ইডেনে আজ গম্ভীরদের প্রতিপক্ষ সচিনও

মাঠ ভর্তি এক ঝাঁক তারকা। তাঁদের মাঝে তিনি। সচিন তেন্ডুলকর। যেন তিনিই এই আকাশের সূর্য। এক দিকে গৌতম গম্ভীর, মর্নি মর্কেল, সুনীল নারিন, জাক কালিস, ওয়াসিম আক্রম তো অন্য দিকে মালিঙ্গা, কোরি অ্যান্ডারসন, রোহিত শর্মা, রিকি পন্টিং। সবাইকে ম্লান করে মঙ্গলবার যখন ইডেনে পা রাখলেন তিনি, তখন আকাশে গনগনে সূর্য। তবু তিনিই যেন সবচেয়ে উজ্জ্বল। তারকাদের সবার চোখ চলে গেল সে দিকেই।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৫
Share:

রোহিতকে টিপস সচিনের । ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

মাঠ ভর্তি এক ঝাঁক তারকা।

Advertisement

তাঁদের মাঝে তিনি। সচিন তেন্ডুলকর। যেন তিনিই এই আকাশের সূর্য।

এক দিকে গৌতম গম্ভীর, মর্নি মর্কেল, সুনীল নারিন, জাক কালিস, ওয়াসিম আক্রম তো অন্য দিকে মালিঙ্গা, কোরি অ্যান্ডারসন, রোহিত শর্মা, রিকি পন্টিং।

Advertisement

সবাইকে ম্লান করে মঙ্গলবার যখন ইডেনে পা রাখলেন তিনি, তখন আকাশে গনগনে সূর্য। তবু তিনিই যেন সবচেয়ে উজ্জ্বল। তারকাদের সবার চোখ চলে গেল সে দিকেই।

বুধবার ইডেনে আইপিএল আটের প্রথম ম্যাচে তিনি বাইশ গজে না থেকেও আছেন। গৌতম গম্ভীরদের এই হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বী এ দিন বিমানবন্দর থেকেই সোজা চলে এলেন ইডেনে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের এক কর্তার সঙ্গে। সেই কর্তাই জানালেন, বুধবার ইডেনে দলের প্রথম ম্যাচেও সচিন মুম্বই ড্রেসিংরুমে থাকবেন। মঙ্গলবার কাঠফাটা দুপুরে রোহিতরা ইডেনে যতক্ষণ ঘাম ঝরালেন, চরম আর্দ্রতায় ঘেমে-নেয়ে সচিন যে শুধু ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন তা নয়, সমানে কথা বলে গেলেন ক্যাপ্টেন রোহিত, কোচ পন্টিং থেকে ক্রিকেট জীবনের শুরুর অধ্যায়ে থাকা উন্মুক্ত চন্দ, বোলিং অ্যাকশন শুধরে ফেরা স্পিনার প্রজ্ঞান ওঝার সঙ্গেও। পরে আবার নাইটদের ছেড়ে যাওয়া নেটে আরসিবি-র প্র্যাক্টিসের ফাঁকে বিরাট কোহলির সঙ্গেও একপ্রস্থ ক্রিকেট-আড্ডা। লিটল মাস্টার স্বমহিমায়। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের গাঢ় নীল টি-শার্ট, ঢলঢলে হাফ প্যান্ট, ডার্ক সানগ্লাসে যেন আগের চেয়েও গ্ল্যামারাস।

নেটে চনমনে সচিন তেন্ডুলকরকে দেখে কে বলবে দলটার কোচের নাম রিকি পন্টিং। বিশ্ব ক্রিকেটে এককালে ত্রাস হয়ে ওঠা দলের ক্যাপ্টেনকেও ফিকে লাগল ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের এই দাপটের পাশে। অপর দলের নেট থেকে বারবার সে দিকে তাকাচ্ছিলেন কালিস, আক্রম, ইউসুফ, সাকিবরা। ঈর্ষা, না চিন্তা? কোনটা বেশি তাঁদের মনে? জুনিয়র নাইটরা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিলেন। এক সচিনের উপস্থিতিই কি চাপ বাড়িয়ে দিল নাইটদের শিবিরে?

চাপ কমিয়ে বাড়তি উৎসাহ জোগাতে অবশ্য বুধবার এসে পড়ার কথা নাইটদের মালিক, মেন্টর ও মোটিভেটর শাহরুখ খানের। মাঠে যখন গম্ভীর ও রোহিতের দলের যুদ্ধ, তখন গ্যালারিতেও সমান তালে চলবে অন্য ডুয়েল— সচিন বনাম শাহরুখ। বুধবার ইডেনে তাঁরও থাকার কথা নিজেই জানিয়ে গেলেন সচিন। কাল ম্যাচে থাকছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ইডেন থেকে বেরোতে বেরোতে বললেন, ‘‘হ্যাঁ থাকছি। অন্য বিশেষ কাজ না থাকলে রোহিতদের সব ম্যাচেই থাকার চেষ্টা করব।’’

স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে যে পন্টিংয়ের চেয়ে সচিনের সাহায্যই বেশি নিচ্ছেন তাঁরা, তা মুম্বই ক্যাপ্টেনের কথাতেই পরিষ্কার। বললেন, ‘‘স্ট্র্যাটেজি নিয়েই বেশি আলোচনা হল ওঁর সঙ্গে। আট বছর হয়ে গেল, দলটার সঙ্গে যুক্ত সচিন। ওঁর মতো একজন কিংবদন্তির সাহায্য পাওয়াটাই আমাদের কাছে বড় পাওয়া।’’

লড়াই শুরুর আগের দিন। সাকিবকে নিয়ে নারিনের পিচ পরীক্ষা।

মুম্বইয়ের স্ট্র্যাটেজি যেমনই হোক, গতবার যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে শেষ করেছিলেন, তার চেয়েও বেশি চনমনে ভাবে এ বার শুরু করতে চান গৌতম গম্ভীর। ‘গো ফর মোর’— নাইটদের এই স্লোগানেই তো তার ইঙ্গিত। কিন্তু সে বার যে ব্রহ্মাস্ত্র তাঁর হাতে ছিল, এ বার তা আছে কি না, সেই ব্যাপারেই নিশ্চিত নন তিনি। মাত্র সাত মাসের মধ্যে বোলিং অ্যাকশন শুধরে মাঠে ফেরা সুনীল নারিন আগের মতোই কি ধারালো? গম্ভীরের মন্তব্য, ‘‘নারিন যে অ্যাকশন শুধরে ফিরে আসবে এটা আমি জানতাম। তবে আগের মতোই ধারালো আছে কি না, এর উত্তর কালকের ম্যাচের পর দিতে পারব।’’

বুধবার রোহিত, পোলার্ড, রায়ডু, অ্যান্ডারসনদের সামলাতে নারিন-অস্ত্র কতটা কাজে লাগবে সেটা যেমন একটা প্রশ্ন, তেমনই আর একটা প্রশ্ন, ইডেনের সবুজ উইকেটে কতটা কাযর্কর হয়ে উঠবে নাইটদের স্পিন ব্রিগেড। আইপিএলের অনেক আগেই বোর্ড কিউরেটরদের ফতোয়া জারি করে বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, হোম অ্যাডভান্টেজ দেওয়ার কথা না ভেবে আকর্ষণীয় ক্রিকেটের জন্য বাইশ গজের জমিটা তৈরি করো।

ইডেনের সেই বাইশ গজ নিয়ে কেকেআর ক্যাপ্টেন যদিও বললেন, ‘‘অনেকে বলে, কেকেআর নাকি স্লো উইকেট তৈরি করে জেতে। কিন্তু শুধুমাত্র স্লো উইকেট তৈরি করে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। তার জন্য ধারাবাহিকতা লাগে, যা আমাদের গতবার ছিল, এ বারেও আশা করি থাকবে।’’ তবে সিএবি সূত্রের খবর, উইকেটে থাকা ঘাস নিয়ে অতৃপ্তি রয়েই গিয়েছে কেকেআর শিবিরে।

নারিন ছাড়াও দলে আরও সাত স্পিনার সাকিব, চাওলা, বোথা, কারিয়াপ্পা, হগ, কুলদীপ যাদব ও ইউসুফ পাঠান। এত স্পিনার নিয়ে শেষ পর্যন্ত যদি ঘূর্ণি উইকেট না পাওয়া যায়, তা হলে তা অবশ্যই চাপের ব্যাপার। কিন্তু সেই চাপের কথা স্বীকার করছেন না নাইটরা। ক্যাপ্টেন বলছেন, ‘‘আমাদের কি শুধু স্পিনারই আছে? ভাল ব্যাটসম্যান, পেস বোলার নেই না কি? চিন্তা করবেন না। খারাপ খেলব না। চ্যাম্পিয়নদের মতোই খেলব।’’ তবে নাইট ক্যাপ্টেনকে নেটে কিছুটা জং ধরা মনে হল। বাংলার তরুণ পেসার কণিষ্ক শেঠ তাঁর স্টাম্প ছিটকে তো দিলেনই, সেই স্টাম্প ভেঙে দু’টুকরোও হয়ে গেল। মর্কেল, উমেশদের বলেও সাবলীল বলে মনে হল না গম্ভীরকে।

গম্ভীরের মতো গোটা দলটাকে বুধবার এ রকম জং ধরা দেখাবে না তো? সে আশঙ্কা উড়িয়েই দিচ্ছেন বোলিং কোচ ওয়াসিম আক্রম।

বরং নাইটরা আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে নতুন একটা স্লোগানও চালু হয়ে গেল কেকেআর সংসারে। তাঁদের শিবিরে আত্মবিশ্বাস স্বাগত। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের প্রবেশ নিষেধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন