সে একটা সময় ছিল উইম্বলডনে! যখন বারকয়েক ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার জ্বালায় ইভান লেন্ডলের মতো মেগা তারকা বলে দিয়েছিল, ‘‘ঘাস! ওটা তো গরুর খাদ্য!’’
আর এখন আরেকটা সময় উইম্বলডনে! যখন চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্টটা তুলে নিয়ে নোভাক জকোভিচ কোর্টের ভেতর হাঁটু মুড়ে বসে এক মুঠো ঘাস তুলে মুখে পোরে!
এমন নয় যে জকোভিচ এই প্রথম টেনিসের সবচেয়ে ঐতিহ্যশালী গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন হল। এমনও নয় যে গতকাল মেয়েদের ফাইনালিস্ট মুগুরুজার মতো র্যাঙ্কিংয়ে খানিকটা নীচের দিকে।
জকোভিচ রবিবার বহু চিরস্মরণীয় ইতিহাস জড়িত অল ইংল্যান্ডের সেন্টার কোর্টে ফাইনালে নেমেছিল বিশ্বের পয়লা নম্বর হিসেবে। এবং চার মিনিট কম তিন ঘণ্টার লড়াইয়ে রজার ফেডেরারকে ৭-৬ (৭-১), ৬-৭ (১০-১২), ৬-৪, ৬-৩ হারিয়ে তৃতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হল। পরপর দু’বারও চ্যাম্পিয়ন হল। দু’টোই ঠিক ওর মেগা কোচ বরিস বেকারের মতো!
লেন্ডলের সেই চাঞ্চল্যকর মন্তব্যে রক্ষণশীল ব্রিটিশদের মধ্যে তখন শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজ জকোভিচের আবার সেন্টার কোর্টের ঘাস ছিঁড়ে খাওয়া নিয়ে ব্রিটিশরা কাল আদৌ প্রশ্নটশ্ন তোলে কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
আসলে আধুনিক পেশাদার ট্যুরে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা চলে আসা, টপ প্লেয়ারদের অসংখ্য এনডোর্সমেন্টের শুষ্ক দাপট উইম্বলডনের মতো টেনিসের সর্বোত্তম আবেগ-ভূমিকেও শাসন করছে বেশ কিছু বছর যাবত।
যার জন্য জকোভিচকে টেনিসের চাঁদ হাতে ধরার আগেই কোর্টের ঘাস ছিঁড়ে খেয়ে মহাআবেগের আগে ভাবতে হয় নিজের বাণিজ্যিক প্রচারের কথা! শো ম্যানশিপ। আমি নিশ্চিত কাল বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি কাগজে উইম্বলডন রিপোর্টে জকোভিচের হাতে ট্রফি নিয়ে ছবির পাশে সমান গুরুত্ব (হয়তো বেশি গুরুত্ব দিয়েও) দিয়ে ওর ঘাস খাওয়ার ব্লো-আপ বেরোবে।
কলকাতা থেকে পুরনো এক সাংবাদিক বন্ধু ফোনে জিজ্ঞেস করল, ‘‘উইম্বলডন যত দিন থাকবে, ফেডেরার বরাবরের আইকন। এই হারের পর সে-ই লোকের কি পরের বছর আর এখানে খেলতে আসা উচিত।’’
কেন আসবে না? আর সেটার পিছনে একটা কারণ, ওই পাহাড়প্রমাণ এনডোর্সমেন্ট। কাঁড়ি টাকা! দু’মাস পরেই চৌত্রিশে পা দিতে চলা ফেডেরারের বাণিজ্যিক সমীকরণেও জড়িত। এখনও।
সবচেয়ে বড় কারণটা হল, এখনও ও বিশ্বের দু’নম্বর। উইম্বলডন এক সময় ওর সাম্রাজ্য ছিল। মনে হয়, খুব সহজে ও সেটা যেতে দেবে না। আরও একবার ফিরে আসবে, ফিরবে নিজের সম্মান ফেরাতেই।
আমি পুরনো জমানার প্লেয়ার। একটুআধটু উইম্বলডন খেলেছি। তাই আমার একদম ব্যক্তিগত মত— রজার, ২০১৬-এ আরেক বার উইম্বলডন জেতার চেষ্টা করো। শেষ বারের মতো। আঠারো নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যামটা হলে সেন্টার কোর্টেই হবে। ওটা ওর দ্বিতীয় ঘর!
কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি আঠারো নম্বর নিয়ে তেমন নিশ্চিত নই। পরের বারও ফাইনালে উঠলে ওকে এ বারের সেমিফাইনালে মারে ম্যাচের মতো খেলতে হবে। হয়তো তার চেয়েও দুর্ধর্ষ!
নইলে তো কোনও জকোভিচ, কোনও ওয়ারিঙ্কা কিংবা কোনও মারেও এ দিনের ট্যাকটিক্স নেবে ওকে হারাতে।
সেটা কী? ফাইনালে প্রথম দু’টো সেট বার করে নিতে পারলাম তো তৃতীয় সেটে নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলো মহান ফেডেরারের বিরুদ্ধেও। আর যদি এ দিনের মতো দ্বিতীয় সেটের টাইব্রেকে জকোভিচের মতো সাত-সাতটা সেট পয়েন্ট পেয়েও অবিশ্বাস্য ব্যর্থতায় যদি ফেডেরার ১-১ করে ফেলে তা হলে পরের সেট থেকে ওকে ক্লান্ত করার শট খেলা শুরু করে দাও।
জকোভিচ যেমন শেষ দু’টো সেটে তা-ই করে দু’বারই গোড়ার দিকে ব্রেক ঘটিয়ে ম্যাচের রাশ হাতে তুলে নিল। যত পারল নিজের ব্যাক হ্যান্ড ডাউন দ্য লাইন রিটার্নে ফেডেরারের দ্বিতীয় ব্যাকহ্যান্ড শটের সময় রজারের কোর্ট অনেক ওপেন করে দিচ্ছিল জোকার।
এবং তেত্রিশের দমে তিন ঘণ্টা সুপার স্ট্যান্ডার্ড গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল যুদ্ধের পর উইম্বলডন আইকনেরও পক্ষে অসম্ভব অমন কঠিনতম তৃতীয় রিটার্নে উইনার মারা! ফেডেরার তাই আবার হারল!