Coronavirus

করোনায় স্তব্ধ সাম্বা, আতঙ্ক ফুটবলের আঁতুর ঘরে

ব্রাজিলের তুলনায় আর্জেন্টিনার পরিস্থিতি অনেক ভাল। করোনায় মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১৭০০ মতো।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০৬:৫৫
Share:

চর্চায়: রিয়োর স্থানীয় লিগের খেলা শুরু হয়েছে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে।

ফুটবলপ্রিয় বাঙালির হৃদয়ে চিরকালীন ভাবে স্থান করে নেওয়া দুই দেশ। করোনা অতিমারির জেরে সেই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় ফুটবলই কার্যত
স্তব্ধ হতে বসেছে।

Advertisement

ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কোচ মার্কোস ফালোপা থাকেন সাও পাওলোয়। বিখ্যাত সাও পাওলো এফসি-র যুব দলের উন্নয়নের কাজে যুক্ত তিনি। সারা বছর ব্যস্ত থাকেন প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার অন্বেষণে। কিন্তু ফুটবলের দেশে মারাত্মক আকার নিয়েছে করোনা অতিমারি। বুধবার ফোনে আতঙ্কিত ফালোপা বললেন, ‘‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি আমরা। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার মানুষ শুধু আমার শহরেই মারা গিয়েছেন মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতেই মারা গিয়েছেন প্রায় চারশো মানুষ।’’ যোগ করছেন, ‘‘আমাদের এখানে মার্কেট, শপিং মল সবই বন্ধ রয়েছে। মৃত্যু মিছিল যেন থামতেই চাইছে না। ব্রাজিলের অন্যান্য
শহরের অবস্থাও খারাপ।’’

করোনার কারণে কার্যত গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে আরও হতাশ হয়ে পড়েছেন ফালোপা। বলছিলেন, ‘‘অ্যাকাডেমির বাচ্চাদের অনলাইনে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আর ফুটবলার খুঁজে বার করার কাজ তো সেই মার্চ মাস থেকেই বন্ধ। জানি না কবে সব স্বাভাবিক হবে।’’

Advertisement

ব্রাজিল ফুটবল (সিবিএফ) ফেডারেশনের প্রাক্তন আধিকারিক রদ্রিগো পাইভা থাকেন রিয়ো দে জেনেইরোতে। সেখানে রেস্তরাঁ, পাব খুলছে। হতাশ রদ্রিগো বলছিলেন, ‘‘ব্রাজিলের মানুষের কাছে ফুটবলটা ধর্ম। মাঠ, রাস্তা থেকে সমুদ্র সৈকত— একটু ফাঁকা জায়গা পেলেই ফুটবল শুরু করে দেয় এখানকার মানুষ। যাদের বল কেনার ক্ষমতা নেই, তারা কাপড়-প্লাস্টিক দিয়ে বল বানিয়ে খেলে। কোনও অবস্থাতেই ফুটবল বন্ধ হয় না। কিন্তু মারণ ভাইরাস আমাদের দেশের ফুটবল
সংস্কৃতিটাই শেষ করে দিচ্ছে।’’

ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনে দীর্ঘ বারো বছর যুক্ত থাকার জন্য ফুটবল প্রতিভা খোঁজার কাজে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরতে হয়েছে রদ্রিগোকে। রোবিনহো, নেমারের মতো একাধিক তারকার উত্থানের সাক্ষী তিনি। বলছিলেন, ‘‘ব্রাজিল ফুটবলের আঁতুর ঘর হচ্ছে বস্তিগুলো। কত যে প্রতিভা রয়েছে, তা গুণে শেষ করা যাবে না। প্রবল দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে থাকা মানুষগুলোর কাছে ফুটবল হচ্ছে মুক্তির একমাত্র পথ। রিয়োর বস্তিতে মধ্যরাতেও আমি ফুটবল খেলতে দেখেছি। নিয়মিত টুর্নামেন্টও হত বস্তিগুলোয়। সব ক্লাবেরই স্কাউটরা তাই এই অঞ্চলগুলোয় ঘুরে বেড়ান রত্নের খোঁজে।’’ এখন কী ফুটবল পুরোপুরি বন্ধ? রদ্রিগোর কথায়, ‘‘ব্রাজিলে ফুটবল কখনওই পুরোপুরি বন্ধ হয় না। লুকিয়ে অনেকেই খেলছে শুনছি। হয়তো ওদের মধ্যে ভবিষ্যতের নেমার-ভিনিসিয়াস জুনিয়রেরা রয়েছে। কিন্তু ওদের তুলে আনবে কে? বিশ্বে করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ব্রাজিল। এই পরিস্থিতিতে
কে ঝুঁকি নেবে?’’

প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই সিবিএফ মরিয়া ফুটবলকে ছন্দে ফেরাতে। দিশ দশেক আগে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে রিয়ো-লিগের খেলা আবার শুরু হয়েছে। ৯ অগস্ট থেকে ব্রাজিল-চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। কিন্তু ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ সাও পাওলোর গভর্নর। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা বন্ধ না হলে সাও পাওলোর কোনও দলকে খেলার অনুমতি দেবেন না। সিবিএফ-এর কর্তাদের পাল্টা দাবি, সাও পাওলোর ২০টি ক্লাবের মধ্যে ১৯টি ক্লাবই নাকি খেলার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। তবে সাও পাওলোর ফুটবল ফেডারেশন ১৬ দলের পাউলিস্তা চ্যাম্পিয়নশিপ ফের শুরু করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ২২ জুলাই থেকে খেলা শুরু হবে। সংক্রমণ রুখতে জার্মান বুন্দেশলিগার পথ অনুসরণ করে স্টেডিয়ামকে তিনটি জ়োনে (নীল, লাল ও হলুদ) ভাগে করা হচ্ছে।

ব্রাজিলের তুলনায় আর্জেন্টিনার পরিস্থিতি অনেক ভাল। করোনায় মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১৭০০ মতো। আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন অবশ্য কোনও ঝুঁকি না নিয়ে কয়েক মাস আগেই মরসুম বাতিল করে দিয়েছে। বুয়েনস আইরেস থেকে ফোনে জোয়াকিম সাইমন বলছিলেন, ‘‘আর্জেন্টিনায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম ঠিকই। কিন্তু সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সব চেয়ে বড় সমস্যা, আর্জেন্টিনায় শীত কাল আসছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘মরসুম বাতিল হয়ে যাওয়ায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে ক্লাবগুলোর।’’

ব্রাজিলের মতো আর্জেন্টিনার বস্তিগুলোও ফুটবলারদের আঁতুর ঘর। সংক্রমণের ভয়ে দিয়েগো মারাদোনা, লিয়োনেল মেসির দেশের সেই সব জায়গায় ফুটবল কার্যত বন্ধ। কয়েকটি ক্লাবে সম্প্রতি অনুশীলন শুরু হয়েছে করোনা-বিধি মেনে। জোয়াকিম বললেন, ‘‘সাদা রং দিয়ে পুরো মাঠটাকে বারোটি ভাগ করা হয়েছে। ফুটবলারদের সেই খোপের মধ্যে দাঁড়িয়েই বল পাস দিতে হবে। কাছাকাছি গিয়ে ট্যাকল করা যাবে না।’’ এই অনুশীলনে ফুটবলের নতুন প্রতিভা আদৌ গড়ে তোলা যাবে কি না, সংশয়ে আছেন জোয়াকিমরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন