ফ্রান্সের জার্সিতে জিতেছেন বিশ্বকাপ। ইউরোও। ফুটবলবিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার দারুণ মুডি। এই খুশি তো পরক্ষণেই বিরক্ত। নিজেই জানাচ্ছেন স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান ভাষা জানেন। বলতে পারেন না শুধু ইংরেজি। সে জন্যই নাকি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যান। এহেন দাভিদ ত্রেজেগুয়ে দোভাষী সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার দুপুরে পুণে সিটির টিম হোটেলে বসলেন আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাত্কার দিতে। প্রতিটা প্রশ্ন শুনলেন মন দিয়ে। উত্তর দেওয়ার সময় কখনও মাথা চুলকোলেন। কখনও বিরক্তও হলেন।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ, ইউরো কিছুই তো অধরা নেই। তবু এই বয়সে আইএসএলে? রবার্ট পিরেস, সিলভেস্ত্রের মতো বন্ধুদের জন্যই কি?
ত্রেজেগুয়ে: না না, কোনও বন্ধুর জন্য নয়। ভারতে ফুটবল খেলাটার প্রচারের জন্যই আসা। বিশ্ব ফুটবল মানচিত্রে তো এ দেশের জায়গা নেই। তাই সাহায্য করতে এসেছি। আইএসএল-টা সেটার মাধ্যম।
প্র: কলকাতা বনাম পুণের মোড়কে তো কাল আপনার সঙ্গে লড়াই আসলে লুই গার্সিয়ার। মানেন?
ত্রেজেগুয়ে: আমি খেলব কি না কোচ ঠিক করবেন। ফলে গার্সিয়ার সঙ্গে লড়াই নিয়ে ভাবছি না। তবে যদি খেলি তা হলে আমিই হয়তো দেখবেন তারকা হয়ে গিয়েছি। ম্যাচটাও বদলে যাবে।
প্র: আপনি পুণের মার্কি ফুটবলার। গোলও পেয়েছেন। তবু এই টুর্নামেন্টে মার্কিদের চাপ কি বেশি?
ত্রেজেগুয়ে: পেশাদারদের চাপ নিয়েই খেলতে হয়। ও সব চাপ আমার নেই। খেললে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, এটাই জানি।
প্র: দেল পিয়েরো, রবার্ট পিরেস, ডেভিড জেমসের মতো, আপনিও বেশির ভাগ ম্যাচে পুরো সময় খেলছেন না— আইএসএলের বিভিন্ন টিমের মার্কিরা তো অফ ফর্মে? নাম আছে, খেলা নেই?
ত্রেজেগুয়ে: (কিছুটা রেগে গিয়ে) এখানে আমরা কী খেললাম সেটা বড় কথা নয়। এখানে আমরা তারকা। আমরা মাঠে নামলেই সবাই দেখবে। ফুটবলের উন্নতি করতে এসেছি। আমাদের ফুটবলের ইতিহাস ভুলে যাবেন না। ওটাই আসল।
প্র: কলকাতার আটলেটিকোর শক্তিটা ঠিক কোথায় লুকিয়ে?
ত্রেজেগুয়ে: ব্যালান্সড দল। অ্যাওয়ে ম্যাচে বেশি ভাল খেলছে। যে দুটো টিমকে এখনও চ্যাম্পিয়নের মতো দেখাচ্ছে তাদের একটা কলকাতা। অন্যটা চেন্নাইয়ান। তবে কাল কিন্তু আমাদের পয়েন্ট পেতেই হবে। সেটা মাথায় রাখছি। তা ছাড়া কলকাতাকে হারানোর স্বাদ তো আমাদের আছেও।
প্র: ফিকরু তো আবার গোলের মধ্যে। ওর জন্য আলাদা কোনও প্ল্যান?
ত্রেজেগুয়ে: কে? ফিকরু? কলকাতার স্ট্রাইকার? ওকে নিয়ে ভাবার জন্য আমাদের কোচ আছে। আমি ভাবব কেন? কোচকে বরং প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করুন।
প্র: আপনি, ডুডু, ব্রুনো সিরিলো, কোস্তাস, নতুন আসা দুর্ধর্ষ গতির উইঙ্গার পেন্যান্ট? পুণেও তো ব্যালান্সড দল? তাও টেবিলে এত পিছনে কেন?
ত্রেজেগুয়ে: ফুটবলে সেরা দল সব সময় জেতে না। আমাদের টিম ভাল। তবে মাঠে খেলাটাই শেষ কথা।
প্র: পুণের পুরো টিম ফিওরেন্তিনায় গিয়ে প্রি-সিজন ট্রেনিং করে এসেছে। কোনও লাভ হল কী?
ত্রেজেগুয়ে: ভারতীয় ফুটবলাররা লাভবান হয়েছে। তবে ওদের আরও ভাল করতে হবে। প্রতিদিন শিখতে হবে।
প্র: আপনার বিরাট সফল কেরিয়ারে ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে পেনাল্টি মিস-ই কি সবচেয়ে বড় চোনা? সবচেয়ে দুঃখের দিনও কি?
ত্রেজেগুয়ে: কেউ ইচ্ছে করে পেনাল্টি নষ্ট করে না। পেনাল্টিতে গোল করার মতোই মিসটাও খেলার অঙ্গ। কোনও দুঃখ নেই। কত কী-ই তো হয় না।
প্র: ২০০০ ইউরো ফাইনালে আপনার সোনালি গোলেই ফ্রান্স হারিয়েছিল ইতালিকে। সেটাই কি ফুটবলজীবনের সেরা দিন?
ত্রেজেগুয়ে: না, সেটাও নয়। আটানব্বই বিশ্বকাপ জেতার দিনটাই জীবনের সেরা। ফুটবলে ওটাই তো সর্বোচ্চ চুড়ো।
প্র: কিন্তু ইউরো জেতার গোল্ডেন গোলটা?
ত্রেজেগুয়ে: ওটা আমার অসংখ্য ভাল গোলের মধ্যে সবার আগে রাখব। সেরা গোলই বলব। ওই গোলটা না করলে ফ্রান্স হয়তো সে বার ইউরো জিতত না।
প্র: দেল পিয়েরোর মতো আপনিও জুভেন্তাসের কিংবদন্তি। কিন্তু ইদানীং সেরি এ-র এমন হাল কেন?
ত্রেজেগুয়ে: এটা পুরোপুরি অর্থনৈতিক সমস্যা। এই জায়গাটাতেই এগিয়ে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা।
প্র: আপনার তিন বন্ধু থিয়েরি অঁরি, দেল পিয়েরো আর জিদান। যাঁদের সঙ্গে খেলে প্রচুর ট্রফি জিতেছেন। এখন রুম পার্টনার চাইলে কাকে বাছবেন?
ত্রেজেগুয়ে: (হেসে) ওদের সবার সঙ্গে আমরা বহু সুখ-দুঃখের স্মৃতি আছে। বাছা কঠিন। তবে এক জনকে চাইলে অঁরিকে বাছব।
প্র: তা হলে পরের আইএসএলে অঁরি আসছেন খেলতে?
ত্রেজেগুয়ে: জানি না, বলতে পারব না। ওর সঙ্গে আইএসএল নিয়ে কথা হয় না।
প্র: ভারতের কোন খাবার আর জায়গাটা ভাল লাগল?
ত্রেজেগুয়ে: (মজা পেয়ে) ডাল মাখানি খেতে বেশ ভাল। কম মশলার খাবার খাই। আর গোয়া জায়গাটা খুব ভাল লাগল।
প্র: মেসি, রোনাল্ডো, নেইমার—এদের মধ্যে কাকে এগিয়ে রাখবেন?
ত্রেজেগুয়ে: তিন জনই খুব ভাল। ও ভাবে তুলনা হয় না। তবে এক জনকে বাছতে বললে বলব, মেসি। হাজার হোক ও আমার বাবার দেশ আর্জেন্তিনারই ছেলে তো!