বিরল নজিরের দিকে

‘ভাল খেলতে না পারলে ঘরের ছেলেরও দাম নেই’

দশ বছর খেলা হয়ে গেল লাল-হলুদ জার্সি পরে। তবুও তাঁকে কেউ ‘ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে’ বলে ডাকে না এখনও। ইস্টবেঙ্গলের এ বার লিগ জিতলে বিরলতম সম্মানের অধিকারী হবেন। টানা সাত বার কলকাতা লিগ জয়ের যে দুর্লভ কৃতিত্ব ছুঁতে চলেছে লাল-হলুদ, তাঁর সব কটিতেই খেলেছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share:

মেহতাব

দশ বছর খেলা হয়ে গেল লাল-হলুদ জার্সি পরে। তবুও তাঁকে কেউ ‘ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে’ বলে ডাকে না এখনও।

Advertisement

ইস্টবেঙ্গলের এ বার লিগ জিতলে বিরলতম সম্মানের অধিকারী হবেন। টানা সাত বার কলকাতা লিগ জয়ের যে দুর্লভ কৃতিত্ব ছুঁতে চলেছে লাল-হলুদ, তাঁর সব কটিতেই খেলেছেন তিনি। তবুও গ্যালারিতে এখনও আওয়াজ ওঠেনি ‘সাতে সাত মেহতাব’।

ধারাবাহিকতায় তাঁর ধারে কাছে এখনকার টিমের কেউ নেই তবুও তাঁকে নিয়ে সে ভাবে মাতে না ইস্টবেঙ্গলের জনতা। যেমন মাতে র‌্যান্টি মার্টিন্স, চিডিদের নিয়ে।

Advertisement

এ সব জানার পরও মেহতাব হোসেনের কোনও আক্ষেপ নেই। বরং বছর বত্রিশের ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠের জেনারেলের কাছে এ সব প্রসঙ্গ তুললেই বলে দেন, ‘‘পারফর্ম না করতে পারলে ঘরের ছেলেরও কোনও দাম থাকে না। কে আমাকে ঘরের ছেলে বলল বা বলল না সেটা নিয়ে কখনও ভাবি না। ভাববও না। আমার সবসময় লক্ষ্য থাকে একটাই- আরও ভাল খেলতে হবে।’’

আজ বৃহস্পতিবার মহমেডানকে হারাতে পারলেই টানা সাত বার লিগ জয়ের উচ্ছ্বাস আছড়ে পড়বে লাল-হলুদ তাঁবুতে। সেই সম্ভাবনার আগের দিন অবশ্য এই জয়কে ‘আক্ষেপের লিগ জয়’ বলতে চান মেহতাব। ‘‘ডার্বি না খেলে কলকাতা লিগ জিতলে সেটা যেন কেমন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মোহনবাগান কী জন্য লিগ খেলল না, সেটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু ম্যাচটা হলে আক্ষেপটা থাকত না। ডার্বি জেতার পর লিগ জিতলে সেটা আরও তৃপ্তির হত।’’ যদি সাত বার লিগ জেতেন তবে কোন বছরের জয়কে সেরা বাছবেন জানতে চাইলে মেহতাব বলে দেন ২০১০-এর কলকাতা লিগ জয়কে। ‘‘সে বারই মনে হয় সবথেকে মসৃণ ভাবে লিগ জিতেছিলাম আমরা। ট্রেভর মর্গ্যানের কোচিংয়ে সেই টিমটা আমাদের সেরা ছিল। আমার সময়ের সেরা দল বলব ওটাকেই। উগা, টোলগে, পেন ছিল। লাল-হলুদে আমার সোনার বছর ওটাই। প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার-সহ মনে হয় চারটে পুরস্কার পেয়েছিলাম।’’

আর দুঃখের বছর? ‘‘আর্মান্দো কোলাসো কোচ থাকার সময়। ডার্বি তে চোট পেলাম। এ রকম খারাপ সময় আমার জীবনে আসেনি কখনও। অনেকেই বলেছিল, আমি নাকি শেষ হয়ে গিয়েছি। যত শুনতাম তত আমার জেদ আরও বেড়ে যেত। আসলে আমার খেলা নিয়ে কেউ গালাগালি বা সমালোচনা করলে আমার ভাল খেলার জেদ আরও বেড়ে যায়। সেটাই আমার এই ধারাবাহিক ভাল খেলার রসায়ন বলতে পারেন। চোটের সময় প্রতিদিন ফিজিক্যাল ট্রেনিং করতাম আর ভাবতাম, একবার মাঠে নামি তারপর দেখিয়ে দেব আমি কে?’’

মেহতাব ফিরে এসেছেন। এ বারও লাল-হলুদের লিগ জয়ের প্রতিটি ম্যাচে তাঁর পারফরম্যান্স চমকে দিয়েছে সকলকে। বয়সটা আপনাকে ভাবায় না? আর কত দিন খেলবেন? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেন মেহতাব। ‘‘কেরল ব্লাস্টার্সে খেলার সময় কোচ ডেভিড জেমস আমাকে বলেছিলেন, তোমাদের এখানে বয়স নিয়ে এত কথা হয় কেন? বত্রিশে ইউরোপে প্রচুর ফুটবলার খেলে। ইনিয়েস্তা, পুওল, জন টেরি যদি খেলতে পারেন তা হলে আমি পারব না কেন? আরও বছর দু’য়েক তো খেলার ইচ্ছেই আছে।’’ স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। তাই টেনশনে আছেন। তার মধ্যেই মহমেডান ম্যাচ নিয়ে ভাবছেন। ‘‘এ বারের লিগটা বেশ কঠিন ছিল। পুণে, গোয়া বা দেশের অনেক ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার অনেক ফুটবলার এ বার কলকাতা লিগের অনেক টিমে খেলছে। ফলে জিততে বেশ সমস্যা হচ্ছে। মহমেডান ম্যাচ জিতে লিগ জয়ের টেনশনটা তাই শেষ করতে চাই। কিন্তু কাজটা সহজ হবে বলে মনে করি না।’’

মোহনবাগান সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করছেন, ‘‘কলকাতায় ইস্টবেঙ্গল সুন্দর। ভারতে মোহনবাগান।’’ এটা নিশ্চয়ই দেখেছেন? মেহতাবের জবাব, ‘‘অনেকদিন ইস্টবেঙ্গল আই লিগ পায়নি ঠিক। তবে আই লিগ রানার্স হয়েছি। ফেড কাপ পেয়েছি চার বার। এএফসি কাপের সেমিফাইনাল খেলেছি। ওসব কটাক্ষ তাই গায়ে মাখছি না। ইতিহাস দেখলেই তো সব মিটে যায়।’’

ফিলিপ রাইডার লাল-হলুদে কোচ থাকার সময় তাঁকে প্রথম পজিশন বদলে খেলান ডিফেন্সিভ স্ক্রিনে। এখনও সেখানেই খেলছেন। মেহতাব বলছিলেন, ‘‘আসলে রাইডারস্যার আমাকে বলতেন টিমের পিভট হতে। যেখান থেকে আক্রমণটা শুরু হবে। বিপক্ষের আক্রমণ আটকে যাবে। সেটাই মাথায় রাখি নামার সময়। এখনও।’’

হেপ্টা লিগ জিতলে কাকে উৎসর্গ করবেন? মেহতাব এ বার সতর্ক। ‘‘এখনও ভাবিনি। আগে তো জিতি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন