Lionel Messi

ফাইনালে কিছুক্ষণ পরেই এমবাপে-মেসি লড়াই, পারফরম্যান্স ফিরে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন

বিশ্বকাপ ফাইনালের সবচেয়ে উপভোগ্য বিষয় হচ্ছে লিয়োনেল মেসি বনাম কিলিয়ান এমবাপে দ্বৈরথ। নেমার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিদায়ের পর এর থেকে ভাল ফাইনাল আর হতে পারত না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৫২
Share:

বিশ্বকাপে এমবাপে-মেসির পারফরম্যান্স কেমন? ফাইল ছবি

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে কি লিয়োনেল মেসি ভাবতে পেরেছিলেন, সত্যি সত্যিই আবার ১৮ নভেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে হাজির হবেন? অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ম্যাচে উড়িয়ে দিয়েও কিলিয়ান এমবাপের মনের কোণে কি এতটুকু আশা ছিল যে, মাত্র ২৩ বছর বয়সে টানা দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ জেতার সামনে হাজির হবেন? স্বপ্ন নিশ্চিত ভাবেই ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হবে, তা কি ভাবতে পেরেছিলেন দু’জনেই?

Advertisement

উত্তর হয়তো আগামী দিনে কোনও এক সময় জানা যাবে। কিন্তু বিশ্বকাপের সন্ধিক্ষণ তাঁদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আবার। আরও এক বার। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে মুখ চুন করে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। এ বার সুযোগ প্রতিশোধ নেওয়ার। তবে রেষারেষি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ দিলে, বিশ্বকাপ ফাইনালের সবচেয়ে উপভোগ্য বিষয় হচ্ছে লিয়োনেল মেসি বনাম কিলিয়ান এমবাপে দ্বৈরথ। নেমার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিদায়ের পর এর থেকে ভাল ফাইনাল আর হতে পারত না।

বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে আনন্দবাজার অনলাইন ফিরে দেখল দুই তারকার পারফরম্যান্স:

Advertisement

লিয়োনেল মেসি

বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগেই মেসি বলে দিয়েছিলেন, এটাই তাঁর শেষ অভিযান। নিজেও ভাল মতো জানতেন, এই সুযোগ বার বার আসবে না। তাঁর ভাগ্য এমনই, প্রথম ম্যাচে নিজে গোল করা সত্ত্বেও দেখতে হল দলের হার। তার পরেও যে রবিবার আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে নামছে, তার পিছনে এক এবং একটাই কারণ, লিয়োনেল মেসি। তাঁর নামের পাশে পাঁচটি গোল এবং দু’টি অ্যাসিস্ট রয়েছে। তবে যেটা কোনও পরিসংখ্যান বা স্কোরশিটে পাওয়া যাবে না। তা হল মেসির দায়বদ্ধতা। প্রতি ম্যাচেই কোনও না কোনও ভাবে মেসি জ্বলে উঠছেন। নিজে খেলছেন, দলকে খেলাচ্ছেন। আর্জেন্টিনার বাকি ফুটবলাররাও মরিয়া হয়ে উঠেছেন মেসির জন্যেই নিজের সেরাটা দিতে। সেই কারণেই ইউলিয়ান আলভারেসের নামের পাশে চারটি গোল। স্কোরবুকে নাম তুলে ফেলেছেন নাহুয়েল মোলিনা, এনজ়ো ফের্নান্দেসরা।

এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে মেসির পারফরম্যান্স বিচার করতে বসলে নিঃসন্দেহে দু’টি ঘটনা সমর্থকদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে। প্রথমটি সৌদি আরবের বিরুদ্ধে তাঁর গোল। ডান দিক থেকে বল পেয়ে এক টাচে রিসিভ করে যে ভাবে মাটি গড়ানো শটে গোল করলেন, বার বার দেখার মতোন। সাধেই বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরি ওই গোলের পর চেঁচিয়ে বলে উঠেছিলেন, “মেসি এই জন্যেই বুঝিয়ে দিল কেন ও বাকিদের থেকে আলাদা। আর্জেন্টিনা এখনও টুর্নামেন্টে বেঁচে।” শুধু সেই ম্যাচ নয়, তার পরের ম্যাচে পোল্যান্ড, তার পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া— একের পর এক প্রতিপক্ষকে হারাতে হারাতে অবশেষে ফাইনালে আর্জেন্টিনা। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে তাঁর গোল যে রকম মাথায় থাকবে, তেমনই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও তিন ডিফেন্ডারের পায়ের জঙ্গলের ফাঁক দিয়েও মেসির গোল স্মরণে থেকে যাবে।

এই বিশ্বকাপে মেসির আগের থেকেও বেশি দায়বদ্ধ। প্রতি ম্যাচেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও, মেসির কাছে এই বিশ্বকাপ অন্য রকম। প্রত্যাশার চাপ তাঁর উপরে বরাবরই থাকে। এ বার তিনি সেটা উপভোগ করছেন। অনেক বেশি খোলা মনে খেলছেন। অনেক বেশি দায়বদ্ধতা দেখা যাচ্ছে। তেমনই অস্বীকার করা যাবে না সতীর্থদের কথাও। আগে মেসি কাউকে পাস দিলে সেই বল আর ফেরত আসত না। এখন মেসির জন্য ঠিকানা লেখা পাস বাড়াচ্ছেন তাঁরই কোনও সতীর্থ। মেসি নিজেও তা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন। ট্রফি তাঁর হাতে না উঠলেও, পারফরম্যান্সের বিচারে এটাই যে মেসির সেরা বিশ্বকাপ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কিলিয়ান এমবাপে

মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিশ্বকাপ। ফাইনালে ম্যাচের সেরা। গলি থেকে রাজপথে উত্তরণ। এক জন ফুটবলারের জীবনে আর কী চাই। এমবাপের জীবনটা এমনই। পেলের মতো তিনিও খুব ছোট বয়সে বিশ্বকাপের স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন। বুঝতে পেরেছেন, ট্রফিটার গুরুত্ব কতটা। পেলের সঙ্গে তাঁর মিলও রয়েছে। পেলে যে রকম ১৮ বছরে বিশ্বকাপ জিতেও থেমে থাকতে শেখেননি। পরে আরও দুটো বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। তেমনই এমবাপেও থামতে শেখেননি। একটা বিশ্বকাপ পাওয়ার পর এখন তাঁর পাখির চোখ আর একটি।

আসলে এমবাপের কাছে এই লড়াই নিজেকে প্রমাণ করার। মেসি, রোনাল্ডোর এটাই শেষ বিশ্বকাপ। কার্যত অস্তাচলে নেমারও। আগামী প্রজন্ম তা হলে কার দিকে তাকিয়ে থাকবে? কার খেলা দেখবে? এমবাপে সেই জায়গা পূরণ করার জন্য সচেষ্ট। ফ্রান্সের তত সমর্থক না-ই থাকতে পারে। কিন্তু ভাল ফুটবলের পিয়াসী প্রত্যেকেই। তাই এমবাপে আরও একটি বিশ্বকাপ জিতে নিজেকে বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে, আগামী অন্তত চার বছর আলোচনা হবে তাঁকে নিয়ে। এমবাপে নিজেও জানেন সেটা।

প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গোল দিয়ে অভিযান শুরু। ঘাড়ের সামনে দীর্ঘদেহী দু’-তিন জন অজি ডিফেন্ডারকে সঙ্গে নিয়ে করা সেই গোল বুঝিয়ে দেয়, এ বারের বিশ্বকাপেও তিনি এসেছে সমান খিদে নিয়ে। পরের ম্যাচেই ডেনমার্কের বিরুদ্ধে জোড়া গোল। তিউনিশিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচে খেলেননি। দলও হারে। কিন্তু প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে আবার চেনা ছন্দে দেখা যায়। আবার জোড়া গোল করেন। দু’টি গোলই দেখার মতো। বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে কড়া মার্কিংয়ে ছিলেন। একই জিনিস প্রযোজ্য মরক্কোর ক্ষেত্রেও। সেই দু’টি ম্যাচে গোল পাননি। ফাইনালেও তাঁকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা থাকবে আর্জেন্টিনা কোচের। সে সব ছাপিয়ে কি বিশ্বমঞ্চে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে পারবেন এমবাপে? উত্তর দেবে সময়ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন