ISL 2022-23

টানা সাত ডার্বিতে জয়, ২-০ গোলে জিতল মোহনবাগান, এ বারও ভাগ্য ফিরল না ইস্টবেঙ্গলের

প্রথমার্ধে ভাল খেলেও দ্বিতীয়ার্ধে হতাশ করল ইস্টবেঙ্গল। হুগো বুমোস এবং মনবীর সিংহের গোলে টানা সাত ডার্বিতে জিতল এটিকে মোহনবাগান। ফের হতাশ হলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা।

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২২ ২১:৫০
Share:

গোলের পর উল্লাসে মাতলেন হুগো বুমোস, মনবীর সিংহ, প্রীতম কোটাল, দীপক টাংরি, শুভাশিস বসুরা। ছবি: টুইটার

এই নিয়ে টানা সাত বার। কলকাতা ডার্বিতে এ বারও ভাগ্য ফিরল না ইস্টবেঙ্গলের। কোচ বদলায়, মরসুম বদলায়, বিনিয়োগকারী বদলায়, কিন্তু আইএসএলের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্য কিছুতেই বদলায় না। শনিবার যুবভারতীতে আইএসএলের প্রথম ডার্বি হল। সেখানেও লাল-হলুদ সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটল না। এটিকে মোহনবাগান অনায়াসে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গলকে। গোল করলেন হুগো বুমোস এবং মনবীর সিংহ।

Advertisement

প্রথম ম্যাচে দলের হার দেখে অনেক মোহনবাগান সমর্থকই শাপশাপান্ত করছিলেন কোচ জুয়ান ফেরান্দোকে। কেন তিনি রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামসকে ছেড়ে দিলেন? গোল করবেন কে? শনিবারের পর থেকে মনে হয় না সেই আওয়াজ আর উঠবে। ফেরান্দো বার বার বলেছেন, তাঁর দলে গোল করার লোক অনেক। আগের ম্যাচে কেরল ব্লাস্টার্সের পর ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও সেটা প্রমাণিত। কেরলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। গোল করেছিলেন লেনি রদ্রিগেস। এ দিন গোল হুগো বুমোস এবং মনবীর সিংহের। কাকে ছেড়ে কাকে আটকাবেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা? বুমোসকে আটকালে আক্রমণে উঠছেন কাউকো। কাউকোকে আটকালে এগিয়ে আসছেন লিস্টন কোলাসো। লিস্টনকে বাধা দিলেন গোল করে যাচ্ছেন মনবীর।

বছর দেড়েক আগে মুম্বই সিটি থেকে বুমোসকে তুলে নিয়েছিল মোহনবাগান। তার পর থেকে তিনি সবুজ-মেরুন জার্সিতে ফুল ফুটিয়েই চলেছেন। প্রত্যেক ম্যাচে গোল না করতে পারলেও, গোলের পাস বাড়াচ্ছেন, বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ধোঁকা দিচ্ছেন। সর্ব ক্ষণ চাপে রাখছেন। এ দিন তাঁকে আটকাতেই নাজেহাল হয়ে গেলেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। প্রথমার্ধে কোনও মতে আটকানো গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে বুমোস হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য।

Advertisement

প্রথম গোলটার জন্য ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার কমলজিৎ সিংহকে সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী করা চলে। তাঁরই ভুলে ৫৬ মিনিটে গোল করেন বুমোস। দূর থেকে গোল লক্ষ্য করে নীচু শট নিয়েছিলেন তিনি। কমলজিৎ ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা বাঁচালেও বল হাতে লেগে গোলে ঢুকে যায়। নির্বিষ একটা শটে গোল পেয়েই ফুঁসে ওঠে মোহনবাগান। কয়েক মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় গোল। এ বার মনবীর সিংহ। বক্সের মধ্যে থেকে বুমোস শট নিতে গিয়েছিলেন। ইস্টবেঙ্গলের এক ফুটবলারের পায়ে লেগে তা যায় ফাঁকায় দাঁড়ানো মনবীরের কাছে। তিনি গোল করতে ভুল করেননি।

অথচ প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলকে একেবারেই দেখে মনে হয়নি তারা এই ম্যাচে হারবে। বরং বহু দিন পর মোহনবাগানকে শাসন করতে দেখা যায় ইস্টবেঙ্গলকে। খেলার শুরুতে আক্রমণ করে মোহনবাগানই। ৪ মিনিটের মাথায় শুভাশিসের শট পোস্টের সামান্য দূর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এর পরেই ইস্টবেঙ্গল কিছু ভাল প্রতি আক্রমণ করে। কিন্তু গোল করতে পারেনি তারা। এর মাঝেই বুমোসের পাস থেকে লিস্টনের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ১৬ মিনিটের মাথায় অসাধারণ সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। নাওরেমের ক্রস থেকে হাওকিপের শট দুর্দান্ত ভঙ্গিতে বাঁচিয়ে দেন মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল কায়েথ।

এর পর বার বারই আক্রমণে উঠতে থাকে দুই দল। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান কেউই কোনও দলকে ছেড়ে কথা বলছিল না। ১৭ মিনিটের মাথায় আবার একটি সুযোগ মিস করেন লিস্টন। ২১ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টির দাবি জানায়। ক্লেটন সিলভা বক্সের মধ্যে পড়ে যান। তবে রেফারি শ্রীকৃষ্ণ কোনও আবেদনে কর্ণপাত করেননি। ৩২ মিনিটের মাথায় আবার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। এ বার ইস্টবেঙ্গলের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলে শট নিতে যাচ্ছিলেন বুমোস। কিন্তু সার্থক গোলুইয়ের দুর্দান্ত ডিফেন্ডিংয়ে ইস্টবেঙ্গল সে যাত্রায় বেঁচে যায়। ইস্টবেঙ্গল আরও দু’বার আক্রমণে উঠেছিল। জর্ডান আবার বক্সের মধ্যে পড়ে যান। এ ক্ষেত্রেও পেনাল্টি দেওয়া হয়নি। মাঝে অস্ট্রেলিয়ার দুই ফুটবলার পেত্রাতোস এবং জর্ডান ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। রেফারি পেত্রাতোসকে হলুদ কার্ড দেখান। তার আগে হলুদ কার্ড দেখেন ইস্টবেঙ্গলের কিরিয়াকু। তিনি জনি কাউকোকে ফাউল করেন।

এ দিন ইস্টবেঙ্গল বনাম এটিকে মোহনবাগান ম্যাচ শুরু হয় সন্ধে ৭.৫০ মিনিটে। ২০ মিনিট পিছিয়ে যায় ম্যাচ। হায়দরাবাদ বনাম গোয়া ম্যাচে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ার কারণে দুই ক্ষেপে খেলা বন্ধ ছিল বেশ কিছু ক্ষণ। সেই ম্যাচ ছিল কলকাতা থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে হায়দরাবাদে। এই ম্যাচে দেরি হওয়ায় কলকাতা ডার্বিও শুরু হতে কিছুটা বেশি সময় লাগে। সম্প্রচারের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন