মা কোচ, চার কন্যাই মেয়েদের ফুটবল লিগে

বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম দুমদুমির মুদি পরিবারের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা দেখে অবাক হতে হয়। নতুন এক আশার আলো যেন ঠিকরে বেরোয় আদিবাসী ওই পরিবারের ইচ্ছাশক্তি দেখে। 

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪১
Share:

এ যেন গোয়ার চার্চিল ব্রাদার্সের বঙ্গ সংস্করণ।

Advertisement

বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম দুমদুমির মুদি পরিবারের ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা দেখে অবাক হতে হয়। নতুন এক আশার আলো যেন ঠিকরে বেরোয় আদিবাসী ওই পরিবারের ইচ্ছাশক্তি দেখে।

শুক্রবার ছিল মেয়েদের কলকাতা লিগের উদ্বোধনী ম্যাচ। সেই ম্যাচে সেবায়নী ক্লাবকে ১৪ গোলে হারাল যে দল, সেই দুমদুমি আদিবাসী তরুণী ব্রজেন সংঘ আসলে মুদি পরিবারের নিজস্ব দল। বাড়ির কর্তা শক্তিপদ মুদি ক্লাবের মালিক। তাঁর স্ত্রী ভারতী মুদি কোচ। ফুটবলারদের মধ্যে পাঁচ জন তাঁদের মেয়ে বা আত্মীয়। শক্তিপদ-ভারতীর চার মেয়ে তানিয়া, কেয়া, পূজা ও মিত্রা যেমন ছিলেন এ দিনের দলে, তেমনই ছিলেন ওদের মামার মেয়ে সুমা মুদি। বাঁকুড়া স্টেশন থেকে প্রায় উনিশ কিলোমিটার দূরে ঝাঁটি পাহাড়ি অঞ্চলে শক্তিপদর বাড়ি। সেখানেই তাদের বাড়ির চারটি ঘরের দুটিতে ক্লাব। ওই দু’টি ঘরেই পড়াশুনা এবং অনুশীলন একসঙ্গে চালান ক্লাবের বাকি ফুটবলাররা। এক সঙ্গে প্রতিদিন পাত পড়ে ৩৪ জনের। মেয়েরা নিজেদের প্রাতরাশ থেকে রাতের খাবার সব তৈরি করেন ভাগাভাগি করে। স্কুল এবং অনুশীলন করার ফাঁকে। স্বাস্থ্য দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী শক্তিপদবাবু ইস্টবেঙ্গল মাঠে বসে এ দিন খেলার বিরতিতে বলছিলেন, ‘‘আমার মেয়েদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ দেখে তিন বছর আগে দল গড়েছি। আমি নিজে জেলার ফুটবলার ও রেফারি ছিলাম। আশেপাশের গ্রাম থেকে মেয়েদের নিয়ে এসে অনুশীলন করায় আমার স্ত্রী। ও আগে অ্যাথলিট ছিল। আমার এক মেয়ে তানিয়া এবার বাংলা দলেও সুযোগ পেয়েছে।’’ বলতে বলতে উজ্জল হয়ে ওঠে তাঁর মুখ।

Advertisement

এক সময়ের মাওবাদীদের অঞ্চল বলে পরিচিত সারেঙ্গার মেয়ে রিয়া দুলেকে নিয়ে এ দিন ম্যাচের পর ছিল হইচই। তিন-তিনটি হ্যাটট্রিক করেছেন রিয়া। মানে সব মিলিয়ে নয় গোল করেছেন দ্বাদশ শ্রেণির এই ছাত্রী। সাপের মতো তাঁর ড্রিবল এবং একের পর এক গোল দেখে দর্শকরা বিস্মিত। রিয়া থাকেন মুদি বাড়ির আবাসিক শিবিরে। ছিপছিপে মেয়েটি বলছিলেন, ‘‘বাবা-মা দিনমজুর। পড়াশুনা করানোর সামর্থ্য নেই। তাই বেশিরভাগ সময় থাকি কোচ ম্যাডামের বাড়িতেই। এখানেই ফুটবল খেলি। পড়াশুনার খরচ জোগান ওঁরা। ভারতের হয়ে খেলতে চাই। যদি একটা চাকরি হয়।’’ মেয়েদের ২২ দলের লিগে এ বার যে পাঁচশো মেয়ে খেলছেন, তাদের একটা বড় অংশ আদিবাসী অঞ্চলের মেয়ে। জঙ্গলমহলে এখন মেয়েরা চুটিয়ে ফুটবল খেলছে। দুমদুমির এই দলটি তারই অঙ্গ। আঠারো জনই আদিবাসী মেয়ে। কিন্তু দল চালানোর এই খরচ আসে কোথা থেকে? বাঁকুড়ায় ফিরে যাওয়ার রাতের ট্রেন ধরতে যাওয়ার আগে শক্তিপদ বললেন, ‘‘ক্লাবের জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছি। সারা বছর নানা জায়গায় প্রদর্শনী ম্যাচ বা টুনার্মেন্ট খেলে বেড়াই। সেখান থেকে টাকা আসে। আর আমার পেনশনের টাকা তো আছেই। চলে যাচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement