Toni Nadal

Rafael Nadal: গুরুতর চোটে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেলেন প্রতিপক্ষ জেরেভ, ফরাসি ওপেনের ফাইনালে রাফা

দ্বিতীয় সেটের মাঝে চোট পান জেরেভ। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসার পর হুইলচেয়ারে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। ফেরেন ক্রাচ হাতে। নাদালকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২২ ২১:৫০
Share:

চোটে কাতরাচ্ছেন জেরেভ। পাশে নাদাল। ছবি রয়টার্স

ফরাসি ওপেনের প্রথম সেমিফাইনালের তখন দ্বিতীয় সেট চলছে। প্রায় তিন ঘণ্টা গড়িয়ে গিয়েছে ম্যাচ। হঠাৎই খেলার মাঝে চোট পেয়ে কোর্টে শুয়ে পড়লেন আলেকজান্ডার জেরেভ। আঘাত এতটাই গুরুতর যে দাঁড়াতেই পারছিলেন না। হুইলচেয়ারে বসিয়ে কোর্ট থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে। পরে কোর্টে ফিরলেন বটে, কিন্তু ক্রাচ হাতে। যন্ত্রণায় বিদ্ধ মুখ, চোখের কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। চেষ্টা করলেও যন্ত্রণার তীব্রতায় কান্না চাপতে পারেননি। শুধু যন্ত্রণা কেন, লড়াই করেও এ ভাবে চোট পেয়ে বিদায় নেওয়ার ব্যথাও ছিল। শারীরিক অবস্থা দেখে বোঝাই গিয়েছিল, এই ম্যাচে তাঁর পক্ষে আর খেলা সম্ভব নয়। ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে এর আগে কবে এ রকম দৃশ্য দেখা গিয়েছে, তা কেউই মনে করতে পারছেন না।

Advertisement

নাদাল নিজেও কি ভাবতে পেরেছিলেন এ ভাবে শেষ হবে ম্যাচটা? প্রথম সেট গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। ৭-৬ গেমে জেতেন নাদাল। দ্বিতীয় সেটও গড়ায় টাইব্রেকারে। সেটের ফল যখন ৬-৬, তখনই চোট পান জেরেভ। কোর্টে শুয়ে পড়েন তিনি। সরকারি ভাবে এখনও কিছু জানা না গেলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে, চোট গুরুতর। হয়তো লিগামেন্ট ছিঁড়েছে তাঁর। এতটাই গুরুতর চোট যে ম্যাচের পর সেই ঘটনা দেখানো হল না।

জেরেভকে ও ভাবে পড়ে যেতে দেখেই কোর্টের ও পার থেকে ছুটে এসেছিলেন নাদাল। মাঠের ধারে যখন জেরেভকে সুস্থ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ডাক্তার-ফিজিয়োরা, তখন তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে পাশে। ডাক্তার এবং ফিজিয়োদের সাহায্যে কোনও মতে হুইলচেয়ারে বসানো হল জেরেভকে। দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না তাঁর। যন্ত্রণাক্লিষ্ট জার্মান প্রতিপক্ষের পিঠে হালকা চাপড় দিলেন নাদাল। তখনই বুঝে গিয়েছিলেন, এই ম্যাচ খেলতে আর তাঁকে কোর্টে নামতে হবে না। জেরেভ লকার রুমে ঢুকে যাওয়ার পর নিজের আসনে গিয়ে বসে পড়েন নাদাল। সরকারি ভাবে ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার জন্যে তখন অপেক্ষা করছেন আম্পায়ারও।

Advertisement

চোট পাওয়ার পর কোর্টে শুয়ে জেরেভ। ছবি রয়টার্স

ক্রাচ নিয়ে হাঁটছেন জেরেভ। পাশে নাদাল।

মিনিট সাতেক পর সেই মুহূর্ত এল। দেখা গেল, লকার রুম থেকে বেরিয়ে কোর্টে আসছেন জেরেভ। হুইলচেয়ারে চেপে না হলেও, দুই বগলের নীচে ধরা ক্রাচ। পাশে কোচ, ফিজিয়ো, ডাক্তার। ছলছলে চোখ, তবু আবেগ চেপে রাখার প্রচেষ্টা। তৎক্ষণাৎ নাদাল ছুটে গেলেন। প্রতিপক্ষের সামনে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। গালে হালকা চাপড় মারলেন। দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার আরোগ্যবার্তা দিলেন। এর পর নিজের আসনে গিয়ে পরে নিলেন জ্যাকেট। ততক্ষণে তাঁর ১৪তম ফরাসি ওপেন ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে নাদাল বললেন, “এ রকম ঘটনা মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। ওর জন্যে প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। প্রতিযোগিতায় অসাধারণ খেলছিল। তাই ওর মতো ছেলেকে কাঁদতে দেখা নিঃসন্দেহে কঠিন মুহূর্ত। আশা করি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। অনেক শুভেচ্ছা থাকল ওর প্রতি।”

প্রায় দু’টি সেটই খেলা হল, তাতেই সময় লাগল প্রায় তিন ঘণ্টা। এর আগের দু’টি ম্যাচে চার ঘণ্টার উপর কোর্টে ছিলেন নাদাল। এই ম্যাচও সে দিকেই এগোচ্ছিল। অনেকেরই মত, ম্য়াচ বেশিক্ষণ গড়ালে নাদালের পক্ষে টেনে যাওয়া সহজ কাজ হত না। একে তো তিনি খেলছেন পায়ের চোট নিয়ে। তার উপর পরের পর যদি লম্বা ম্য়াচ খেলতে হয়, তা হলে শারীরিক অবস্থা কী রকম থাকে তা সহজেই অনুমেয়। ম্যাটস ভিল্যান্ডারের মতো প্রাক্তনরা ধারাভাষ্য দিতে বসে বলছিলেন, দ্বিতীয় সেট যদি জেরেভ জিততেন, তা হলে ম্যাচ নিঃসন্দেহে গড়াত পাঁচ সেটে। তবে আদৌ নাদাল ততটা টেনে নিয়ে যেতে পারতেন কি না, সেটা বড় প্রশ্ন।

খেলার শুরুটাই ভাল হয়নি নাদালের কাছে। প্রথম গেমেই তাঁর সার্ভিক ব্রেক করেন জেরেভ। নিজের পরের দু’টি সার্ভ ধরে রাখেন। কিন্তু নাদালকে বার বার নেটের সামনে এনে খেলানোর চেষ্টা করছিলেন জেরেভ এবং ব্যর্থ হচ্ছিলেন। নোভাক জোকোভিচও একই রাস্তা নিয়েছিলেন, পারেননি। নাদালকে কেন সুরকির কোর্টের রাজা বলা হয়, সেটা বোঝা গেল একটু পরেই। অষ্টম গেমে তিনি ব্রেক করলেন জেরেভকে। ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানে এক সময় ৬-২ এগিয়ে গিয়েছিলেন জেরেভ। অর্থাৎ এক পয়েন্ট পেলেই সেট পকেটে। সেখান থেকে পর পর পাঁচটি পয়েন্ট জিতে খেলার গতিপথটাই বদলে দিলেন নাদাল। জিতে নিলেন সেটও।

দ্বিতীয় সেটেও শুরুতে নাদালকে ব্রেক করেন জেরেভ। পাল্টা জার্মান প্রতিপক্ষকে ব্রেক করেন নাদাল। দুই খেলোয়াড়ই একে অপরকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি ছিলেন না। ফলে ম্যাচও এগোচ্ছিল সে ভাবেই। এক-একটি গেম শেষ হতেই সময় লাগছিল অনেকক্ষণ। কিন্তু মাঝখানে জেরেভের চোট তালগোল পাকিয়ে দিল সবকিছু। এ ভাবে জিতবেন, এ ভাবে ফাইনালে উঠবেন ভাবতে পারেননি নাদাল।

জেরেভও কি ভেবেছিলেন এ ভাবে বিদায় নিতে হবে তাঁকে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন