Rishabh pant

রাজকোটে নেই ঋষভ, গোধূলিতে পরীক্ষা ব্যাটিংয়ের

ভারতীয় ক্রিকেট দল যখন বুধবার দুপুর-দুপুর রাজকোটে এসে পৌঁছল, ঋষভ তখন মুম্বইয়ের হাসপাতালে কনকাশনের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

কৌশিক দাশ

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:১৮
Share:

হতাশ: দ্বিতীয় ওয়ান ডে-তে খেলবেন না ঋষভ পন্থ। ফাইল চিত্র

জামনগর হাইওয়ের উপরে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার স্টেডিয়ামকে পিছনে ফেলে আধ ঘণ্টা গাড়িতে গেলেই রাজকোট শহর। আর শহরে ঢোকার মুখে হোটেলটা দেখলে আলাদা করে কিছু মনে হবে না। ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাট আউট রয়েছে, কিন্তু নিরাপত্তার নিশ্ছিদ্র বলয় নেই। যা সাধারণত বিরাট কোহালিদের ঘিরে থাকে। ভারতীয় দল যে হোটেলে উঠেছে, সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তার চারপাশে এ রকম দৃশ্য একটু অস্বাভাবিক তো বটেই।

Advertisement

তবে শুধু হোটেলের পারিপার্শ্বিক ছবিটা নয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতীয় ক্রিকেট যে ধাক্কাটা খেয়েছে, তার মধ্যেই বা স্বাভাবিকত্ব কোথায়? না হলে ২৫৫ রান তুলে ফেলল বিপক্ষ আর ভারতীয় বোলাররা কোনও উইকেট পেলেন না? যে বোলিং লাইন আপে আবার যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, কুলদীপ যাদবের মতো বোলার আছেন। তা, বিপক্ষ দলের নাম যতই অস্ট্রেলিয়া হোক না কেন! ১২ ওভারের বেশি বাকি থাকতে হারতে হচ্ছে কোহালির দলকে, এই দৃশ্যও তো রীতিমতো অস্বাভাবিক। তবে এই রকম হারের পরেও শুক্রবারের দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্যাচে গ্যালারি ভরে যাবে। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার— সব টিকিটই নাকি শেষ!

এরই মধ্যে আবার মিচেল স্টার্কের বলে ঋষভ পন্থ হেলমেটে এমন আঘাত খেলেন যে, শুধু মুম্বই ম্যাচেই ফিল্ডিং করতে পারলেন না, তা নয়। রাজকোট ওয়ান ডে থেকেও ছিটকে গেলেন। ভারতীয় ক্রিকেট দল যখন বুধবার দুপুর-দুপুর রাজকোটে এসে পৌঁছল, ঋষভ তখন মুম্বইয়ের হাসপাতালে কনকাশনের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। রাতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড জানিয়ে দিল, ঋষভের স্ক্যান রিপোর্টে কোনও সমস্যা নেই। তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। তবে রাজকোট ম্যাচে এই উইকেটকিপার খেলবেন না। তাঁকে বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমমিতে পাঠানো হচ্ছে রিহ্যাবের জন্য। সব কিছু ঠিক থাকলে বেঙ্গালুরুতে সিরিজের শেষ ম্যাচে আবার তাঁকে খেলানো হতে পারে। ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে এ দিন পর্যন্ত কোনও বিকল্প উইকেটকিপারের কথা ঘোষণা করা হয়নি। কে এল রাহুল যে-হেতু নিয়মিত উইকেটকিপার নন, তাই এই রকম মরণ-বাঁচন ম্যাচে তাঁর উপরে ভরসা রাখা হয় কি না, সেটাই দেখার। রাজকোটে হারলে কিন্তু পরপর দু’বার ভারতের মাটি থেকে ওয়ান ডে সিরিজ জিতে নেবে অস্ট্রেলিয়া।

Advertisement

আরও পড়ুন: ডার্বির মহড়ায় ইস্টবেঙ্গল জুড়ে শুধুই অন্ধকার

ঋষভের চোট পাওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিকতা না থাকতে পারে, কিন্তু তাঁর এই চোট ঘিরে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা কিছুটা অস্বাভাবিক তো বটেই। এই কিছু মাস আগে সাড়া জাগিয়ে যাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ, যাঁকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মতো কিংবদন্তি স্বয়ং, তাঁর চোট পাওয়া দেখে এখন কেউ কেউ বলছেন, এ তো শাপে বর হয়ে গেল! এ বার রাহুল কিপিং করবে আর ছ’নম্বরে মণীশ পাণ্ডের মতো এক জন ব্যাটসম্যান খেললে ব্যাটিংটা মজবুত হবে। এখন দেখার, বিকল্প কাউকে রাজকোট ম্যাচে নিয়ে আসা হয়, না মণীশ বা কেদার যাদবকে ছ’নম্বরের জন্য ভাবা হয়।

বিকেলের দিকে স্টেডিয়ামে পৌঁছনোর ফলে পিচ ঢাকা থাকায় কথাটা যাচাই করা গেল না। কিন্তু স্থানীয় মাঠকর্মী যা বললেন, তাতেও রীতিমতো অস্বাভাবিকতার ছোঁয়াই থাকছে। নাম প্রকাশ করা যাবে না শর্তে ওই কর্মী বলে ফেললেন, ‘‘পিচে কিন্তু ভালই ঘাস আছে।’’ মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, কেন রিচার্ডসনরা আছেন জেনেও ঘাস! বলেন কী? সঙ্গে সঙ্গে জবাব আছে, ‘‘ভারতীয় দল কাল মাঠে আসুক। তার পরে ওরা যা বলবে, সেটাই করা হবে।’’

আরও পড়ুন: একটা বাজে দিন, ধৈর্য ধরতে বলছেন সৌরভ

ভারতীয় দলকে কিন্তু আরও একটা ব্যাপার নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাজকোটে শিশিরটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ হবে না। যেটুকু শিশির পড়বে, তা রাসায়নিক স্প্রে দিয়ে সামলানো যাবে। কিন্তু শিশিরের চেয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে রাজকোটের পড়ন্ত বিকেল বা গোধূলির সময়টা।

দিনরাতের টেস্ট ম্যাচের সময় গোধূলিটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাওয়ার একটা কারণ ছিল, গোলাপি বল। যা ওই আলোয় দেখা একটু কঠিন ছিল। কিন্তু রাজকোটে সমস্যাটা কী? সৌরাষ্ট্র রঞ্জি দলের এক সময়কার অধিনায়ক এবং এই ক্রিকেট সংস্থার প্রধান জয়দেব শাহ ব্যাখ্যাটা দিলেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছিলেন, ‘‘এখন আমাদের এখানে আকাশটা খুব পরিষ্কার। যার ফলে সন্ধ্যার দিকে ঠান্ডাটা একটু বেশি পড়ছে আর হাল্কা হাওয়া দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ওই সময় কিন্তু বলটা একটু বেশি সুইং করছে। তাই ব্যাটসম্যানদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।’’ বোর্ডের প্রাক্তন সচিব নিরঞ্জন শাহের ছেলের কথাটা যদি ঠিক হয়, তা হলে কিন্তু টস জিতে পরে ব্যাট করার কাজটা বাগানে বেড়ানোর মতো সহজ হবে না।

সন্ধ্যার দিকে স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরনোর মুখে আরও এক বার মাঠে ঢুকে পড়া গেল। হাঁটতে হাঁটতে যাওয়া গেল একেবারে পিচের কাছাকাছি। কোনও বাধা পাওয়া গেল না!

সত্যি, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতীয় ক্রিকেট ঘিরে অস্বাভাবিক ঘটনা যেন ঘটেই চলেছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement