FIFA World Cup Qatar 2022

দেশঁর মগজাস্ত্রেই হার মরক্কোর

মরক্কোর লড়াইকে কুর্নিশ। সমস্ত সমীকরণকে ভ্রান্ত পরিণত করে আশরাফ হাকিমিরা সেমিফাইনালে উঠেই মন জয় করে নিয়েছে বিশ্বের।

Advertisement

মজিদ বাসকর

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৩২
Share:

লক্ষ্যভেদ: দলের প্রথম গোল করার পথে ডিফেন্ডার থিয়ো হের্নান্দে‌জ। মরক্কোকে ২-০ হারিয়ে আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স। বুধবার। ছবি রয়টার্স।

দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ জয়ের অভিযানে এ বার মুখোমুখি লিয়োনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপে। প্যারিস সঁ জরমঁ-র দুই বন্ধুর সেই দ্বৈরথ নিঃসন্দেহে কাতার বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। জীবনের শেষ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে মরিয়া মেসি। টানা দ্বিতীয় বার কাপ জিততে বদ্ধপরিকর এমবাপে।

Advertisement

মরক্কোর লড়াইকে কুর্নিশ। সমস্ত সমীকরণকে ভ্রান্ত পরিণত করে আশরাফ হাকিমিরা সেমিফাইনালে উঠেই মন জয় করে নিয়েছে বিশ্বের। কিন্তু এ-ও মানতে হবে, বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে ফ্রান্সের মতো দলের সঙ্গে লড়াই করার দক্ষতা এখনও অর্জন করতে পারেনি হাকিম জ়িয়েশরা। এ বারের বিশ্বকাপের সেরা কোচ নির্বাচন নিয়ে ভোটাভুটি হলে আমার সমর্থন থাকবে দিদিয়ে দেশঁ-র দিকেই। মাথা ঠান্ডা রেখে যে ভাবে বিশ্বকাপ জয়ী প্রাক্তন ফরাসি তারকা দলকে চালনা করে চলেছেন, তা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়।

ঠিক যেমন অবাক করে দিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের তারকা কোচেদের থেকে বহু যোজন দূরের এক মুখ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই। কাতার বিশ্বকাপের আগে ক’জনই বা জানতেন ওর নাম! উল্টে মরক্কো যে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলে ফেলবে, সেটাই কেউ কল্পনা করার সাহস দেখাননি। বলা যায়, সকলের চোখের আড়ালে এমন একটা দল তৈরি করেছে ওয়ালিদ, মাঠে যারা সিংহের বিক্রম নিয়েই খেলে।

Advertisement

কিন্তু বুধবারের শেষ চারের দ্বৈরথ স্পষ্ট করে দিল, আবেগ বা শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে ম্যাচ জেতা যায় না। প্রয়োজন ক্ষুরধার মস্তিষ্কের। দরকার সুনির্দিষ্ট কৌশলের। সেই জায়গাতেই মরক্কো পিছিয়ে গেল ফ্রান্সের কাছে। ম্যাচের পাঁচ মিনিটে থিয়ো হের্নান্দেসের গোলই ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিল। নিজেদের অর্ধের মাঝমাঠ থেকে বলটা তৈরি করে দিল ভারান। সেই বল এল এ বারের বিশ্বকাপের নিঃশব্দ ঘাতক গ্রিজ়ম্যানের কাছে। আলতো টোকায় ও বলটা দিল এমবাপেকে। ফরাসি তারকার শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ছিটকে চলে গেল বাঁ দিক থেকে উঠে আসা থিয়োর কাছে। প্রায় ছ’ফিট উচ্চতার এসি মিলান ডিফেন্ডার বাঁ পা অনেকটা তুলে বলটা ঠান্ডা মাথায় গোলে রেখে দিল। গোটা মরক্কো রক্ষণ অবাক হয়ে তা দেখল।

মরক্কো এখনও পর্যন্ত নিজেদের রক্ষণ সুরক্ষিত রেখে যে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবলে আস্থা রেখেছিল, সেই দর্শনের কোনও ব্যতিক্রম ঘটেনি। ৫-৪-১ ছকে দল সাজিয়ে সেটাই ফের দেখিয়ে দিয়েছিল রেগ্রাগুই। কিন্তু ও এও ভুলে গিয়েছিল উল্টোদিকে এমন এক ব্যক্তিত্ব দাঁড়িয়ে, যাঁর কাছে এই রক্ষণ ভাঙার অস্ত্রও রয়েছে।

এর আগের ম্যাচগুলোতে বারবার বাঁ দিকের উইং ধরে আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছে এমবাপে। এ দিন দেশঁ সেই পরিকল্পনাটা আমূল বদলে দিল। বাঁ দিক থেকে ক্রমাগত ওভারল্যাপ করে দীর্ঘদেহী থিয়ো চাপে রাখল হাকিমি আর দারিকে। চোটের জন্য সাইস উঠে যাওয়ায় সুবিধা হয়ে গেল ফ্রান্সের। মাঝখান থেকে মরক্কোর গোলের মুখ খোলার দায়িত্ব গ্রিজ়ম্যানের সঙ্গে ভাগ করে নিল এমবাপে। উপর দিকে একা থাকল জিহু। তাতেই বাজিমাত।

৭৯ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে কোলো মুয়ানি মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে গোল করে ফ্রান্সের ফাইনালের ছাড়পত্র নিশ্চিত করে দিল। বক্সের মধ্যে তিন জনকে কাটিয়ে শট নিল এমবাপে। ওর শট প্রতিহত হয়ে গেল কোলো মুয়ানির সামনে। ২-০ করতে সমস্যা হয়নি ওর।

জ়িয়েশরা যে গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হবে, তা ধরতে দেরি হয়নি দেশঁ-এর। ভারান এবং কোনাতে-কে মাঝে রেখে ফ্লানেলের মতো রক্ষণকে আকার দিল কুঁদে আর হের্নান্দেস। মাঝমাঠ থেকে নেমে এসে রক্ষণের জোর বাড়াল ফোফানা। একটা সময় আক্রমণে সাত জনকে উপরে এনেও মরক্কো আটকে গেল সেই জালে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন