উদ্বেগ: আইএসএল কি হবে? ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় সুনীলরা। ছবি: এক্স।
আইএসএলের ভবিষ্যৎ সেই তিমিরেই। বুধবার আইএসএল ক্লাবগুলির অধিনায়ক এবং চিফ এগজিকিউটিভ অফিসারদের (সিইও) বৈঠকের নির্যাস— শূন্য।
সুনীল ছেত্রী, শুভাশিস বসু, গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু থেকে আদ্রিয়ান লুনা, নোয়া সাদিউ— ফুটবলারেরা সমবেত ভাবে মঙ্গলবারই ক্ষোভ উগরে দিয়ে দ্রুত আইএসএল শুরু করার আবেদন জানিয়েছিলেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কাছে। সমাজমাধ্যমে তাঁরা লিখেছিলেন, ‘‘ভারতের ফুটবল বর্তমানে অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে। এই সঙ্কটের ভয়াবহ মাত্রা আমরা হয়তো এখনও ঠিক ভাবে অনুধাবন করতে পারছি না। ধৈর্য এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে। ভারতের ফুটবল ভক্তদের উদ্দেশে জানাচ্ছি, আমাদের অবিলম্বে এই সঙ্কট থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বার করতে হবে। যত দিন আমরা পেশাদার থাকব, আমাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাব, তত দিন আমরা এগিয়ে যাব। দেশের ফুটবল যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁরাও সৎ প্রচেষ্টা দেখাক। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি। আশা করছি এ বার আলো দেখতে পাব।”
পরিস্থিতি সামলাতে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বৈঠক ডাকে এআইএফএফ। বিকেল পাঁচটায় আলোচনায় বসেছিলেন কর্মসমিতির সদস্যরা। সন্ধে ছ’টা ও সাতটায় ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠক ছিল আইএসএলের ক্লাবগুলির অধিনায়ক এবং সিইও-দের সঙ্গে। কিন্তু দু’টি বৈঠকেই আইএসএল-জট কাটার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। জানা গিয়েছে, আইএসএলে ক্লাবগুলির অধিনায়কদের ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী বছরের জানুয়ারির শুরু দিকে আইএসএল শুরু হবে। চলবে মে পর্যন্ত। জানিয়েছে দ্রুত সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন। আশা করছেন, আগামী সপ্তাহে শুনানি হবে। ইস্টবেঙ্গলের তরফে সাউল ক্রেসপো ছিলেন। কিন্তু মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের অধিনায়ক শুভাশিস বসু যোগ দেননি এই বৈঠকে। ছিলেন না ইন্টার কাশীর সুমিত পাসিও।
সিইও-দের বৈঠকে ফেডারেশন সভাপতি জানিয়েছেন, নতুন করে দরপত্র প্রকাশ বা আগের দরপত্রে সংশোধন, করা হবে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে। বৈঠকের পরে কেউ কেউ বলেই ফেললেন, ‘‘সর্বস্তর থেকে যে ভাবে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, ফুটবলারেরা মুখ খুলছেন, তা সামাল দিতেই ফেডারেশন তড়িঘড়ি এই বৈঠক ডেকেছিল। দেখা যাক এ বার কী হয় ’’
সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রাক্তন বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাওয়ের পর্যবেক্ষণে আইএসএলের জন্য সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের তরফে দরপত্র প্রকাশ করেছিল একটি বেসরকারি আর্থিক সংস্থা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও সংস্থা দরপত্র জমা না দেওয়ায় সঙ্কট তৈরি হয়েছে আইএসএলের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
চলতি সপ্তাহেই প্রাক্তন বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাওয়ের রিপোর্ট দেওয়ার কথা সর্বোচ্চ আদালতে। ফেডারেশনও আইনি পরামর্শ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আইনি জটিলতায় আইএসএল আদৌ হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই পরিস্থিতিতে অনুশীলন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোহনবাগান, চেন্নাইয়িন এফসি, কেরল ব্লাস্টার্স ও ইন্টার কাশী। শুধু তাই নয়, চেন্নাইয়িন ফুটবলারদের বেতনও বন্ধ করে দিয়েছে। কেরল ব্লাস্টার্স কর্তৃপক্ষ ফুটবলারদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুনীলের মতো ধৈর্য হারাচ্ছেন প্রাক্তন ফুটবলারেরাও। সুব্রত ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘কল্যাণ চৌবে ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ায় খুব খুশি হয়েছিলাম। কারণ, ও ফুটবলার ছিল। ভেবেছিলাম, ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করবে। অথচ কল্যাণের জমানায় ফুটবলটাই উঠে যাওয়ার মুখে। আমি মনে করি, দায়িত্ব পালন করতে না পারলে কল্যাণের পদত্যাগ করা উচিত।’’ আর এক প্রাক্তন শিশির ঘোষের কথায়, ‘‘খেলাধুলোয় রাজনীতি প্রবেশ করলে এ রকমই হবে। আইএসএলকে কেন্দ্র করে যে ভাবে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা অবাক করার মতো। এর আগে যাঁরা ফেডারেশন চালাতেন তাঁরাও কিছু করেনি, কল্যাণ চৌবেও করছেন না। ওর উচিত সরে যাওয়া।’’
ফেডারশনের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে আই লিগের ক্লাবগুলি। কারণ, আইএসএলের পাশাপাশি এই লিগ কবে শুরু হবে তা নিয়েও ধোয়াশা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবের সঙ্গে বৈঠক বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আই লিগের ক্লাবগুলি। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান আই লিগের ক্লাবগুলির কর্তারা। ভারতীয় ফুটবলের জটিলতা কাটাতে তাঁরা ক্রীড়ামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইবেন।
এ দিকে ফিফার নির্বাসন তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল মহমেডান স্পোর্টিং। ইতিমধ্যে পাঁচ ফুটবলারের বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে। আর চার জনেরও দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া হবে।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে