ভারতের তুরুপের তাস ‘চায়নাম্যান’ কুলদীপই

ব্যাটিংয়ে প্রথম টেস্টে দরকার একটা দুর্দান্ত সূচনার। এই দায়িত্বটা নিতে হবে ওপেনারদের। তা হলেই বড় রান করবে ভারত। ইংল্যান্ডে এ বার গ্রীষ্মের শুরুতে পাকিস্তান খেলে গিয়েছে।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫১
Share:

বহুচর্চিত ভারত বনাম ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজে ঢাকে কাঠি পড়তে চলেছে বুধবার বার্মিংহামে।

Advertisement

স্বাধীনতার পরে আজ পর্যন্ত তিন বার ইংল্যান্ড থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরেছে ভারত। ১৯৭১, ১৯৮৬ এবং ২০০৭ সালে। ২০০২ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতীয় দল ফিরেছিল সিরিজ ড্র করে। ফলে এ বার প্রশ্ন উঠছে বিরাট কোহালির ভারত কি ইংল্যান্ড থেকে পাঁচ টেস্টের সিরিজ জিতে ফিরতে পারবে? আমার মতে পরিকল্পনা মাফিক চলতে পারলে কাজটা মোটেও অসম্ভব নয়। ইংল্যান্ডকে টেস্ট সিরিজে হারানোর রসদ রয়েছে বিরাটের দলে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে বলতে পারি, বিশ্বের অন্য জায়গার চেয়ে ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলার চ্যালেঞ্জটা আলাদা। এর প্রধান কারণ ওখানকার আবহাওয়া। এই রোদ তো, এই বৃষ্টি! ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের সময় দেখলাম ইংল্যান্ডের আবহাওয়া বেশ ঝলমলে। প্রবল গরম। ফলে ভেবেছিলাম, টেস্টের সময় পিচ শুষ্ক থাকলে ভারতীয় স্পিনাররা ভেল্কি দেখাবেন। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে ভাল বৃষ্টি হচ্ছে বার্মিংহ্যামে। ফলে এ বার কিন্তু পেসারদের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ইংল্যান্ডে স্যাঁতসেঁতে, মেঘলা পরিবেশে বল বেশ নড়াচড়া করে। অসুবিধা হয় ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু রোদ উঠে গেলেই সাহায্য পান স্পিনাররা।

Advertisement

রোদ উঠলে সুবিধা ভারতের। বল তখন বেশি নড়াচড়া করবে না। আর পরিবেশ মেঘলা থাকলে বা বৃষ্টি হলে সুবিধা ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস অ্যান্ডারসনের মতো পেসারদের। কারণ, ঘরের মাঠে এই ধরনের পিচে কী ভাবে বিপক্ষকে চেপে ধরতে হয়, তা জানেন ওঁরা। কিন্তু ভারতের পক্ষে সুবিধা হল, জেমস অ্যান্ডারসন বহু দিন পরে ফিরছেন টেস্ট ক্রিকেটে। ফলে ছন্দে ফিরতে ওঁর সময় লাগবে।

ভারতীয় দলের অতীতের বিদেশ সফরগুলোতে যেখানে ব্যাটসম্যানরা ভাল খেলেছেন, সেখানে ম্যাচ জিতেছে ভারত। এ বার আমাদের ব্যাটিং দুর্দান্ত। মুরলি বিজয় চার বছর আগে ইংল্যান্ডে দুর্দান্ত খেলেছিল। এখনও বেশ ভাল ফর্মে রয়েছে বিজয়। ওপেনিংয়ে ওর সঙ্গী হিসেবে খেলুক কেএল রাহুল। টেকনিক দুর্দান্ত। ছেলেটা বিদেশে রান করেছে। আর শিখর ধওয়ন অফস্টাম্পের বাইরের বলগুলোয় সমস্যায় পড়ে। বিরাট কোহালি চার বছর আগে ইংল্যান্ডে সে ভাবে নিজেকে চেনাতে পারেননি। কিন্তু গত চার বছরে নিজের খেলার ধরন অনেকটাই বদলে ফেলেছেন বিরাট। ২০১৪ সালে আউটসুইংগুলো মারতে গিয়ে বেশি আউট হয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। এখন তিনি কিন্তু শরীরকে বলের কাছে নিয়ে গিয়ে খেলছেন। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় রান করেছেন। ফলে এ বার খুব সহজে ইংল্যান্ড বোলাররা বিরাটকে কাবু করতে পারবেন না। অজিঙ্ক রাহানেরও ইংল্যান্ডের মাটিতে ভাল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দীনেশ কার্তিক যথেষ্ট পোক্ত ব্যাটসম্যান। সঙ্গে হার্দিক পাণ্ড্য। তিন নম্বরে চেতেশ্বর পূজারার সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু এই ছেলেটার তাগিদ ও মরিয়া মনোভাব মারাত্মক। কাউন্টি খেলে নিজেকে তৈরি রেখেছেন পূজারা।

ব্যাটিংয়ে প্রথম টেস্টে দরকার একটা দুর্দান্ত সূচনার। এই দায়িত্বটা নিতে হবে ওপেনারদের। তা হলেই বড় রান করবে ভারত। ইংল্যান্ডে এ বার গ্রীষ্মের শুরুতে পাকিস্তান খেলে গিয়েছে। অভিজ্ঞতা বলছে, গ্রীষ্মের ইংল্যান্ডে শুরুতে যতটা বল নড়াচড়া করে, মাঝামাঝি সময়ে অতটা বল নড়াচড়া করে না। এটা কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানদের কাছে একটা বড় সুবিধা। দু’টো বিষয় এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে রাহানেদের। এক, বলের উপর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চোখ রাখতে হবে। যেখানে বল পড়ছে সেখানেই এগিয়ে গিয়ে মারা চলবে না। দুই, শরীরটাকে বলের কাছে নিয়ে গিয়ে খেলতে হবে। ইংল্যান্ডে খেলার সময় এটা মাথায় রাখতেই হয়।

এ বার বোলিং। যদি রোদ ঝলমলে আবহাওয়া হয়, তা হলে দুই স্পিনারের সঙ্গে দুই পেসার নিয়ে নামুন বিরাট। আর. অশ্বিন ও কুলদীপ যাদবের সঙ্গে ইশান্ত শর্মা আর উমেশ যাদব। তৃতীয় সিমারের কাজটা করবেন হার্দিক। আর মেঘলা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া হলে ভারত নামুক তিন পেসার এবং এক স্পিনার নিয়ে। সে ক্ষেত্রে অশ্বিনকে বসিয়ে খেলাতে হবে মহম্মদ শামিকে। কিন্তু কুলদীপকে কোনও মতেই প্রথম একাদশের বাইরে রাখা চলবে না। এই সিরিজে ভারতের তুরুপের তাস কুলদীপ। এই চায়নাম্যান বোলারের গুগলি, ফ্লিপার, লেগস্পিন এখনও রহস্য অ্যালেস্টেয়ার কুক, জো রুটদের কাছে। পেসাররা অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শর্ট বল করে যেন বাজিমাত করার চেষ্টা না করেন। ইংল্যান্ডে ব্যাটসম্যানকে ‘ফ্রন্টফুটে’ খেলাতে হবে। সে ক্ষেত্রে বল সুইং করার সম্ভাবনা বাড়ে। আমাদের পেসারদের মধ্যে উমেশ যাদবের গতি আর আউটসুইং দু’টোই আছে। শামির বল নড়াচড়া করে। ইশান্ত পিচ থেকে বাউন্সটা ভাল আদায় করে নেয়। ফলে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংও সমীহ করার মতো। সে কারণেই পতৌদি ট্রফিটা বিরাটের হাতে ওঠারই সম্ভাবনা দেখছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন