বৃষ্টিতে ম্যাচ ফের বন্ধ

তিন উইকেট পড়তেই জুবের-সাকিবকে নিয়ে মুহূর্তে উন্মত্ত ও পার বাংলা

পারলে স্টেডিয়ামের সিংহদরজা ওঁরা ভেঙে ফেলেন! এক নয়, দুই নয়, একশো-দু’শো। নারায়ণগঞ্জ আকাশের মতো মেঘগর্জন উঠছে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের ও পার থেকে। ওঁরা কেউ কুড়ি, কেউ চল্লিশ। ওঁদের কারও মাথায় অদ্ভুত দর্শন টুপি। কেউ আবার হলুদ ডোরাকাটা জার্সিতে আদ্যন্ত বাঘ সেজেছেন! কে বলে, টি টোয়েন্টির প্রভাবে টেস্ট ক্রিকেট আজ মৃত? কে বলে, পাঁচ দিনের যুদ্ধ দেখতে লোকের উৎসাহ নেই?

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

ফতুল্লা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ১৪:৩৩
Share:

বিরাট-বধের পর জুবেরকে নিয়ে উল্লাস। ছবি: এএফপি।

পারলে স্টেডিয়ামের সিংহদরজা ওঁরা ভেঙে ফেলেন!

Advertisement

এক নয়, দুই নয়, একশো-দু’শো। নারায়ণগঞ্জ আকাশের মতো মেঘগর্জন উঠছে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের ও পার থেকে। ওঁরা কেউ কুড়ি, কেউ চল্লিশ। ওঁদের কারও মাথায় অদ্ভুত দর্শন টুপি। কেউ আবার হলুদ ডোরাকাটা জার্সিতে আদ্যন্ত বাঘ সেজেছেন! কে বলে, টি টোয়েন্টির প্রভাবে টেস্ট ক্রিকেট আজ মৃত? কে বলে, পাঁচ দিনের যুদ্ধ দেখতে লোকের উৎসাহ নেই?

শুক্রবারের ফতুল্লা স্টেডিয়ামে উন্মাদনা দেখলে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আশাবাদ পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে। বাংলাদেশের ক্রিকেটমহলের বক্তব্য ধরলে, ক্রিকেটের বৃহত্তম সংস্করণ নয়, এ পার বাংলায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ফর্ম্যাট হল ওয়ান ডে। রঙিন জার্সি, উজ্জীবিত পারফরম্যান্স, টিমের সাম্প্রতিক রেকর্ড সব মিলিয়ে নাকি জনপ্রিয়তায় ওয়ান ডে এক, টেস্ট ভাল রকম পিছিয়ে থাকা দুই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের নিকটবর্তী স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকলে আপনার তত্ত্বটাকে ভ্রম বলেই মনে হবে।

Advertisement

এমন একটা টেস্ট চলছে যেখানে ভারত এগিয়ে। দুপুরে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টিমটা চারশোর উপকণ্ঠে পৌঁছনো প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে মনে রাখার মতো দু’টো ঘটনা লেখা যায়। সকালের দিকে খুব দ্রুত গোটা দু’য়েক উইকেট স্পিনারদের তুলে নেওয়া। আর জুবের হুসেনের বলে বিরাট কোহলির বোল্ড হয়ে যাওয়া। কিন্তু এমন সংক্ষিপ্ত প্রাপ্তিতেও আবেগের যে প্রাচুর্য দেখা গেল, যে ভাবে দেশের পতাকা উড়িয়ে, চিৎকার করে, গান গেয়ে বাঁচিয়ে রাখা হল মুহূর্তটাকে, দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। প্রেসবক্স বারান্দা থেকে নীচে দেখা গেল, এক কিশোর স্টেডিয়ামের প্রাচীর টপকে রীতিমতো চেঁচাতে চেঁচাতে মাঠের দিকে ছুটছে। মুখে কার নাম? কেন, জুবের!

জুবের-সাকিবরা এমনিতেই বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভারতে যেমন বিরাট কোহলি, বাংলাদেশে সাকিব-আল-হাসান। ঢাকার রাজপথ ধরে যে দিকে যান, হোর্ডিংয়ে দু’টো মুখ মুখ্যত দেখতে পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট-মহানায়ক সাকিব। ফতুল্লা স্টেডিয়াম চত্বরেও ঘুরে দেখা গেল, যে ক’টা বিজ্ঞাপন পড়েছে চলতি টেস্টকে ঘিরে, তার অধিকাংশে সাকিবের মুখ। এ দিন যখন জুবেরের গুগলিতে বিরাট বোল্ড হয়ে গেলেন, বাংলাদেশ জনতার উন্মত্ত অবস্থা দেখে মনে হল, টেস্টে শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, আসল যুদ্ধটা তাঁরা জিতে গিয়েছেন! প্রতিভা দিয়ে প্রতিভা আটকানো।

ফতুল্লা প্রেসবক্সে কেউ কেউ বলছিলেন, আজ জুম্মাবার বলে লোকজন বেশি। আর পাঁচ দিনের মতো সাধারণ অফিস ডে হলে নাকি এত লোক আসত না। এত চিৎকার-টিৎকারও উঠত না। প্রথম দিন যেটা পাঁচশো ছিল, সেটা আজ হাজার দশেকের উপরে। কিন্তু শুধুমাত্র সেটা জুম্মাবারের কারণে এত জমায়েত, বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না। সকালের দিকে ম্যাচ হলেও দুপুর নাগাদ আবার বৃষ্টি নামল, আবার খেলা বন্ধ। মাঠের ধারে ছাতার তলায় আকাশের দিকে নির্ণিমেষ দৃষ্টিতে ঠায় বসে থাকলেন সাকিব-আল-হাসানরা।

কিন্তু কোথায়, একটা লোকও তো বৃষ্টি নামতে দেখেও মাঠ ছেড়ে চলে গেল না? কোহলিকে আউট করার সময় সাকিবের নাম ধরে যে গর্জনটা উঠল, তাতেও তো কেউ ‘প্রক্সি’ দিয়েছে বলে এখনও খবর নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন