ইডেনে গজল সম্রাট গুলাম আলির কনসার্ট নিয়ে বঙ্গ ক্রিকেটের অন্দরমহলে দিনভর চলল নাটক।
সকালে কলকাতা পুলিশের ইডেন পরিদর্শন। দুপুরে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চেয়ে নবান্ন থেকে চিঠি আসা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূল নেতা ও সিএবি কর্তা সুলতান আহমেদের ঘোষণা এবং সন্ধ্যায় ডিসি সাউথ মুরলীধর ও সিএবি প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক।
এ সবের জেরে খবর ছড়িয়ে পড়া যে, রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে ১২ জানুয়ারি ইডেনে গাইতে আসছেন পাকিস্তানি গজল গায়ক গুলাম আলি।
ইডেনের ঐতিহ্যের দফা রফা হতে চলেছে ধরে নিয়েই গেল গেল রব উঠেছিল বঙ্গ ক্রিকেটে। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সন্ধ্যায় সৌরভ জানিয়ে দেন, সরকারের অনুরোধ রক্ষা করতে পারছেন না তাঁরা। গুলাম আলির কনসার্ট ইডেনে হওয়া সম্ভব নয়। সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, ‘‘না, আমরা ওই অনুষ্ঠানের অনুমতি দিতে পারছি না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের (ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনরিটিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফিনান্স কর্পোরেশন) জানিয়ে দিয়েছি, আমাদের পক্ষে এই সময়ে অনুষ্ঠানের জন্য মাঠ দেওয়া সম্ভব নয়। ডিসি সাউথ এসেছিলেন বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে। ওঁকে আর সুলতানদাকেও জানিয়ে দিয়েছি।’’
এমনিতেই ইডেনের ইতিহাসে এই ধরনের অনুষ্ঠানের নজির নেই। বেনজির ভাবে গুলাম আলির অনুষ্ঠানের অনুমতি দিতে গেলে জরুরি ভিত্তিতে দু’দিনের মধ্যে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে তাতে সরকারি দফতর থেকে আসা এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে তার পর সিদ্ধান্ত নিতে হত। তার উপর সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ১৫ জানুয়ারি আইসিসি-র পরিদর্শক দল আসার কথা ইডেনের অবস্থা দেখতে। সরকারি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার এই কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সৌরভ এ দিন বলেন, ‘‘১৫ তারিখ আইসিসি-র পরিদর্শন। তার তিন দিন আগে ওই অনুষ্ঠান হলে মাঠের সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমাদের হাত থেকে বিশ্বকাপের সব ম্যাচ চলে যেতে পারে। এত বড় ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। সে জন্যই এই প্রস্তাবে রাজি হলাম না।’’
প্রসঙ্গত, ইডেনে ছেলে ও মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাঁচটি মূল রাউন্ডের ম্যাচ ও ছেলেদের পাঁচটি প্র্যাকটিস ম্যাচ হওয়ার কথা। ২০১১ বিশ্বকাপের আগে ইডেন থেকে ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ সরিয়ে দিয়েছিল আইসিসি। ফের যাতে তেমন কিছু না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত, জানান অন্যতম যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘চার বছর আগে বিশ্বকাপে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার পর আর এই ঝুঁকি নেওয়া যায় না। এটাই ছিল আমার মত।’’
বৃহস্পতিবার এই নাটকে যবনিকা নামলেও বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসনে অবশ্য কিছু না কিছু চলতেই থাকছে। এ দিন আবার সিএবি-র অন্দরমহল থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হল, ইডেনের স্কোরবোর্ডের স্পনসর হিসেবে মোবাইল পরিষেবা সংস্থা রিলায়্যান্স জিও-কে সত্ত্ব দেওয়ায় ইডেনে আইপিএলের ম্যাচ নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে। আইপিএলের স্পনসর যেহেতু আর এক মোবাইল পরিষেবা সংস্থা ভোডাফোন, তাই অ্যাম্বুশ মার্কেটিংয়ের দায়ে পড়ে যেতে পারে ইডেন। এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল এক কর্তা অবশ্য বলে দিলেন, ‘‘এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর সমাধান সূত্রও বার করা রয়েছে। আইপিএলের স্পনসরের স্বার্থে যাতে ঘা না লাগে, তা অবশ্যই দেখা হবে।’’
ইডেনের নেমিং রাইটস দেওয়া নিয়ে আবার এ দিন কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করলেন আইনজীবী কমল দে। ইডেনের মালিকানা যেহেতু সেনাবাহিনীর ও ইডেন যেহেতু ‘হেরিটেজ জোন’-এর মধ্যে পড়ে, তাই সিএবি ইডেনের নেমিং রাইটস বিক্রি করতে পারে না, এই আবেদন করা হয়েছে এই মামলায়। এ দিন সিএবি-তে তার নোটিসও এসে পৌঁছেছে। সৌরভ এই ব্যাপারে বলেন, ‘‘এই ভদ্রলোক তো বোধহয় গত ১৫ বছর ধরে জনস্বার্থ মামলা করে আসছেন। কী আর করা যাবে? দেখা যাক কী হয়।’’