East Bengal

ইস্টবেঙ্গলের ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’! কুয়াদ্রাতের উপরেই নির্ভর করছে লাল-হলুদের ডার্বি-ভাগ্য

ইস্টবেঙ্গলে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় পছন্দ। সের্জিয়ো লোবেরাকে না পেয়ে তাঁকে আনা হয়। সেই কার্লেস কুয়াদ্রাতই এখন লাল-হলুদ জনতার মধ্যমণি। কী ভাবে তাঁর হাত ধরে কলকাতা ডার্বি জয়ের স্বপ্ন দেখছে ইস্টবেঙ্গল?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩১
Share:

কার্লেস কুয়াদ্রাত। ছবি: এক্স।

ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়ে প্রথম বার সাংবাদিকদের সামনে এসেই মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। কার্যত ভাঙাচোরা একটা দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার পরে বলেছিলেন, “আমি মনে করি, দলের সব ফুটবলারই একজন যোদ্ধা। মাঠে নেমে লড়াই করাই তাদের কাজ। এই দলকে ভারতীয় ফুটবলে সেরা করে তুলতে চাই।”

Advertisement

না, এত কম সময়ে ইস্টবেঙ্গলকে ভারতীয় ফুটবলের সেরা দল করে তুলতে পারেননি ঠিকই। কিন্তু একটা লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। তাঁকে যাঁরা চেনেন তাঁরা জানেন যে লক্ষ্যপূরণের আগে থামতে জানেন না স্প্যানিশ কোচ। যদি না তাঁকে জোর করে সেই কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বিশ্বাস করেন প্রক্রিয়ায়। নিজেই বার বার বলেন, ‘ট্রাস্ট দ্য প্রসেস’। সেই কুয়াদ্রাতের হাত ধরেই সোনালি দিনের অপেক্ষা করে রয়েছে লাল-হলুদ জনতা। শুক্রবারের ডার্বি জিততে পারলে সমর্থকদের আস্থা অর্জনে আরও অনেকটা এগিয়ে যাবেন তিনি।

অথচ এ হেন কুয়াদ্রাত ইস্টবেঙ্গলের বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্তাদের পছন্দের তালিকাতেই ছিলেন না। ইস্টবেঙ্গল ছুটেছিল সের্জিয়ো লোবেরার দিকে। বিস্তর টালবাহানার পরে লোবেরা ইস্টবেঙ্গলে নয়, পড়শি রাজ্যের ওড়িশাতে সই করেন। দিশেহারা কর্তাদের সামনে কার্যত ‘দূত’ হয়ে হাজির হয়েছিলেন কুয়াদ্রাত। এত ভাল কোচ হাতের কাছে ছিল না। হাতে পাওয়া চাঁদের মতো সুনীল ছেত্রীর প্রাক্তন কোচ তথা প্রাক্তন আইএসএল জয়ীকে দায়িত্বে আনা হয়। এসেই কুয়াদ্রাতের মুখে শোনা গিয়েছিল ‘প্রক্রিয়া’র কথা। সেই লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়েছেন তিনি।

Advertisement

ইস্টবেঙ্গল আইএসএল খেলতে শুরু করার পর কোনও দিন মোহনবাগানকে হারাতে পারেননি। যে কাজ রবি ফাউলার, মানোলো দিয়াস, মারিয়ো রিভেরারা পারেননি, তা দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই করে ফেলেন কুয়াদ্রাত। ডুরান্ড কাপের প্রথম ডার্বিতেই হারিয়ে দেন তারকাসমৃদ্ধ মোহনবাগানকে। দীর্ঘ আট ম্যাচ পরে সেই জয়ে ইস্টবেঙ্গল জনতা ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছিল। তাতে ভর করেই এগিয়ে চলেছেন কুয়াদ্রাত।

ইস্টবেঙ্গলের সেই ভাঙাচোরা দল বদলে দিয়েছেন। কোটি টাকা দিয়ে অন্য দল থেকে গোলকিপার নিয়ে এসেছেন। নিজের হাতে বেছে নিয়েছেন বিদেশিদের। জর্ডানে গিয়ে অনেক আলোচনা করে তুলে এনেছেন হিজাজি মাহেরের মতো ফুটবলারকে। কয়েক মাসের মধ্যেই দলটাকে সাজিয়ে নিয়েছেন। তার ফল দেখা যাচ্ছে মাঠেই। যে আইএসএলে গত দু’মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের মাঠে নামা মানেই অবধারিত হার ছিল, তা এ বার বদলে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলকে সমীহ করছে সব দলই। এখন ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ ভাঙা মোটেই সহজ নয়। সুপার কাপে আসার আগে টানা তিনটি ম্যাচ ড্র করেছে ইস্টবেঙ্গল।

বুদ্ধিতে কুয়াদ্রাতকে টেক্কা দেওয়া শক্ত। কোন পরিস্থিতিতে কোন দল নামাতে হবে, কাকে কোন পজিশনে খেলাতে হবে, কোন দলের বিরুদ্ধে কেমন কৌশল নিতে হবে— এ ব্যাপারে তাঁর মস্তিষ্কের জুড়ি মেলা ভার। প্রতিপক্ষকে মেপে নিতেও ওস্তাদ। কাজ না থাকলে মাঝেমাঝেই চলে যান বিপক্ষ দলের খেলা দেখতে। ডুরান্ড কাপে মোহনবাগানের ম্যাচ দেখেছেন। সুপার কাপেও একাধিক ম্যাচে স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন। ফুটবল অন্তপ্রাণ যাঁকে বলে, কুয়াদ্রাত ঠিক তাই।

কুয়াদ্রাতের ছোঁয়ায় বদলে গিয়েছেন শৌভিক চক্রবর্তী, মহম্মদ রাকিপ, নন্দকুমারের মতো ফুটবলার। প্রথম সাক্ষাতে কুয়াদ্রাত বলেছিলেন, “আমার দলের প্রত্যেক ফুটবলারের নির্দিষ্ট একটা কাজ থাকবে। সেটা আমিই ওদের দেব। দলের প্রত্যেক ফুটবলারদের থেকে সেরাটা বের করে আনাই আমার কাজ। ওদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সেরাটা বের করে আনতে হবে।” কার্যক্ষেত্রেও সেটাই করে দেখাচ্ছেন তিনি। মানিয়ে নিতে কয়েকটা দিন সময় লেগেছিল।

কুয়াদ্রাত আপাতত সেই ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’, যাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে কোটি কোটি লাল-হলুদ জনতা। শুক্রবার সেই ভালবাসা আরও অনেক গুণ বেড়ে যায় কি না, আপাতত অপেক্ষা তারই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন