চূড়ান্ত নাটকের পরে ম্যাচ গড়াল মধ্যরাতে 

রাত পৌনে এগারোটায় ফুটবল ম্যাচ শুরু হয়ে শেষ হল রাত পৌনে একটায়। যার মাঝে বদলে গিয়েছে ক্যালেন্ডারের তারিখও।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৯
Share:

অবশেষে: কলকাতায় রাত আটটা নাগাদ নামলেন গোয়ার ফুটবলাররা। রাত এগারোটা নাগাদ শুরু হল ম্যাচ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

অনূর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালের পর যুবভারতীতে বুধবার মধ্যরাতে তৈরি হল আর এক নতুন ইতিহাস। আরও একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী থাকল শহর।

Advertisement

রাত পৌনে এগারোটায় ফুটবল ম্যাচ শুরু হয়ে শেষ হল রাত পৌনে একটায়। যার মাঝে বদলে গিয়েছে ক্যালেন্ডারের তারিখও। ৩ জানুয়ারি ম্যাচ শুরু হয়ে যখন শেষ হল তখন ৪ জানুয়ারি ২০১৮ হয়ে গিয়েছে। বুধবারের ম্যাচ গড়িয়েছে বৃহস্পতিবারে। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে তো বটেই বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে যা সম্ভবত একবারই হয়েছে। লা লিগায় বার্সেলোনা বনাম সেভিয়া ম্যাচ শুরু হয়েছিল মধ্যরাতে। এ দিনের এটিকে বনাম এফ সি গোয়ার ম্যাচও গড়াল মধ্যরাত পর্যন্ত।

বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল স্টেডিয়ামে এত রাত পর্যন্ত কখনও অবশ্য জ্বলেনি ফ্লাডলাইট। অপেক্ষায় বসে থাকেননি প্রায় কুড়ি হাজার দর্শক। গভীর রাতে বাড়ি ফেরার সমস্যার কথা জেনেও গ্যালারিতে উত্তেজনার আঁচ পোয়াতে থেকে গিয়েছেন ওঁরা। তা-ও আবার ইন্ডিয়ান সুপার লিগের গ্রুপ লিগের একটি ম্যাচের লড়াই দেখতে। ম্যাচের দু’দিনের নাটকীয় টানাপোড়েনের মতো সেখানেও তো ভেঙে গেল মিথ। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের বাইরেও অন্য একটা দলের জন্যও যে আবেগ তৈরি হচ্ছে বাংলায়, সেটাও প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে এ দিন। যাঁরা মধ্যরাতে এটিকের তারকা স্ট্রাইকার রবি কিনের হেডে গোল দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন। তাঁর বিখ্যাত সমারসল্ট দেখে মেক্সিকান ওয়েভ তুলেছেন গ্যালারিতে। দেবজিৎ মজুমদারের অসাধারণ তিনটে সেভ দেখে লাল-সাদা পতাকা উড়িয়েছেন আনন্দে। আবার গোয়ার স্প্যানিশ স্ট্রাইকার ফেরান কোরোমিনাসের ১-১ গোল শোধ দেখে হতাশায় ভেঙেও পড়ছেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছেন। কলকাতার দুই প্রধানের গ্যালারিতেই তো এসব দৃশ্য দেখা গিয়েছে এতদিন। অবাকই লাগছিল।

Advertisement

ক্লান্ত ফেরান কোরোমিনাস-দের বিরুদ্ধে প্রথমে এগিয়ে গিয়েও জিততে পারল না এটিকে।

তবে ম্যাচ হওয়া নিয়ে পরতে পরতে যে অসংখ্য নাটক, উত্তেজনা, উৎকন্ঠা তৈরি হযেছিল এ দিন রাতে তা হারিয়ে দিয়েছে মাঠের লড়াইয়ের উত্তেজনাকেও। শুধু মাত্র পেশাদারিত্ব আর করতে হবে বলেই ম্যাচটা হল শেষ পর্যন্ত। না হলে রাত পৌনে নটায় দমদম বিমানবন্দরে নেমে দু’ঘন্টার মধ্যে কোনও দল মাঠে নেমে পড়ে! এবং সেটা একটা দলের প্রাক ম্যাচ প্রস্তুতি ছাড়াই। কারণ এফসি গোয়া পৌনে দশটায় স্টেডিয়ামে এলেও এলেও তাদের কিট পৌছয় অনেক পরে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার রাত— ছত্রিশ ঘণ্টায় চার বার মারগাও এয়ারপোর্টে চূড়ান্ত হেনস্তার শিকার হতে হয় গোয়া টিমকে। দু’বার নিজেদের শহরের বিমানবন্দরে এসেও ফিরে যেতে হয় তাঁদের। বিমানের অপেক্ষায় ম্যাচের আগে বসে থাকতে হয় প্রায় এগারো ঘন্টা। মজার ব্যাপার হল, এটিকের টিম বাসও রাজারহাটের টিম হোটেল থেকে বেরোনোর পরে খারাপ হয়ে গিয়েছিল এ দিন।

টেডি শেরিংহ্যাম রাত নটা নাগাদ স্টেডিয়ামের পাশের হোটেলে থেকে মাঠে চলে এলেও তাঁর টিম এল অনেক পরে। আলাদা ছয়টি গাড়িতে চেপে। পৌনে দশটা নাগাদ দেবজিৎ মজুমদার, রবি কিনদের স্টেডিয়ামে প্রথম প্রস্তুতির জন্য নামতে দেখা যায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু’ঘন্টা পরে। পরপর বিমান বিভ্রাটের জেরে গোয়া থেকে সের্জিও লোবেরার টিম এসে না পৌঁছোনোয়, তিনবার বদলায় কিক অফের সময়। নির্ধারিত সময়ের প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা পর শুরু হয় খেলা।

মারগাওতে নাটকীয় ঘটনার শুরু অবশ্য মঙ্গলবার সকাল থেকেই। গোয়া টিম ঠিক করেছিল সে দিন সকালে অনুশীলন করে বিশেষ বিমানে বিকেলে রাজারহাটের টিম হোটেলে চলে আসবে। কিন্তু মারগাও এয়ারপোর্ট থেকে যে বিশেষ বিমানটিতে আসার কথা ছিল ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ, নারায়ণ দাশ-দের সেটিতে হঠাৎ যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে ওড়ার পরেই। ফলে দ্রুত মাটিতে নামিয়ে আনা হয় বিমানটিকে। নেমে আসে চল্লিশ জনের পুরো গোয়া টিমও। তারা ফিরে যায় হোটেলে। পরে গোয়া ও আইএসএল কর্তারা ঠিক করেন বুধবার সকাল দশটায় টিম রওনা হবে কলকাতার উদ্দেশে। সেই মতো পুরো টিম এ দিন বিমানবন্দরে চলে আসে সকাল আটটাতেই। কিন্তু সের্জিওরা এয়ারপোর্টে এসে দেখেন সব দরজা বন্ধ। কারণ সকালে একটি মিগ বিমান অবতরণ করার সময় আগুন লেগে গিয়েছিল। সেটির চাকা ফেটে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে রানওয়ের উপর। তা পরিষ্কার করতে করতে দুপুর হয়ে যায়।

অন্য বিমান উড়ে গেলেও গোয়া টিমের জন্য তৈরি বিশেষ বিমানের তখনও যান্ত্রিক ত্রুটি সারানো যায়নি। ফলে এয়ারপোর্টেই বসে থাকেন কোরো, মন্দাররা। খবর যায় আইএসএলের প্রধান নীতা অম্বানির কাছে। নীতাদেবী ছিলেন জাপানে। দিল্লি এসে পৌঁছন এ দিনই। তিনিই উদ্যোগ নিয়ে দিল্লি থেকে পাঠান বিশেষ বিমান। পৌনে সাতটা নাগাদ মারগাও থেকে সেই বিমানে কলকাতার দিকে রওনা হয় পুরো গোয়া। খেলা শুরু হয় বেশি রাতে।

ম্যাচে অবশ্য জিততে পারেনি এটিকে। মধ্যরাতে ফের রবি-উদয় হলেও জয়ের হ্যাটট্রিক করতে পারেনি টেডি শেরিংহ্যামের দল। গোয়াকে কোণঠাসা করেও। তবে কলকাতার চেয়েও বেশি প্রশংসা পাবে গোয়া। কারণ যে দু’দিনের ধকল ও ক্লান্তি নিয়ে সের্জিও লেবোরোর ফুটবলাররা খেলতে নেমেছিলেন তাতে মনে হয়েছিল টিমটা হয়তো দৌড়তেই পারবে না। কিন্তু সমস্ত হিসাব উল্টে দিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন কোরো-মন্দাররা। তাদের কাছে অপরাজিত থেকে ফিরে যাওয়াটা জয়ের মতোই। জিততে না পারলেও নৈতিক জয় কিন্তু হল গোয়ারই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন