কনফেডারেশন্স কাপ ফাইনালে ফেভারিট জার্মানি

বিমানবন্দরে নেমেই টিভির সামনে বসে পড়েছিলাম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নদের খেলাটা দেখতে। পুরো নব্বই মিনিট দেখার পর লেয়ন গোরেৎজকায় মজে গিয়েছি।

Advertisement

দীপেন্দু বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৪:২৭
Share:

নায়ক: জোড়া গোল করে হুঙ্কার জার্মানির গোরেৎজকার। ছবি: গেটি ইমেজেস

গন্তব্য বার্সেলোনা। ছুঁয়ে যেতে হবে দোহা। বৃহস্পতিবার রাতে আমার উড়ান যখন দোহা বিমানবন্দরে নামছে তখন ঘড়িতে দেখলাম ভারতীয় সময় রাত এগারোটা। আধঘণ্টা পরেই শুরু জার্মানি বনাম মেক্সিকো কনফেডারেশন্স কাপ সেমিফাইনাল।

Advertisement

বিমানবন্দরে নেমেই টিভির সামনে বসে পড়েছিলাম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নদের খেলাটা দেখতে। পুরো নব্বই মিনিট দেখার পর লেয়ন গোরেৎজকায় মজে গিয়েছি।

মেক্সিকোকে ৪-১ চূর্ণ করার দিনে জার্মান গোরেৎজকাই মাঠের রাজা হয়ে দাপাল পুরো ম্যাচটা। ম্যাচের আট মিনিটের মধ্যেই গোরেৎজকার জোড়া গোল ওচোয়া-র মেক্সিকোর যাবতীয় জোশ শুষে নিয়েছিল ব্লটিং পেপারের মতো। আর তখনই প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় ফাইনালে লাতিন আমেরিকা সেরা চিলের মুখোমুখি হতে চলেছে জার্মানি। আর শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে।

Advertisement

বিমানবন্দরে খেলা দেখার সময় আমার পাশে যে ইংরেজি জানা জার্মান ভদ্রলোক ম্যাচ দেখছিলেন তিনিও আদ্যোপান্ত ফুটবল ভক্ত। গোরেৎজকার ক্লাব শালকের সমর্থকও। তাঁর থেকেই জানতে পারলাম, তিন বছর আগে থাই মাসলের চোটের জন্য ছেলেটা বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে গিয়েছিল। গত বছর রিও অলিম্পিক্সেও ব্রাজিল থেকে ওকে ফিরে আসতে হয় চোটের জন্য। এ বার চোটমুক্ত হয়ে খেলতে নেমেই নিজের জাত চিনিয়ে দিচ্ছে এই জার্মান মিডফিল্ডার। গত বছর বুন্দেশলিগায় এই ছেলেটাই নাকি ৩০ ম্যাচে পাঁচ গোল করে হাসির খোরাক হয়েছিল জার্মান মিডিয়ার কাছে। এ বার কনফেড কাপে কিন্তু গোরেৎজকার তিন গোল হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতার লড়াইয়ে রয়েছে জার্মানির আট নম্বর জার্সিধারী এই ফুটবলার।

ছেলেটার একটা বড় গুণ হল ও বক্সের আশেপাশে গোলের গন্ধ পায়। গতিটা বেশ ভাল। বল কন্ট্রোলটাও চোখে পড়ার মতো। পায়ে ভাল শট রয়েছে। বল বাড়ায় ভাল। ছ’ফুট দু’ইঞ্চি উচ্চতায় স্পটজাম্পটাও দুর্দান্ত হওয়ায় শক্তপোক্ত বিপক্ষের বিরুদ্ধে এরিয়াল বলে হারে না।

মেক্সিকোর বিরুদ্ধে জার্মানির প্রথম গোলটার সময় মাঝমাঠ থেকে প্রতি-আক্রমণটা শুরু হয়েছিল গোরেৎজকার বাড়ানো লং বল থেকেই। যা রাইট উইংয়ে ধরে আক্রমণে উঠছিল হেনরিখস। গোরেৎজকা কিন্তু ঠিক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল শিকারি বিড়ালের মতো। দেখে নিয়েছিল মেক্সিকান ডিফেন্স এবং ওর মার্কার হেক্টর মোরেনো ঠিক জায়গায় নেই। বল পায়ে আসতেই ঠান্ডা মাথায় ফ্লিকে গোলটা করে গিয়েছে।

একশো নয় সেকেন্ড পরে দ্বিতীয় গোলের সময় টিমো ওয়ের্নার বলটা বাড়িয়েছিল। গোরেৎজকা ধনুকের ছিলা থেকে বেরোনো তিরের মতো গতিতে মার্কারকে পিছনে ফেলল। তার পর এগিয়ে আসা ওচোয়াকে পরাস্ত করল দুরন্ত প্লেসিংয়ে। টিমে যদি এ রকম একটা দুর্দান্ত ফিনিশার থাকে, তা হলে ট্যাকটিক্স, ফর্মেশন, স্ট্র্যাটেজি—বিপক্ষের কিছুই কাজ করে না। মেক্সিকোর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে।

শুধু দু’টো গোল নয়। দরকারের সময় রক্ষণের সামনে দাঁড়িয়ে ডস স্যান্টোসদের আক্রমণও ভোঁতা করেছে গোরেৎজকা। কনফেড কাপে সব ম্যাচেই পিছিয়ে গিয়েও ম্যাচে ফিরেছে মেক্সিকো। সেমিফাইনালে ম্যাচে ফিরতে পারেনি কিন্তু গোরেৎজকাদের দাপটেই। সাতষট্টি মিনিটে ওকে তুলে নেওয়ার পরেই মেক্সিকোর হয়ে ফাবিয়ানোর গোলটা।

জার্মানরা সব সময় তারকা, ব্যক্তিগত দক্ষতার চেয়েও, দলগত ফুটবলটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কনফেড কাপ দেখাচ্ছে বিশ্ব জয়ের তিন বছরের মধ্যেই কিন্তু সম্মানের আরও একটা দল ঠিক তৈরি করে ফেলেছেন জোয়াকিম লো। ভাবুন, এক বছর পরে বিশ্বকাপে এই জার্মান দলে গোরেৎজকাদের পাশে নিউয়ার, রিউস, মুলার, ওজিল, খেদিরা, বোয়াটেংরা ঢুকলে টিমের চেহারাটা কী দাঁড়াবে!

সে কথা পরে হবে। আপাতত কনফেড কাপ ফাইনাল। সেখানে গোরেৎজকা-ওয়ের্নারদের বিধ্বংসী পারফরম্যান্সের জন্য ব্র্যাভোর চিলের বিরুদ্ধে জার্মানিকেই এগিয়ে রাখছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন