KKR

Venkatesh Iyer: রাসেলের পরামর্শে ভয়কে জয় করে নায়ক বেঙ্কটেশ

মাত্র এক ম্যাচের বিস্ময়-ব্যাটার হিসেবেও ধরা যাবে না তাঁকে। আইপিএলে দশ ম্যাচে তাঁর মোট রান ৩৭০। গড় ৪১.১০, স্ট্রাইক রেট ১২৮.৫।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৪১
Share:

উত্থান: আইপিএলে দশ ম্যাচে ৩৭০ রান করেছেন বেঙ্কটেশ। ছবি: টুইটার।

স্বপ্নের অভিষেক! মধ্যপ্রেদেশের তরুণ অলরাউন্ডারের আবির্ভাব বদলে দিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের মানসিকতা। মাত্র এক ম্যাচের বিস্ময়-ব্যাটার হিসেবেও ধরা যাবে না তাঁকে। আইপিএলে দশ ম্যাচে তাঁর মোট রান ৩৭০। গড় ৪১.১০, স্ট্রাইক রেট ১২৮.৫। ফাইনালে রান তাড়া করার সময় তিনিই নাইট সমর্থকদের মধ্যে জেতার বিশ্বাস তৈরি করেছিলেন। তিনি— বেঙ্কটেশ আয়ার। বর্তমানে ভারতীয় দলের নেট বোলার। মঙ্গলবার মধ্য রাতে টিম হোটেল থেকেই আনন্দবাজারকে হোয়াটসঅ্যাপে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়ে
গেলেন তিনি।

Advertisement

প্রশ্ন: ফাইনালে ব্যাট হাতে দুরন্ত শুরু করার পরে ম্যাচ জেতাতে পারবেন বলে মনে হচ্ছিল?

বেঙ্কটেশ: আইপিএল ফাইনালে দলকে জিতিয়ে ফিরতে না পারার আফসোস হয়তো সারা জীবন থেকে যাবে। শুভমনের সঙ্গে ব্যাট করার সময় দু’জনেই বলাবলি করছিলাম, আরেকটু উইকেটে থাকলেই ট্রফি আমাদের। তবে উইকেটে থিতু হয়ে আউট হওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বড় মঞ্চের দরজা না হলে খুলবে না।

Advertisement

প্র: বেঙ্কটেশের মধ্যে আমূল পরিবর্তন এলো কী করে? প্রথম ম্যাচ থেকেই এতটা দাপটের সঙ্গে খেলা আদৌ সম্ভব?

বেঙ্কটেশ: পুরো কৃতিত্ব আন্দ্রে রাসেল ও আমাদের কোচের (ব্রেন্ডন ম্যাকালাম)। রাসেলই প্রথম বার আমার শট খেলার ভঙ্গিতে মুগ্ধ হয়েছিল। কোচকে পরামর্শ দিয়েছিল আমার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার। ও বলে দিয়েছিল, বিপক্ষ দেখে ব্যাট করা যাবে না। বলের মান অনুযায়ী খেলতে হবে। মনে করতে হবে বাইশ গজে আমিই রাজা। এই মানসিকতা আমার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার পর থেকেই নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেতে শুরু করি।

প্র: ওপেনারদের কী ধরনের পরামর্শ দিতেন ম্যাকালাম?

বেঙ্কটেশ: বাজ় (ম্যাকালাম) নিজে যে গতিতে ইনিংস সাজাতেন, তা কারও অজানা নয়। মর্গ্যান আমাদের বলে দিয়েছিলেন, কোচ চান তাঁর প্রথা মেনে কেউ শুরু থেকেই বিপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করুক। আমিই সেই দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসি।

প্র: রাসেল নারাইনের মতো অলরাউন্ডারকে পাশে পেয়ে কতটা সুবিধে হয়েছে?

বেঙ্কটেশ: প্রচুর মূল্যবান পরামর্শ পেয়েছি। কঠিন পরিস্থিতিতে কী ভাবে নির্বিকার থাকা যায়, তা নারাইনের চেয়ে ভাল কেউ জানে না। রাসেলের থেকে শিখেছি, কী ভাবে বিপক্ষের উপরে সেই চাপ ফিরিয়ে দিতে হয়। ভবিষ্যতে যা খুব কাজে লাগতে পারে।

প্র: ভারতীয় দলের নেট বোলার হিসেবে সুযোগ পাওয়ার পরে কী রকম অনুভূতি হয়েছিল?

বেঙ্কটেশ: সে দিনটি মনে আছে। আমাদের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ ছিল। খবরটি পেয়ে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। মা ও বাবা প্রচণ্ড খুশি হয়েছেন। প্রথম বার ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকতে পারার অনুভূতিও আলাদা।

প্র: প্রথম পর্বে সাত ম্যাচে মাত্র দু’টি জেতার পরে দ্বিতীয় পর্বে কী করে ঘুরে দাঁড়াল দল?

বেঙ্কটেশ: প্রথম পর্বের পরে চার মাসের ফাঁকা সময়টা আমাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। প্রত্যেকে নাইট সংসারে এসেছিল লিগ তালিকার অঙ্ক পাল্টে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। দলের মধ্যে একটাই আলোচনা হত, ২০১৪ সালে কেকেআর একই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে কাপ তুলেছে। আমরা কেন সেই পরম্পরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব না? সুনীল নারাইন, শাকিব-আল-হাসান তাদের সেই কাপ জয়ের অনুভূতি আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল। যা উদ্বুদ্ধ করেছিল সবাইকে।

প্র: ভারত-পাক ম্যাচের আগে দলের মধ্যে আবহাওয়া কেমন?

বেঙ্কটেশ: আমার পক্ষে এটা বলা কঠিন। এটাই আমার প্রথম বার ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা। তবে ইংল্যান্ডকে হারানোর পরে সবার মধ্যে জেতার বাড়তি খিদে দেখা যাচ্ছে।

প্র: বেঙ্কটেশের জীবন কতটা পাল্টে গিয়েছে? দ্বিতীয় পর্বের আইপিএল শেষে কতটা পরিণত হয়েছেন আপনি?

বেঙ্কটেশ: সত্যি কথা বলতে, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে একই রকম কথাবার্তা হয়। তাদের কাছে কখনওই আমি আলাদা হতে পারব না। আমার ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে। আইপিএলের মধ্যেও ভিডিয়ো কলে ওদের সঙ্গে কথা বলে চাপমুক্ত হতাম। তবে জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে বেরোনোর অভিজ্ঞতা এখনও হয়নি। আইপিএল শেষেও বলয় থেকে বেরোতে পারিনি। সমর্থকদের হৃদয়ে আমার স্থান কোথায়, তা নিজের চোখে দেখার সুযোগ পাইনি। আমাকে নিয়ে কি আদৌ উন্মাদনা হবে? তা বলয়ের বাইরে বেরোলেই বুঝতে পারব।

প্র: আপনার ব্যাট করার ভঙ্গির মতোই জীবনে সাহসী কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বড় চাকরি ছেড়ে ক্রিকেটার হওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা কঠিন ছিল?

বেঙ্কটেশ: একেবারেই কঠিন ছিল না। দক্ষিণ ভারতীয় আর পাঁচটা পরিবারের মতো আমাদেরও পড়াশোনার উপরে খুব জোর দেওয়া হত। আমিও পড়াশোনা করতে ভালবাসতাম। বড় চাকরিও পেয়েছিলাম। তবে জানতাম, এক বার চাকরি করতে ঢুকলে খেলা সম্ভব নয়। তখন রঞ্জি দলে সুযোগও পেয়েছিলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়নি। মা-এর কাছে পরামর্শ চাইতেই তিনি বললেন, চাকরি ছেড়ে ক্রিকেটে মনোনিবেশ করতে।

প্র: ছোটবেলা থেকেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভক্ত। তাঁর মতোই কি ব্যাটিং স্টান্স ছিল আপনার?

বেঙ্কটেশ: আমি ডান-হাতি ব্যাটার ছিলাম। দাদাকে দেখেই বাঁ-হাতি হই। ছোটবেলায় ওঁর মতো দ্রুত রান করার চেষ্টা করতাম। দাদার ব্যাট করার ভঙ্গি রপ্ত করতে গিয়েই এতটা আগ্রাসী ক্রিকেট খেলি আমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন