে। কিংবদন্তি য়ুর্গেন ক্লিন্সম্যানও একই কথা বলেছেন।

গ্রুপ পর্বে পর্তুগালকে গতিতেই শেষ করে দিয়েছিল জার্মানি। এই ম্যাচে শুরুতেই ওদের ছন্দ নষ্ট করে দিতে হবে রাহিম স্টার্লিংদের। প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে উঠতে দেওয়া চলবে না লেফ্ট ব্যাক রবিন গোসেনস-কে। সব সময় নজরে রাখতে হবে মুলারকে। ও হচ্ছে নিঃশব্দ ঘাতক। কখন যে কী করবে, কেউ বুঝতেও পারবে না। আমার মনে হয়, ইংল্যান্ডের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত মাঝমাঠের দখল নেওয়া। সাউথগেটের উচিত হ্যারিকে বলা, তুমি সর্বক্ষণ জার্মান ডিফেন্ডারদের বিরক্ত করে যাও। নির্ধারিত সময়ে খেলা শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে নামা উচিত ইংল্যান্ডের। ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে কিন্তু সুবিধে হবে জার্মানিরই।

গত শুক্রবারই ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া ওয়েম্বলিতে টাইব্রেকারে বিপর্যয়ের যন্ত্রণা নিশ্চয়ই এখনও ভোলেননি সাউথগেট!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন