বিলিয়ার্ডসে ইতিহাস পঙ্কজের

জেতার খিদেটা দেখেছিলাম আট বছরেই: গীত শেঠি

একুশ বছর আগের কথা। ক্লাবে চলছে বিলিয়ার্ডসের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। তাতেই মজে উপস্থিত সকলে। বাদ শুধু এক শিশু। কোণের টেবলে নিজের সমস্ত একাগ্রতা একজোট করে যে খেলে যাচ্ছিল নিজের খেলা। আশপাশের কোলাহল ভুলে প্রতিটা শটে সমান মনঃসংযোগ দিয়ে। সেই প্রথম আট বছরের পঙ্কজ আডবাণীকে দেখেছিলেন ভারতীয় কিউ স্পোর্টসের আর এক কিংবদন্তি গীত শেঠি। বিলিয়ার্ডস বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পঙ্কজের ‘গ্র্যান্ড ডাবল’-এর অভূতর্পূব হ্যাটট্রিক নিয়ে বলতে গিয়ে গীত প্রথমেই শোনালেন যে কাহিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৪
Share:

একুশ বছর আগের কথা। ক্লাবে চলছে বিলিয়ার্ডসের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। তাতেই মজে উপস্থিত সকলে। বাদ শুধু এক শিশু। কোণের টেবলে নিজের সমস্ত একাগ্রতা একজোট করে যে খেলে যাচ্ছিল নিজের খেলা। আশপাশের কোলাহল ভুলে প্রতিটা শটে সমান মনঃসংযোগ দিয়ে।

Advertisement

সেই প্রথম আট বছরের পঙ্কজ আডবাণীকে দেখেছিলেন ভারতীয় কিউ স্পোর্টসের আর এক কিংবদন্তি গীত শেঠি। বিলিয়ার্ডস বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পঙ্কজের ‘গ্র্যান্ড ডাবল’-এর অভূতর্পূব হ্যাটট্রিক নিয়ে বলতে গিয়ে গীত প্রথমেই শোনালেন যে কাহিনি। বৃহস্পতিবার মুম্বই থেকে টেলিফোনে বলছিলেন, “পঙ্কজ এমনিতে দারুণ হুল্লোড়বাজ ছেলে। কিন্তু আট বছর বয়স থেকেই দেখেছি, খেলা নিয়ে প্রচণ্ড ফোকাস্ড আর ক্ষুধার্ত। বয়সের সঙ্গে অনেক কিছু পাল্টালেও ওর এই ব্যাপারটা পাল্টায়নি। বরং আরও পরিণত হয়েছে। কিন্তু কিউ হাতে টেবলের সামনে দাঁড়ানোর পর ফোকাস আর খিদেটা আজও এক রয়ে গিয়েছে।”

বয়সের সঙ্গে পঙ্কজের মধ্যে আর একটা বিশেষ গুণও লক্ষ্য করেছেন গীত। বলছিলেন, “চ্যাম্পিয়নকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তার মস্তিষ্ক। পঙ্কজের ক্ষেত্রে মনের জোর আর মগজাস্ত্রটাই ওর সেরা হাতিয়ার। অবিশ্বাস্য সব কোণ বেছে স্নায়ু হিমশীতল রেখে শট মারতে পারে!”

Advertisement

বিলিয়ার্ডসে পয়েন্ট ভিত্তিক এবং সময় ভিত্তিক, দুই ফর্ম্যাটে একই বছরে বিশ্বসেরার শিরোপা অর্জন করাকে বলা হয় ‘গ্র্যান্ড ডাবল’। পেশাদার, অপেশাদার মিলিয়ে সতেরো বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, কিংবদন্তি মাইক রাসেলের সেই কৃতিত্ব আছে দু’বার। বুধবার রাতে লিডসের আইবিএসএফ বিশ্ব বিলিয়ার্ডস চ্যাম্পিয়নশিপে সেই রাসেলকেও ছাপিয়ে গিয়ে গ্র্যান্ড ডাবলের হ্যাটট্রিক করলেন পঙ্কজ। ইংল্যান্ডের উদীয়মান তারকা রবার্ট হলকে প্রায় দাঁড় করিয়ে ১৯২৮-৮৯৩ হারালেন সময় ভিত্তিক ফরম্যাটে। ফাইনালে ভারতীয় তারকার দাপট এতটাই একতরফা ছিল যে ম্যাচের এক ঘণ্টারও বেশি বাকি থাকতে পঙ্কজের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। গত সপ্তাহেই পিটার গিলক্রিস্টকে হারিয়ে পয়েন্ট ভিত্তিক বিলিয়ার্ডসে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সাত দিনের মধ্যে এল দ্বিতীয় খেতাব।

গীত শেঠির কথায়, “অতুলনীয় কীর্তি!” গীতের নিজের ঝুলিতেই আটটি বিলিয়ার্ডস বিশ্ব খেতাব। কিন্তু তিপান্নর তারকা অনুজ পঙ্কজকেই ভারতীয় কিউ স্পোর্টসের সবকালের সেরা বাছছেন। বলে দিলেন, “বিশ্বখেতাব জেতাটাই বিশাল কৃতিত্বের। এক ডজনের মালিক হওয়া আরও বড়। মাত্র সাত দিনের মধ্যে দু’টো বিশ্বচ্যাম্পিনশিপ জেতা অবিশ্বাস্য কাণ্ড! নিঃসন্দেহে ও ভারতের সর্বকালের সেরা।” গীত অকপট, পঙ্কজের মতো বিলিয়ার্ডস এবং স্নুকারে সমান মস্তানি তিনিও পারেননি। “স্নুকারে আমি ওর মতো সফল কই? দু’টো কিউ স্পোর্টেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে সাফল্য পাওয়া অসম্ভব কঠিন। লাগাতার নিজের সেরাটা দিয়ে যেতে হয়। অসাধারণ প্রতিভা ছাড়া যা অসম্ভব।” সব ঠিক থাকলে ভারত সেরা জানুয়ারিতেই ন্যাশনাল খেলতে আসবেন কলকাতায়।

গীত একটা কথা বলছিলেন-“প্রাইড ইন পারফরম্যান্স।” বলছিলেন, “অন্য সবার থেকে ভাল খেলব, এই বলে নিজের খেলার মান ও বারবার আরও উপরে তুলে নিয়ে যায়। এটাই পঙ্কজের ধারাবাহিক সাফল্যের আসল কথা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন